গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে দেশে আরও ১৬৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এটি গত ১৭ দিনের মধ্যে সর্বনিম্ন মৃত্যু।
গত ৬ জুলাইয়ের পর থেকে প্রতিদিনই এর চেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যুর তথ্য জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
ঈদের তিন দিনের সাধারণ ছুটি শেষে নতুন করে শাটডাউন শুরুর দিন শুক্রবার অধিদপ্তর থেকে পাঠানো বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত নতুন প্রাণহানি নিয়ে ভাইরাসটিতে মৃত্যুর সংখ্যা এখন পর্যন্ত দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৮৫১ জনে।
গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা বাড়ায় শনাক্তের পরিমাণও বেড়েছে।
বৃহস্পতিবার থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ২০ হাজার ৪৯৩ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৬ হাজার ৩৬৪ জনের শরীরে এই ভাইরাসটির অস্তিত্ব ধরা পড়েছে।
আগের দিন শনাক্তের পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৬৯৭ জন। সে দিন পরীক্ষা হয়েছিল ১১ হাজার ৪৮৬ জনের।
শুক্রবার সকাল থেকে ঈদের ছুটি-পরবর্তী কঠোর লকডাউনের প্রথম দিন। ছবি: সাইফুল ইসলাম/নিউজবাংলা
এখন পর্যন্ত মোট শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১ লাখ ৪৬ হাজার ৫৬৪ জনে।
গত ২৪ ঘণ্টায় পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ৩১ দশমিক ০৫ শতাংশ। সার্বিক শনাক্তের হার ১৫ দশমিক ৫০ শতাংশ।
গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন আরও ৯ হাজার ৬জন। এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৯ লাখ ৭৮ হাজার ৬১৬ জন। সুস্থতার হার ৮৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ।
গত ২৪ ঘণ্টায় মৃতদের মধ্যে পুরুষ ৯৫ আর নারী ৭১ জন। এর মধ্যে দুটি শিশুও রয়েছে।
এদের মধ্যে বিশোর্ধ্ব ৭, ত্রিশোর্ধ্ব ১৫, চল্লিশোর্ধ্ব ২৪, পঞ্চাশোর্ধ্ব ৩২ ও ষাটোর্ধ্ব ৪৬ জন, সত্তরোর্ধ্ব ২৭, আশির্ধ্ব ১০ এবং ৯০ বছরের বেশি ৩ জন রয়েছে।
বিভাগ অনুযায়ী সর্বোচ্চ ৬০ জনের মৃত্যু হয়েছে ঢাকায়। এরপরই রয়েছে খুলনা বিভাগ, ৩৩ জন। এ ছাড়া চট্টগ্রামে ৩৩ জন, রাজশাহীতে ৭, বরিশালে ১০, সিলেটে ৮, রংপুরে ১২ ও ময়মনসিংহে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।
করোনা প্রথম শনাক্ত হয় গত বছরের ৮ মার্চ। উদ্বেগ থাকলেও প্রথম কয়েক মাসে ভাইরাসটি সেভাবে ছড়ায়নি।
তবে মে মাস থেকে ব্যাপকভাবে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়তে থাকে। তখন আক্রান্তের হটস্পট ছিল ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রামের মতো জনবহুল শহরগুলো।
গত শীতে দ্বিতীয় ঢেউ আসার উদ্বেগ থাকলেও সংক্রমণ ও মৃত্যু- দুটোই কমে আসে। একপর্যায়ে পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৩ শতাংশের নিচে নেমে যায়। যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিবেচনায় মহামারি নয়, নিয়ন্ত্রিত পরিস্থিতি। তবে গত মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে শনাক্তের হার আবার বাড়তে থাকে। দ্বিতীয় ঢেউ নিশ্চিত হওয়ার পর এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে ভারতে করোনার নতুন ধরনের কথা জানা যায়।
সেই ভ্যারিয়েন্ট আক্রান্তদের দ্রুত অসুস্থ করে দেয়, তাদের অক্সিজেন লাগে বেশি। ছড়ায়ও দ্রুত, তাই মৃত্যুর সংখ্যাও বেশি।
বাংলাদেশে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে সীমান্ত বন্ধ করে দেয়া হয় ২৪ এপ্রিল। কিন্তু বিধিনিষেধ না মানায় ভাইরাসের প্রকোপ ঠেকানো যায়নি। প্রথমে ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট রাজশাহী অঞ্চলে ব্যাপক মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। পরে তা ছড়ায় খুলনা বিভাগে। সেই সঙ্গে ঢাকা বিভাগের বৃহত্তর ফরিদপুর অঞ্চল আর টাঙ্গাইল এলাকাতেও সংক্রমণ ঘটে ভাইরাসটির।
পরিস্থিতি ভয়াবহ হওয়ায় গত ২২ জুন থেকে ঢাকাকে ঘিরে রাখা সাত জেলায় যান চলাচল বন্ধ করে রাজধানীকে বিচ্ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
এতেও কাজ না হওয়ায় ১ জুলাই থেকে শুরু হয় শাটডাউন। সরকার জনগণের চলাচল রোধে এবার যে কঠোর, তার প্রমাণ মেলে সেনাবাহিনী মোতায়েনেই।
এমন উদ্বেগজনক পরিস্থিতি মধ্যে কোরবানির ঈদ উপলক্ষে শাটডাউন ৮ দিনের জন্য শিথিল করে সরকার। সেই মেয়াদ শেষ হয়ে শুক্রবার সকাল থেকে আরও ১৪ দিনের জন্য দেশ গেল কঠোর বিধিনিষেধে।