জানুয়ারি থেকে জুন ৬ মাসের নমুনা পরীক্ষা ও রোগী শনাক্তকরণের হার বিবেচনার আলোকে দেশে করোনার ১০টি জেলাকে সর্বোচ্চ সংক্রমিত হিসেবে চিহ্নিত করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
দেশের করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে রোববার অনলাইন স্বাস্থ্য বুলেটিন এসে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র নাজমুল ইসলাম এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত আমরা যদি সংক্রমণের চিত্র দেখি, তাহলে লক্ষ্য যায় জানুয়ারিতে দেশে ২১ হাজার ৬২৯ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে কমে এসে ১১ হাজার ৭৭ জন। মার্চ মাসেরও করোনা রোগীর সংখ্যা কম ছিল। তবে দেশে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হওয়ার পর জুন মাসে রোগী শনাক্তের সংখ্যা এক লাখ ছাড়িয়ে যায়। জুলাইয়ে আরও বাড়বে বলেও শঙ্কা রয়েছে।’
‘গত ৬ মাসে আমরা যেসব রোগী পেয়েছি তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে দেশের ১০টি জেলায়। দেশের ১০টি জেলায় মধ্যে সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে ঢাকা জেলাতে। এ জেলায় ৪ লাখের বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে চট্টগ্রাম। এই জেলাতে রোগী শনাক্ত হয়েছে ৬৮ হাজার ৯০৭ জন।’
নাজমুল ইসলাম জানান, ঢাকা ও চট্টগ্রামের পর সংক্রমণের দিক থেকে রয়েছে কুমিল্লা। এই জেলায় ২৩ হাজার ২৩০ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে। এরপর সিলেটে ১৯ হাজার ৯৮০, বগুড়াতে ১৯ হাজার ৭৪৬, খুলনায় ১৯ হাজার ১০৩ জন, নারায়ণগঞ্জে ১৯ হাজার ৬৩, রাজশাহীতে ১৮ হাজার ১৪৫, ফরিদপুরে ১৭ হাজার ৯৮৯ এবং গাজীপুরে ১৭ হাজার ৮০৬ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর তথ্য বলছে, দেশে এ পর্যন্ত করোনার সংক্রমণ ধরা পড়েছে ১১ লাখ ২৮ হাজার ৮৮৯ জনের দেহে। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১৮ হাজার ৩২৫ জনের। মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৫৯ শতাংশ।
করোনা থেকে এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৯ লাখ ৫১ হাজার ৩৪০ জন। সুস্থতার হার ৮৪ দশমিক ২৭ শতাংশ।
একদিনের হিসাবে মঙ্গলবার দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে ২০০ জনের মৃত্যু হয়। এই সময়ে সংক্রমণ কিছুটা কমে দাঁড়ায় ১১ হাজার ৫৭৯ জনে।
দেশে করোনা প্রথম শনাক্ত হয় গত বছরের ৮ মার্চ। উদ্বেগ থাকলেও প্রথম কয়েক মাসে ভাইরাসটি সেভাবে ছড়ায়নি।
তবে মে মাস থেকে ব্যাপকভাবে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়তে থাকে। তখন আক্রান্তের হটস্পট ছিল ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামের মতো জনবহুল শহরগুলো।
গত শীতে দ্বিতীয় ঢেউ আসার উদ্বেগ থাকলেও সংক্রমণ ও মৃত্যু- দুটোই কমে আসে। একপর্যায়ে পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৩ শতাংশের নিচে নেমে যায়, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিবেচনায় মহামারি নয়, নিয়ন্ত্রিত পরিস্থিতি। তবে গত মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে শনাক্তের হার আবার বাড়তে থাকে। দ্বিতীয় ঢেউ নিশ্চিত হওয়ার পর এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে ভারতে করোনার নতুন ধরনের কথা জানা যায়।
সেই ভ্যারিয়েন্ট আক্রান্তদের দ্রুত অসুস্থ করে দেয়, তাদের অক্সিজেন লাগে বেশি। ছড়ায়ও দ্রুত, তাই মৃত্যুর সংখ্যাও বেশি।
বাংলাদেশে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে সীমান্ত বন্ধ করে দেয়া হয় ২৪ এপ্রিল। কিন্তু বিধিনিষেধ না মানায় ভাইরাসের প্রকোপ ঠেকানো যায়নি।
প্রথমে ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট রাজশাহী অঞ্চলে ব্যাপক মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। পরে তা ছড়ায় খুলনা বিভাগে। সেই সঙ্গে ঢাকা বিভাগের বৃহত্তর ফরিদপুর অঞ্চল আর টাঙ্গাইল এলাকাতেও সংক্রমণ ঘটে ভাইরাসটির।
পরিস্থিতি ভয়াবহ হওয়ায় গত ২২ জুন থেকে ঢাকাকে ঘিরে রাখা ৭ জেলায় যান চলাচল বন্ধ করে রাজধানীকে বিচ্ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
এতেও কাজ না হওয়ায় ১ জুলাই থেকে শুরু হয় শাটডাউন। জনগণের চলাচল রোধে সরকার এবার যে কঠোর, তার প্রমাণ মেলে সেনাবাহিনী মোতায়েনেই। শাটডাউন প্রথমে সাত দিনের জন্য দেয়া হলেও পরে তা বাড়ানো হয় আরও সাত দিন।
এমন উদ্বেগজনক পরিস্থিতির মধ্যে আসন্ন কোরবানির ঈদ উপলক্ষে চলমান শাটডাউন শিথিল করে সরকার। শর্ত সাপেক্ষে চালু করা হয়েছে বাসসহ গণপরিবহন। খোলা হয়েছে দোকানপাট।
শাটডাউন শিথিলে সামনের দিনগুলোতে সংক্রমণ আরও বাড়বে বলে মনে করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
গত বুধবার করোনা নিয়ন্ত্রণে গঠিত জাতীয় পরামর্শক কমিটি শাটডাউন শিথিলে উদ্বেগ প্রকাশ করে জানিয়েছে লকডাউন ১৪ দিন বাড়ানো উচিত ছিল। ঈদের পর দেশজুড়ে আবারও দুই সপ্তাহের শাটডাউনের ঘোষণা দিয়ে রেখেছে সরকার।