করোনা ও উপসর্গ নিয়ে দেশের ৭ জেলায় এক দিনে ১১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।
যার মধ্যে খুলনায় ২৪ জন, ময়মনসিংহ ও কুষ্টিয়ায় ২০ জন করে, বগুড়ায় ১৯, রাজশাহীতে ১৭, বরিশালে ১৩, নেত্রকোণায় ৩ জন মারা গেছেন।
শনিবার সকাল ৮টা থেকে রোববার সকাল ৮টার মধ্যে তাদের মৃত্যু হয়।
খুলনা
জেলার ৪ হাসপাতালে এক দিনে ২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এর মধ্যে খুলনা করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে ১৫, গাজী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৪ জন ও আবু নাসের হাসপাতালে ৩ ও জেলা জেনারেল হাসপাতালে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে।
ডেডিকেটেড হাসপাতালের ফোকাল পার্সন সুহাস রঞ্জন হালদার জানান, এই হাসপাতালে করোনায় ৮ এবং উপসর্গ নিয়ে ৭ জন মারা গেছেন।
এই হাসপাতালে রোববার সকালে ২০৬ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। যার মধ্যে রেড জোনে ১৪১ জন, ইয়ালো জোনে ২৬ জন, এইচডিইউতে ১৯ ও আইসিইউতে ২০ জন। নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন ২৭ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৩৫ জন।
গাজী মেডিক্যালের মালিক গাজী মিজানুর রহমান জানান, এই হাসপাতালে মৃত ৪ জনের মধ্য খুলনার ৩ ও যশোরের ১ জন। হাসপাতালে ৯৪ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। এর মধ্যে আইসিইউতে ৯ ও এইচডিইউতে ৭ জন। এক দিনে নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন ১২ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১৭ জন।
জেলা জেনারেল হাসপাতালের মুখপাত্র আবু রাশেদ জানান, এই হাসপাতালে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। খুলনায় ১ ও নড়াইলে ১ জন।
এ হাসপাতালে মোট রোগী রয়েছেন ৬৬ জন। নতুন ভর্তি হয়েছেন ১৪ জন; বাড়ি ফিরেছেন ২ জন।
আবু নাসের হাসপাতালের মুখপাত্র প্রকাশ দেব নাথ জানান, এই হাসপাতালে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃত ৩ জনের মধ্যে খুলনা ২ ও যশোরে ১ জন। ৪২ রোগী ভর্তি যার মধ্যে আইসিইউতে ১০ জন। এখানে নতুন ভর্তি হয়েছেন ৩ জন; বাড়ি ফিরেছেন ২ জন।
ময়মনসিংহ
ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ৭ জন করোনা শনাক্ত হয়ে ও বাকি ১৩ জন উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন।
এই হাসপাতালের করোনা ইউনিটের ফোকাল পার্সন মহিউদ্দিন খান মুন জানান, বর্তমানে করোনা ইউনিটে ৪১১ জন চিকিৎসা নিচ্ছেন। ভর্তি হওয়া রোগীদের নমুনা পরীক্ষা করে ১৫৫ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে।
এর মধ্যে আইসিইউতে ভর্তি আছেন ২২ জন। নতুন করে ভর্তি হয়েছেন ৩৮ জন। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় ৭১ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
জেলা সিভিল সার্জন নজরুল ইসলাম জানান, এ জেলায় নতুন করে ৭৫২ নমুনা পরীক্ষা করে ১৯৮ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। জেলায় আক্রান্তের হার ২৬ দশমিক ৩২ শতাংশ।
কুষ্টিয়া
জেলা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আবদুল মোমেন জানান, এই হাসপাতালে ১২ জন করোনায় ও ৮ জন উপর্সগ নিয়ে মারা গেছেন।
এই হাসপাতালে রোববার সকাল পর্যন্ত করোনা পজিটিভ ১৮৩ জন আর উপর্সগ নিয়ে ৬৭ জন মোট ২৫০ রোগী ভর্তি আছেন।
কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের হিসাবে গত ২৪ ঘণ্টায় ৯৮৮টি নমুনায় ২০৫ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তের হার ২০ দশমিক ৭৪ ভাগ। এ সময়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১৯৫ জন।
