দেশে এখন পর্যন্ত চারটি কোম্পানি উৎপাদিত করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা এসেছে। প্রতিটি টিকা গণহারে প্রয়োগ করার আগে কিছু জনগোষ্ঠীর ওপর পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে।
তবে টিকা বিতরণের বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্ম কোভ্যাক্স থেকে পাওয়া মডার্নার ২৫ লাখ টিকা এমন কোনো পর্যবেক্ষণ না করে মঙ্গলবার সকাল থেকে গণহারে প্রয়োগ শুরু হয়েছে।
মডার্নার টিকায় ‘অতি বিরল’ ক্ষেত্রে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে হৃদযন্ত্রে প্রদাহ হয় বলে জানিয়েছে ইউরোপের ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
সংস্থাটি বলছে, মডার্নার টিকায় তরুণদের হৃদযন্ত্রে প্রদাহ ধারণার চেয়ে বেশি হয়। তরুণদের মধ্যে দেখা যাওয়া উপসর্গের মধ্যে আছে বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্টের অনুভূতি, বুক ধড়ফড় করা ও এলোপাতাড়ি হৃদস্পন্দন। তবে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকলেও টিকার উপকার এখনও এর ঝুঁকির তুলনায় অনেক বেশি বলে তারা আশ্বস্ত করেছে।
এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগের অধ্যাপক সাইদুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গণহারে টিকা প্রয়োগের আগে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করে গভীর পর্যবেক্ষণে রাখা উচিত ছিল। তবে গণটিকা প্রয়োগের পরও পর্যবেক্ষণের সুযোগ রয়েছে।
‘টিকা দেয়ার পর ৩০ মিনিট পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এমনকি একটি ফোন নম্বর দেয়া হচ্ছে। কোনো সমস্যা দেখা দিলে চিকিৎসককে ফোন দিতে বলা হচ্ছে।’
এ বিষয়ে জানতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র ড. রুবেদ আমিন মঙ্গলবার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সকাল ৮টা থেকে প্রায় সব সিটি করপোরেশনে (টিকার প্রয়োগ) শুরু হয়ে গেছে। কিছু সিটি করপোরেশনে টিকা পৌঁছানো সম্ভব হয়নি, যে কারণে হয়তো কাল শুরু হতে পারে।’
যুক্তরাষ্ট্র থেকে কোভ্যাক্স সুবিধায় পাওয়া মডার্নার টিকা দেশের ১২ সিটি করপোরেশন এলাকায় দেয়ার কথা রয়েছে।
পরীক্ষামূলক পর্যবেক্ষণ ছাড়াই মডার্নার টিকা গণহারে প্রয়োগ শুরু করা কেন হলো জানতে চাইলে রোবেদ বলেন, ‘মডার্না ও ফাইজার একই এমআরএনএ প্রযুক্তি ব্যবহার করে করোনার টিকা তৈরি করেছে। দেশে ফাইজারের টিকা পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। তাই নতুন করে মডার্নার ক্ষেত্রে পরীক্ষামূলক পর্যবেক্ষণ করা হয়নি।’
টিকা নেয়ার বিষয়ে সর্তক থাকার আহ্বান জানিয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আগে যারা সিরামের টিকা নিয়েছেন তারা দ্বিতীয় ডোজও সিরামের টিকা নিবেন। অনেক উপজেলা ও সিটি করপোরেশন এলাকায় আগামী মঙ্গলবার থেকে মডার্নার টিকা দেয়া হবে। যখন মডার্নার টিকা দেয়া চালু হবে, এসব এলাকায় চীনের উৎপাদিত সিনোফার্মের টিকা দেয়া বন্ধ করে দিব।’
করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা সংকটের কারণ দেখিয়ে গত ৫ মে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নিবন্ধন কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ কোম্পানি ফাইজার ও চীনের সিনোফার্ম উদ্ভাবিত টিকা বিবিআইবিপি-করভির ডোজ হাতে আসার পর সরকার তিন শ্রেণির জন্য নিবন্ধন অ্যাপ চালু করে।
মডার্নার টিকা মাইনাস ১৫ থেকে ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে রাখতে হয়। এ কারণে এ টিকা দেয়া হবে সিটি করপোরেশন এলাকায়।
সিটি করপোরেশন এলাকার আওতায় থাকা সাধারণ মানুষ এই টিকার আওতায় আসবে। আর সিনোফার্মের টিকা রাখা যায় দুই থেকে আট ডিগ্রি সেলসিয়াসে। তাই জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে সিনোফার্মের টিকা দেয়া হবে।
এ পর্যন্ত টিকা পেতে নিবন্ধন করেছেন ৭২ লাখ ৮০ হাজার ১৩১ জন। এর মধ্যে দুই ডোজ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা পেয়েছে ৪২ লাখ ৯০ হাজার ৯৬৪ জন। আর শুধু প্রথম ডোজ পেয়েছে ৫৮ লাখ ২০ হাজার ১৫ জন।
সিনোফার্মের টিকার প্রথম ডোজ পেয়েছেন ৭১ হাজার ৮ জন। দুই ডোজ পেয়েছেন ২ হাজার ২৩৭ জন। এ ছাড়া ফাইজারের টিকার প্রথম ডোজ পেয়েছেন ১ হাজার ৮৬৬ জন।
এবার যাদের অগ্রাধিকার
করোনা প্রতিরোধী টিকা প্রদানে এবার যাদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে, তারা হলেন করোনা মোকাবিলায় সামনের সারির যোদ্ধা, নির্বাচিত প্রতিনিধি, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার কর্মকর্তা, সব ধর্মের প্রতিনিধি, মৃতদেহ সংস্কারকাজে নিয়োজিত কর্মী, বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি, নিষ্কাশন ও ফায়ার সার্ভিসের প্রথম সারির কর্মকর্তা, রেলওয়ে স্টেশন, বিমানবন্দর, নৌবন্দর, স্থলবন্দরের কর্মচারীরা, সামরিক বাহিনীর সদস্য, জেলা-উপজেলায় জরুরি কাজে নিয়োজিত সরকারি কর্মচারী, ব্যাংক কর্মকর্তা ও কর্মচারী, জাতীয় দলের খেলোয়াড়, চিকিৎসাসংশ্লিষ্ট বিভাগের ছাত্র-ছাত্রী, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলের ছাত্র-ছাত্রী, গণমাধ্যমকর্মী, স্বাস্থ্য ও পরিবার মন্ত্রণালয়ের সব কর্মকর্তা-কর্মচারী, অনুমোদিত সরকারি-বেসরকারি স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, রাষ্ট্র পরিচালনায় নিয়োজিত অপরিহার্য কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।