হাওর অধ্যুষিত জেলা সুনামগঞ্জে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়লেও টিকা নিতে মানুষের মধ্যে তেমন আগ্রহ দেখা যায়নি। স্বাস্থ্যবিধিও মানছে না অনেকে।
দেশজুড়ে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে এ জেলায় মৃত্যু ও শনাক্তের হার বাড়ায়, টিকা নিতে কিছুটা আগ্রহ তৈরি হলেও তা আশানুরূপ নয় বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা।
তারা জানান, নিবন্ধন না করায় এর আগে আসা ২২ হাজার টিকা ফেরত দিতে হলেও এবার পরিস্থিতি কিছুটা ব্যতিক্রম। কিছু কিছু মানুষ টিকার নিবন্ধন করতে আসছেন। তবে তা আশানুরূপ নয়।
সোমবার সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে টিকার রেজিস্ট্রেশন ও পর্যবেক্ষণ ডেস্কে দেখা যায়, কিছু মানুষ এসেছেন নিবন্ধন করতে। তবে তারা স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। নেই সামাজিক দূরত্বও। দায়িত্বরত কর্মকর্তারা বারবার স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য বললেও অনেকে শুনছেন না।
যারা টিকা নিতে এসেছেন তারা জানান, হঠাৎ করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় টিকা নিতে এসেছেন।
শহরের নতুনপাড়া এলাকা বাসিন্দা রিতা চন্দ্র বলেন, ‘আগেও টিকা আইছিল, কিন্তু এখন ডেইলি ডেইলি করোনা রোগী বাড়ে এর লাগি টিকাটা নিতে আইলাম। হুনছি চীনের টিকা ভালা, ইতার লাগি আইল্লাম তাড়াতাড়ি করিয়া। আজকে প্রথম ডোজ লইলাম।’
মোহাম্মদপুর এলাকার বাসিন্দা আব্দুল খালিক বলেন, ‘টিকা নিতে আইছি। এখনও দিসি না। অনেক কষ্ট করি রেজিস্ট্রেশন করছি। আমি ইতা বুঝি না, টিকা নিয়া দেখি আল্লাহ কয়দিন বাঁচাইন।’
জেলা স্বাস্থ্যবিভাগ থেকে জানা গেছে, ১১ জুলাই সুনামগঞ্জে চীনের সিনোফার্মের ৩৮ হাজার ৪০০ ডোজ টিকা পৌঁছায়। এরপর দ্বিতীয় ধাপে টিকা দেয়া শুরু হয়েছে।
জেলায় টিকা নিতে অনলাইনে এখন পর্যন্ত নিবন্ধন করেছেন ৮২ হাজার ২২২ জন। তাদের মধ্যে চীনের সিনোফার্মের টিকা নিয়েছেন ১০ হাজার ৩২১ জন।
টিকার নিবন্ধন করতে এসেও অনেকে মানছেন না স্বাস্থ্যবিধি। ছবি: নিউজবাংলা
করোনার নমুনা সংগ্রহকারী জুয়েল আহমদ বলেন, ‘আমরা গত দেড় মাস ধরে করোনার ঊর্ধ্বগতি দেখতে পাচ্ছি। ইদানিং প্রায় সব মিলিয়ে ৬০ শতাংশের মতো পজেটিভ আসছে। আইসোলেশনেও অনেক রোগী ভর্তি আছেন।
‘আমাদের এখানে কর্তৃপক্ষ চেষ্টা করে যাচ্ছে সংক্রামণ রোধ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা সঠিকভাবে দেয়ার জন্য। তবে জনগণের মধ্যে অসর্তকতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সবাই যদি সচেতন না হন, তাহলে ঈদের পর সংক্রমণ আরও বাড়বে বলে আশংকা করা হচ্ছে।’
সুনামগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. শামস উদ্দিন বলেন, ‘সুনামগঞ্জে এখন আস্তে আস্তে বেড়ে যাচ্ছে করোনা সংক্রামণ। যদি আমরা শেষ তিন সপ্তাহের সংক্রামণ হার দেখি, তাহলে এ সপ্তাহের ৩৮ শতাংশ, আগের সপ্তাহে ছিল ৩০ এবং তার আগের সপ্তাহে ছিল ২৫ শতাংশ। সেই হিসাবে বলা যায়, সংক্রমণ বাড়তির দিকে।
তিনি আরও বলেন, ‘নমুনা পরীক্ষার ক্ষেত্রে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষদের তেমন আগ্রহ নেই। আমরা প্রচার চালাচ্ছি, সঙ্গে প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরাও বলছে। তবুও যে পরিমাণ পরীক্ষা প্রয়োজন সে রকম হচ্ছে না।
‘টিকার রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রেও আমি হতাশ। প্রচার চালানো হচ্ছে, মাইকিং করা হচ্ছে, যেন দ্রুতই টিকা নেয়া হয়। কিন্তু ওই আগ্রহ কম।’