বগুড়া
বগুড়ায় করোনাভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যা ৫০০ ছাড়িয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ৭ জনের করোনায় ও উপসর্গ নিয়ে ১২ জনের মৃত্যু হয়। এ সময়ে সুস্থ হয়েছেন ১২৬ জন।
জেলা ডেপুটি সিভিল সার্জন মোস্তাফিজুর রহমান তুহীন জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় বগুড়ার ৭ জন মারা যান। এতে মোট মৃত্যুসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫০৫ জনে।
এ ছাড়া এক দিনে জেলায় ৬১৫টি নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত হন ১৯৫ জন।
রাজশাহী
রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে এক দিনে ৯ জন নারী ও ৮ জন পুরুষ করোনা ও উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন।
এ নিয়ে চলতি মাসের ১৮ দিনে রামেক হাসপাতালের করোনা ইউনিটে মোট ৩১৫ জনের মৃত্যু হলো। এর মধ্যে করোনা পজেটিভ ১০১ জন আর উপসর্গ নিয়ে ২১৪ জনের মৃত্যু হয়।
রামেক হাসপাতালের পরিচালক শামীম ইয়াজদানী জানান, মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে করোনা আক্রান্ত হয়ে ৫ জন ও উপসর্গে ১২ জন মারা গেছেন। এদের মধ্যে করোনা নেগেটিভ হওয়ার পর ১ জনের মৃত্যু হয়।
এ হাসপাতালে নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন ৬০ জন। আর এই সময়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন ৭৬ জন।
বর্তমানে রামেক হাসপাতালের করোনা ইউনিটের ৪৫৪টি শয্যার বিপরীতে রোগী ভর্তি আছেন ৫০৬ জন।
রাজশাহী সিভিল সার্জন অফিসের তথ্যমতে, শনিবার রাজশাহীতে ১ হাজার ৪৬৭ নমুনা পরীক্ষা করে ২১৫ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়। শনাক্তের হার ১৪ দশমিক ৬৫ ভাগ।
বরিশাল
বরিশাল বিভাগে ৭ জন করোনায় ও ৬ জন মারা গেছেন উপসর্গে।
এই নিয়ে বরিশাল বিভাগে করোনায় মোট মৃত্যুর সংখ্যা ৩৮৪ জনে দাঁড়িয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে ১০ জন বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিভাগীয় পরিচালক বাসুদেব কুমার দাস নিউজবাংলাকে জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৬০০ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে বরিশাল জেলায় শনাক্তের সংখ্যা ১৯৭, পটুয়াখালীতে ৬৯, ভোলায় ৬১, পিরোজপুরে ৯৬, বরগুনায় ৭০ ও ঝালকাঠিতে ১০৭ জন।
বরিশাল বিভাগে মোট করোনা শনাক্তের সংখ্যা ২৫ হাজার ৮৮৭ জন।
এদিকে শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ৩০০ শয্যাবিশিষ্ট করোনা ইউনিটে রোববার সকাল পর্যন্ত ২৮৩ জন ভর্তি; যার মধ্যে ৮৯ জনের করোনা পজিটিভ। নতুন করে এই ইউনিটে ৫৬ নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন।
নেত্রকোণা
জেলায় এক দিনে ৩ জনের মৃত্যু হয়। এ ছাড়া এ সময়ে নতুন করে ৫০ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে।
মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে ২ জন নারী ও ১ জন পুরুষ।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের মুখপাত্র উত্তম কুমার পাল জানান, শনিবার ১৯১ জনের নমুনা পরীক্ষা করে শনাক্ত হন ৫০ জন। শনাক্তের হার শতকরা ২৭ দশমিক ৬২।
জেলায় এ পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন ২ হাজার ৬৪৫ জন। সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৪৪৯ জন। হাসপাতাল ও নিজ বাড়িতে চিকিৎসাধীন আছেন ১ হাজার ১৯৬ জন। মারা গেছেন মোট ৫৫ জন।