ঈদের ছুটিতে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা ২৫ হাজার থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ১১ হাজারে। নমুনা পরীক্ষা কম হওয়ায় কমেছে করোনা রোগী শনাক্তও। গত এক দিনে দেশে করোনার সংক্রমণ ধরা পড়েছে ৩ হাজার ৬৯৭ জনের শরীরে।
বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ১৮৭ জনের।
এর আগে এর চেয়ে কম রোগী শনাক্ত হয়েছিল ২১ জানুয়ারি। সেদিন ৩ হাজার ৬৪১ জনের দেহে করোনা শনাক্তের সংবাদ দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
ঈদের ছুটি শুরু হয়েছে মঙ্গলবার থেকে। ছুটির আগের দিন সোমবার ২৪ ঘণ্টায় করোনার ৪৫ হাজার ১২টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। রোগী শনাক্ত হয় ১৩ হাজার ৩২১ জনের দেহে। মঙ্গলবার নমুনা পরীক্ষা করা হয় ৩৯ হাজার ৫১০টি। এদিন রোগী শনাক্ত হয় ১১ হাজার ৫৭৯ জন।
ঈদের দিন বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, ২৪ ঘণ্টায় করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হয় ২৪ হাজার ৯৭৯টি। এতে রোগী শনাক্ত হয় ৭ হাজার ৬১৪ জন। গত ২৪ ঘন্টায় নমুনা পরীক্ষা আরও কমে দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৪৮৬টি। এতে রোগী শানাক্ত হয়েছে ৩ হাজার ৬৯৭ জনের দেহে। শনাক্তের হার ৩২ দশমিক ১৯ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, দেশে এ পর্যন্ত করোনা ধরা পড়েছে ১১ লাখ ৪০ হাজার ২০০ জনের দেহে। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১৮ হাজার ৬৮৫ জনের।
গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন আরও ৮ হাজার ৫৬৬ জন। এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৯ লাখ ৬৯ হাজার ৬১০ জন। সুস্থতার হার ৮৫ দশমিক ০৪ শতাংশ।
গত এক দিনে মৃতদের মধ্যে পুরুষ ১১৭ জন, নারী ৭০ জন। এর মধ্যে শিশু রয়েছে একজন। বাকিদের মধ্যে বিশোর্ধ্ব ৪, ত্রিশোর্ধ্ব ২০, চল্লিশোর্ধ্ব ১২, পঞ্চাশোর্ধ্ব ৪৯ ও ষাটোর্ধ্ব ৬৪ জন, সত্তরোর্ধ্ব ২৭, আশির্ধ্ব ৮ ও নব্বই-ঊর্ধ্ব ২ জন।
বিভাগ অনুযায়ী সর্বোচ্চ ৭৫ জনের মৃত্যু হয়েছে ঢাকায়। এরপরই রয়েছে খুলনা বিভাগ, ৪৪ জন। এ ছাড়া চট্টগ্রামে ২৩ জন, রাজশাহীতে ১০, বরিশালে ১১, সিলেটে ৪, রংপুরে ১৫ ও ময়মনসিংহে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।
করোনা প্রথম শনাক্ত হয় গত বছরের ৮ মার্চ। উদ্বেগ থাকলেও প্রথম কয়েক মাসে ভাইরাসটি সেভাবে ছড়ায়নি।
তবে মে মাস থেকে ব্যাপকভাবে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়তে থাকে। তখন আক্রান্তের হটস্পট ছিল ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রামের মতো জনবহুল শহরগুলো।
গত শীতে দ্বিতীয় ঢেউ আসার উদ্বেগ থাকলেও সংক্রমণ ও মৃত্যু- দুটোই কমে আসে। একপর্যায়ে পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৩ শতাংশের নিচে নেমে যায়। যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিবেচনায় মহামারি নয়, নিয়ন্ত্রিত পরিস্থিতি। তবে গত মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে শনাক্তের হার আবার বাড়তে থাকে। দ্বিতীয় ঢেউ নিশ্চিত হওয়ার পর এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে ভারতে করোনার নতুন ধরনের কথা জানা যায়।
সেই ভ্যারিয়েন্ট আক্রান্তদের দ্রুত অসুস্থ করে দেয়, তাদের অক্সিজেন লাগে বেশি। ছড়ায়ও দ্রুত, তাই মৃত্যুর সংখ্যাও বেশি।
বাংলাদেশে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে সীমান্ত বন্ধ করে দেয়া হয় ২৪ এপ্রিল। কিন্তু বিধিনিষেধ না মানায় ভাইরাসের প্রকোপ ঠেকানো যায়নি। প্রথমে ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট রাজশাহী অঞ্চলে ব্যাপক মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। পরে তা ছড়ায় খুলনা বিভাগে। সেই সঙ্গে ঢাকা বিভাগের বৃহত্তর ফরিদপুর অঞ্চল আর টাঙ্গাইল এলাকাতেও সংক্রমণ ঘটে ভাইরাসটির।
পরিস্থিতি ভয়াবহ হওয়ায় গত ২২ জুন থেকে ঢাকাকে ঘিরে রাখা সাত জেলায় যান চলাচল বন্ধ করে রাজধানীকে বিচ্ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
এতেও কাজ না হওয়ায় ১ জুলাই থেকে শুরু হয় শাটডাউন। সরকার জনগণের চলাচল রোধে এবার যে কঠোর, তার প্রমাণ মেলে সেনাবাহিনী মোতায়েনেই।
এমন উদ্বেগজনক পরিস্থিতি মধ্যে আসন্ন কোরবানির ঈদ উপলক্ষে চলমান শাটডাউন শিথিল করে সরকার। শর্ত সাপেক্ষে চালু করা হয় বাসসহ গণপরিবহন। খোলা হয় দোকানপাট।
এতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে দেশে করোনা নিয়ন্ত্রণে গঠিত জাতীয় পরামর্শক কমিটি। তারা বলছে, শাটডাউন আরও ১৪ দিন বাড়ানো উচিত। সরকার থেকে অবশ্য জানানো হয়েছে, ২৩ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত আবার দুই সপ্তাহের শাটডাউন দেয়া হবে।