করোনা ও উপসর্গ নিয়ে একদিনে আট জেলায় ১০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে বগুড়ায় ১৯ জন, ময়মনসিংহে ১৫, রাজশাহী ও কুষ্টিয়ায় ১৪ জন, খুলনায় ১৩, বরিশাল ১২ ও চট্টগ্রামে ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর সিলেটে করোনা পজিটিভ রোগীদের মধ্যে মারা গেছেন ৭ জন।
রোববার সকাল থেকে সোমবার সকালের মধ্যে তাদের মৃত্যু হয়।
বগুড়া
জেলায় করোনা শনাক্ত হয়ে ৯ ও উপসর্গে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে।
শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল ও টিএমএসএস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন এই রোগীরা।
এ পর্যন্ত জেলায় মোট মৃত্যু সংখ্যা দাঁড়াল ৫১২ জনে।
ডেপুটি সিভিল সার্জন মোস্তাফিজুর রহমান তুহিন জানান, সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৪৯৪টি নমুনা পরীক্ষায় ১৬৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। একই সময়ে সুস্থ হয়েছেন ১৭০ জন।
জেলায় এখন করোনা শনাক্ত রোগী আছেন ২ হাজার ১২৫ জন, যার মধ্যে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৫৯১ জন। নমুনা পরীক্ষার ফলাফলে জেলায় করোনা শনাক্তের হার একদিনে ৩৪ দশমিক ২১ শতাংশ।
ময়মনসিংহ
ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে একদিনে মারা যাওয়া ১৫ জনের মধ্যে ৫ জন ছিলেন করোনা পজিটিভ। অন্যরা উপসর্গ নিয়ে ভর্তি ছিলেন।
এ হাসপাতালের করোনা ইউনিটের ফোকাল পার্সন মহিউদ্দিন খান মুন জানান, সেখানে এখন ভর্তি রোগী আছেন ৩৮১ জন। তাদের মধ্যে ২৮১ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে আইসিইউতে ভর্তি আছেন ২০ জন।
সোমবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৯২ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
জেলা সিভিল সার্জন নজরুল ইসলাম জানান, জেলায় একদিনে শনাক্তের হার ২২ দশমিক ৪৮ শতাংশ।
রাজশাহী
রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে একদিনে করোনায় মারা গেছেন পাঁচজন। সেখানে উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসাধীন ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে ওই ২৪ ঘণ্টায়।
এ নিয়ে চলতি মাসের ১৯ দিনে করোনা ইউনিটে ৩২৯ জনের মৃত্যু হলো। এর মধ্যে করোনা পজেটিভ ছিল ১০৬ জনের আর উপসর্গ ছিল ২২৩ জনের।
হাসপাতালের পরিচালক শামীম ইয়াজদানী জানান, এক দিনে করোনা ইউনিটে নতুন রোগী ভর্তি হয়েছে ৬৪ জন। আর হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন ৫৬ জন।
জেলা সিভিল সার্জন অফিসের তথ্যমতে, রোববার রাজশাহীতে ১ হাজার ৪১৩ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১৯০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৪৫ ভাগ।
কুষ্টিয়া
করোনা ডেডিকেটেড কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ১৪ জনের মধ্যে ১১ জনই ছিলেন করোনা পজিটিভ।
হাসপাতালের তত্বাবধায়ক আবদুল মোমেন জানান, সেখানে এখন করোনা পজিটিভ হয়ে ১৮৩ জন আর উপর্সগ নিয়ে ৭০ জন চিকিৎসা নিচ্ছেন।
জেলা প্রশাসনের হিসেবে, এক দিনে ৭২১টি নমুনা পরীক্ষায় ২০৪ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ২৮ দশমিক ২৯ শতাংশ। এ সময়ের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ১২৭ জন।
গত ৭ দিনে কুষ্টিয়ায় করোনা পজিটিভ হয়ে ৭০ জনের মৃত্যু হয়েছে।
খুলনা
