করোনার উচ্চ সংক্রমণ পরিস্থিতিতে কুড়িগ্রামে শহর-গ্রামে বেড়েছে জ্বর, সর্দি, কাশির প্রকোপ। বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন বৃদ্ধ ও শিশুরা। এর মধ্যে দুই সপ্তাহ ধরে বাজারে প্যারাসিটামল, নাপাসহ জ্বর-সর্দির ওষুধের সংকট দেখা দিয়েছে। কিছু কিছু ফার্মেসিতে পাওয়া গেলেও বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে।
কুড়িগ্রামে ওষুধের সরবরাহ কমে যাওয়ায় সংকটের কারণে দাম বেড়েছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের।
তারা জানান, আবহাওয়া জনিত কারণে জ্বর, সর্দি, কাশির প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় ওষুধের চাহিদার বিপরীতে কোম্পানিগুলোর সরবরাহ কম।
সদর উপজেলার ঘোগাদহ ইউনিয়নের পাটেশ্বরী বাজার এলাকার বাসিন্দা মজিবর বলেন, ‘আমার বাচ্চার জ্বর হয়েছে। ডাক্তার নাপা সিরাপ লিখে দিছেন। ফার্মেসিতে গেলাম তারা আমার কাছে ৬০ টাকা চাইল। ফার্মেসির লোককে বললাম ২০ টাকার সিরাপ ৬০ টাকা কেন? তারা বলে, সাপ্লাই নাই। বাচার জন্য বাধ্য হয়ে ৬০ টাকা দরে তিনটি সিরাপ নিয়েছি ১৮০ টাকায়।’
একই এলাকার মুকুল মিয়া বলেন, ‘কয়েক দিন আগে আমার মাথা ব্যথার জন্য প্যারাসিটামল বড়ি নিতে গেছি। ফার্মেসি আমার কাছ থেকে একটা বড়ি ১০ টাকা নিল। সাপ্লাই নাই বলে তারা এক-দুই টাকার বড়ি বেশি দাম নিচ্ছে।’
উলিপুর উপজেলার থেতরাই গোড়াই পিয়ার গ্রামের শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘গ্রামাঞ্চলে জ্বর, সর্দি, কাশির প্রভাব অনেক বাড়ছে। এ সময়ে ওষুধের সংকট দেখা দিছে দোকান গুলোতে।’
পাটেশ্বরী বাজারের ওষুধ বিক্রেতা সুজন চন্দ্র বলেন, ‘প্রতি বাড়িতে জ্বর, সর্দি, কাশি দেখা দিছে। এজন্য ঠাণ্ডাজনিত রোগের ওষুধের চাহিদা বাড়ছে। চাহিদা মতো কোম্পানি ওষুধ সাপ্লাই দেয় না। শহর থেকে আনতে হয় বেশি দামে। সেজন্য আমরাও বেশি দামে বিক্রি করি।’একই এলাকার পল্লী চিকিৎসক ও ব্যবসায়ী নিরেন্দ্র নাথ সরকার বলেন,‘কয়েক বছরের তুলনায় এবার ঘরে ঘরে চার-পাঁচ জন করে জ্বরের রোগী দেখা দিয়েছে। আমার মনে হয় ভাইরাস আর আবহাওয়ার কারণে জ্বরের প্রকোপ বাড়ছে। এতে করে প্যারাসিটামল, নাপা জাতীয় ওষুধ সংকট রয়েছে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক বলেন, কিছু ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি, চিকিৎসক, অসাধু ব্যবসায়ীর একটি চক্র সুযোগ বুঝে ওষুধের সংকট দেখিয়ে ক্রেতার কাছ থেকে বাড়তি দাম নিয়ে থাকে।’
কুড়িগ্রামের ডেপুটি সিভিল সার্জন এএইচএম বোরহান উল ইসলাম সিদ্দিকী বলেন, ‘জেলায় সিজনাল জ্বরের প্রকোপ বেড়েছে। এতে একটি কোম্পানির নাপার সংকট দেখা দিয়েছে বাজারে। অন্য কোম্পানির বিকল্প ওষুধ ফাস্ট, এইস, ক্যাফেডল, টামেন পাওয়া যাচ্ছে। এসব ওষুধের গুণাগুণ একই। মানুষ প্যারাসিটামল, নাপার সঙ্গেই পরিচিত।’
তিনি বলেন, ‘সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রচুর পরিমাণে ওষুধ মজুদ আছে। আমি গ্রাহকদের পরামর্শ দেবো, অন্য ব্রান্ডের প্যারাসিটামল ওষুধ নিতে। তাহলে এই সংকট থাকবে না।’