রাজশাহী জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের কর্মচারী বজলার রহমানের করোনা শনাক্ত হয় গত মাসে। রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে চিকিৎসা নিয়ে দুই সপ্তাহ আগে তার করোনা নেগেটিভ আসে।
শারীরিক অবস্থার উন্নতি হওয়ায় তাকে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে নেয়া হয়। শুক্রবার সকালে হঠাৎ করেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তার কাশির সঙ্গে রক্ত আসে। করেছিলেন স্ট্রোকও। মেডিক্যালে নেয়া হলেও তাকে আর বাঁচানো যায়নি।
রাজশাহীতে করোনা সংক্রমণের পর ভালো হয়েও নতুন করে জটিলতায় পড়ছেন অনেকেই। নতুন করে অসুস্থ হয়ে অনেকেই মারাও যাচ্ছেন। এ সংখ্যাও একেবারে কম নয়।
রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে জুলাই মাসের ১৯ দিনেই করোনা পরবর্তী জটিলতায় মারা গেছেন ২৪ জন।
বর্তমানে করোনা ইউনিটে এমন রোগী ভর্তি রয়েছেন ৫১ জন। এর মধ্যে ২৪ জনই ভর্তি হয়েছেন শুক্রবার।
বিশেষজ্ঞরা জানান, করোনা নেগেটিভ আসার পরও যারা মারা যাচ্ছেন তাদের বেশির ভাগেরই ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত, কিডনি জটিলতা ও হার্টের সমস্যার শিকার হচ্ছেন।
তারা বলছেন, করোনা শনাক্ত হওয়ার শুরু থেকেই ঠিকভাবে চিকিৎসা নেয়া জরুরি। আবার করোনা নেগেটিভ আসার পরও কিছু পরীক্ষা করা জরুরি। বিশেষ করে ফুসফুসের অবস্থা জানা দরকার। জটিলতা থাকলে সেটার চিকিৎসা নিতে হবে।
করোনা নেগেটিভ হয়ে পরবর্তী জটিলতায় মারা যাওয়াদের বেশিরভাগই বয়স্ক। তাদের সবার বয়সই পঞ্চাশ বছরে উপরে।
রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ নওশাদ আলী বলেন, ‘করোনা যাদের বেশি ক্ষতি করছে তাদের পরবর্তী সময়ে এর জের থেকে যাচ্ছে। অনেকেই নেগেটিভ আসার পরও ফুসফুসের জটিলতা, কিডনি জটিলতা, হার্টের জটিলতা বা ব্রেন স্ট্রোক করে মারা যাচ্ছেন।
‘এজন্য করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর পরই সঠিক চিকিৎসা দরকার। এ ছাড়া করোনা নেগেটিভ আসার পরও চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কিছু পরীক্ষা করানো দরকার। কোনো জটিলতা থাকলে সেগুলোর সঠিক চিকিৎসা দরকার।’
রাজশাহী মেডিক্যাল হাসপাতালের পরিচালক শামীম ইয়াজদানী বলেন, ‘করোনা-পরবর্তী জটিলতায় যারা মারা যাচ্ছেন তাদের বেশির ভাগেরই আগে থেকেই নানা জটিল রোগ ছিল। ফলে করোনা হওয়ার পর তাদের জটিলতা আরও বেড়ে যায়।
‘বিশেষ করে যাদের নিয়ন্ত্রণহীন ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, কিডনির সমস্যা, অ্যাজমা, ক্যান্সার কিংবা বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতা রয়েছে তাদের ঝুঁকি আরও বেশি।’
শামীম ইয়াজদানী আরও বলেন, ‘কোনো কোনো রোগী করোনা শনাক্তের ১০ থেকে ১৫ দিন পর আমাদের কাছে আসছে। আমরা তার পরীক্ষা করার পর নেগেটিভও পাচ্ছি। তবে যেসব লক্ষণ নিয়ে আসছে এগুলো করোনা ছাড়া আর কিছুই নয়।’
‘আমাদের এখানে বেশিরভাগ রোগীই করোনা উপসর্গ ও সংক্রমণ পরবর্তী মারা যাচ্ছে। গ্রাম থেকে অনেকেই আসছে। এরা আগে টেস্ট করে না। শহরেরও কিছু আছে। আমরা চেষ্টা করছি সবাইকে এ ব্যপারে সচেতন করার।’