খুলনার করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে একদিনে ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া জেনারেল হাসপাতালে ১ জন, গাজী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৩ জন ও আবু নাসের হাসপাতালে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে।
ডেডিকেটেড হাসপাতালের ফোকাল পার্সন সুহাস রঞ্জন হালদার জানান, এ হাসপাতালে মৃতদের মধ্যে করোনা শনাক্ত রোগী ছিলেন ৬ জন।
সোমবার সকাল পর্যন্ত এ হাসপাতালে ১৬৩ জন রোগী ভর্তি রয়েছে। যার মধ্যে রেড জোনে ৮৭ জন, ইয়ালো জোনে ৩৭ জন, এইচডিইউতে ১৯ ও আইসিইউতে আছে ২০ জন।
এক দিনে নতুন রোগী ভর্তি হয়েছে ২৩ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে ৩১ জন।
গাজী মেডিক্যালের স্বত্বাধিকারী গাজী মিজানুর রহমান জানান, এই হাসপাতালে মৃত ৩ জনের মধ্য খুলনার আছেন ২ ও যশোরের ১ জন। হাসপাতালে নতুন রোগী ভর্তি হয়েছে ১৫ জন; বাড়ি ফিরেছেন ১৭ জন।
জেলা জেনারেল হাসপাতালের মুখপাত্র আবু রাশেদ জানান, এ হাসপাতালে খুলনার ১ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এখানে মোট রোগী রয়েছেন ৬২ জন, যার মধ্যে নতুন ভর্তি হয়েছেন ১২ জন; বাড়ি ফিরেছেন ১৫ জন।
আবু নাসের হাসপাতালের মুখপাত্র প্রকাশ দেব নাথ জানান, এ হাসপাতালে মৃত ২ জনের বাড়িও খুলনায়।
এখানে ৪৩ রোগী ভর্তি, যার মধ্যে আইসিইউতে আছেন ১০ জন। এখানে নতুন ভর্তি হয়েছে ৪ জন; বাড়ি ফিরেছে ২ জন।
বরিশাল
বরিশাল বিভাগে ২৪ ঘণ্টায় মৃত ১২ জনের মধ্যে ৩ জন করোনা পজিটিভ ও বাকিরা উপসর্গ নিয়ে শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। এ সময়ের মধ্যে সুস্থ হয়েছে ২১৫ জন।
এ নিয়ে বিভাগে করোনা শনাক্ত হয়ে ৩৮৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিভাগীয় পরিচালক বাসুদেব কুমার দাস জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৮৯১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে বরিশাল জেলায় শনাক্ত ৪০৯ জন, পটুয়াখালীতে ১২৩, ভোলায় ৬২, পিরোজপুরে ১৪০, বরগুনায় ৬৬ ও ঝালকাঠিতে ৯১ জন।
এ নিয়ে বরিশাল বিভাগে মোট শনাক্ত রোগী সংখ্যা হলো ২৬ হাজার ৭৭৮ জন।
শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৩০০ শয্যাবিশিষ্ট করোনা ইউনিটে সোমবার সকাল পর্যন্ত ২৯৪ জন ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ৯৯ জন করোনা পজিটিভ।
চট্টগ্রাম
চট্টগ্রামে শনিবার রাত থেকে রোববার রাত পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছে ৭৬৫ জনের। এই সময়ে জেলায় করোনা শনাক্ত রোগীদের মধ্যে ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চট্টগ্রামে করোনায় মৃত্যু হয়েছে ৮৪১ জন।
এক দিনে জেলার ১৪টি উপজেলার মধ্যে বোয়ালখালীতে সর্বোচ্চ ৩০ জন ও রাঙ্গুনিয়ায় সর্বনিম্ন ৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এ নিয়ে চট্টগ্রামে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা হয়েছে ৭১ হাজার ৬৬৭ জন।
সিলেট
এই বিভাগে সোমবার সকাল ১০টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৪৮৬ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে করোনায় মারা গেছেন ৭ জন, যার মধ্যে ছয়জনই সিলেট জেলার।
ওই ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরেছেন ১০৩ জন।
এ তথ্যগুলো প্রতিদিনের দেয়া প্রতিবেদনে জানিয়েছেন সিলেট বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) সুলতানা রাজিয়া।
তিনি জানান, এই বিভাগে এখন পর্যন্ত করোনা শনাক্ত হয়েছে ৩৩ হাজার ৫২১ জনের। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছে ২৬ ৭৫১ জন ও মারা গেছেন ৫৭৮ জন।