দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৭৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই সময়ে সংক্রমণ ধরা পড়েছে ৭ হাজার ৬১৪ জনের শরীরে।
ঈদের দিন বুধবার বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয় দেশে এ পর্যন্ত করোনা ধরা পড়েছে ১১ লাখ ৩৬ হাজার ৫০৩ জনের শরীরে। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১৮ হাজার ৪৯৮ জনের।
একদিনের ব্যবধানে প্রায় চার হাজার রোগী শনাক্তের সংখ্যা কমে আসলেও শনাক্তের হার বেড়েছে, ৩০ দশমিক ৪৮ শতাংশ।
মঙ্গলবার রোগী শনাক্তের সংখ্যা ছিল ১১ হাজার ৫৭৯ জন। অবশ্য, কোরবানি ঈদের ছুটি থাকায় নমুনা পরীক্ষাও অনেক কম হয়েছে।
আগের দিন ২৪ ঘণ্টায় দেশের ৬৩৯টি ল্যাবে করোনার ৩৯ হাজার ৫১০টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়, বুধবার যা কমে দাঁড়িয়েছে ২৮ হাজার ৯৭৯টি।
করোনায় এর আগে এরচেয়ে কম শনাক্ত হয়েছিল ৩ জুন। সেদিন ৬ হাজার ২১৪ জনের দেহে করোনা শনাক্তের সংবাদ দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
গত ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে মৃত্যুও কমে দুইশোর নিচে চলে এসেছে। এরআগে এর চেয়ে কম মৃত্যু হয়েছিল ৬ জুলাই, ১৬৩ জন।
করোনা থেকে গত একদিনে সুস্থ হয়েছেন আরও ৯ হাজার ৭০৪ জন। এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৯ লাখ ৬১ হাজার ৪৪ জন। সুস্থতার হার ৮৪ দশমিক ৫৬ শতাংশ।
সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় মৃতদের মধ্যে পুরুষ ৯৮ জন, নারী ৭৫ জন। এর মধ্যে দুইজন শিশু রয়েছে।
বাকিদের মধ্যে বিশোর্ধ্ব ৬, ত্রিশোর্ধ্ব ১২, চল্লিশোর্ধ্ব ২২, পঞ্চাশোর্ধ্ব ৪২ ও ষাটোর্ধ্ব ৪৫ জন, সত্তরোর্ধ্ব ৩৫, আশির্ধ্ব ১০ ও নব্বোর্ধ্ব ১ জন রয়েছেন।
বিভাগ অনুযায়ী সর্বোচ্চ ৫৮ জনের মৃত্যু হয়েছে ঢাকা বিভাগে। এরপরই রয়েছে খুলনা বিভাগ, ৩৮ জন। এ ছাড়া চট্টগ্রামে ৩২ জন, রাজশাহীতে ১১, বরিশালে ৮, সিলেটে ৬, রংপুরে ১৬ ও ময়মনসিংহে ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।
করোনা প্রথম শনাক্ত হয় গত বছরের ৮ মার্চ। উদ্বেগ থাকলেও প্রথম কয়েক মাসে ভাইরাসটি সেভাবে ছড়ায়নি।
তবে মে মাস থেকে ব্যাপকভাবে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়তে থাকে। তখন আক্রান্তের হটস্পট ছিল ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রামের মতো জনবহুল শহরগুলো।
গত শীতে দ্বিতীয় ঢেউ আসার উদ্বেগ থাকলেও সংক্রমণ ও মৃত্যু- দুটোই কমে আসে। একপর্যায়ে পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৩ শতাংশের নিচে নেমে যায়। যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিবেচনায় মহামারি নয়, নিয়ন্ত্রিত পরিস্থিতি। তবে গত মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে শনাক্তের হার আবার বাড়তে থাকে। দ্বিতীয় ঢেউ নিশ্চিত হওয়ার পর এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে ভারতে করোনার নতুন ধরনের কথা জানা যায়।
সেই ভ্যারিয়েন্ট আক্রান্তদের দ্রুত অসুস্থ করে দেয়, তাদের অক্সিজেন লাগে বেশি। ছড়ায়ও দ্রুত, তাই মৃত্যুর সংখ্যাও বেশি।
বাংলাদেশে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে সীমান্ত বন্ধ করে দেয়া হয় ২৪ এপ্রিল। কিন্তু বিধিনিষেধ না মানায় ভাইরাসের প্রকোপ ঠেকানো যায়নি। প্রথমে ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট রাজশাহী অঞ্চলে ব্যাপক মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। পরে তা ছড়ায় খুলনা বিভাগে। সেই সঙ্গে ঢাকা বিভাগের বৃহত্তর ফরিদপুর অঞ্চল আর টাঙ্গাইল এলাকাতেও সংক্রমণ ঘটে ভাইরাসটির।
পরিস্থিতি ভয়াবহ হওয়ায় গত ২২ জুন থেকে ঢাকাকে ঘিরে রাখা সাত জেলায় যান চলাচল বন্ধ করে রাজধানীকে বিচ্ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
এতেও কাজ না হওয়ায় ১ জুলাই থেকে শুরু হয় শাটডাউন। সরকার জনগণের চলাচল রোধে এবার যে কঠোর, তার প্রমাণ মেলে সেনাবাহিনী মোতায়েনেই।
অকারণে বাড়ির বাইরে আসায় প্রতিদিনই বিপুল পরিমাণ জরিমানা আদায় করা হচ্ছে; কেবল ঢাকায় আটক করা হচ্ছে কয়েক শ মানুষকে। শাটডাউন প্রথমে সাত দিনের জন্য দেয়া হলেও পরে তা বাড়ানো হয়েছে আরও সাত দিন।
এমন উদ্বেগজনক পরিস্থিতি মধ্যে আসন্ন কোরবানির ঈদ উপলক্ষে চলমান শাটডাউন শিথিল করেছে সরকার। শর্ত সাপেক্ষে চালু করা হয়েছে বাসসহ গণপরিবহন। খোলা হয়েছে দোকানপাট।
শাটডাউন শিথিলে সামনের দিনগুলোতে সংক্রমণ আরও বাড়বে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বৃহস্পতিবার এক অনুষ্ঠানে বলছেন, ‘দেশে লকডাউন শিথিল করা হয়েছে। সবকিছু খোলে দেয়া হয়েছে। যে কারণে সংক্রমণের হার কিছুটা বাড়তে পারে। যদি আমার স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলি তাহলে আশা করি, সংক্রমণ ও মৃত্যু নিয়ন্ত্রণ করতে পারব।’
বুধবার করোনা নিয়ন্ত্রণে গঠিত জাতীয় পরামর্শক কমিটি শাটডাউন শিথিলে উদ্বেগ প্রকাশ করে জানিয়েছে লকডাউন ১৪ দিন বাড়ানো উচিত ছিল। যদিও সরকার ঈদের পর আবারও দুই সপ্তাহের শাটডাউনে যাবে।