বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ছয় জেলায় করোনায় এক দিনে ৮৯ জনের মৃত্যু

  •    
  • ১৩ জুলাই, ২০২১ ১১:৪৮

করোনা ও উপসর্গ নিয়ে রাজশাহী ও খুলনায় এক দিনে ১৯ জন করে মারা গেছেন। এ ছাড়া ময়মনসিংহে ১৮ জন, ঝিনাইদহে ১২ জন, চট্টগ্রাম এবং কুষ্টিয়ায় ১০ জন করে মারা গেছেন। 

দেশে করোনায় মৃত্যুর মিছিল থামছেই না। প্রতিদিনই লম্বা হচ্ছে লাইন। এদিকে, করোনা রোগীর সংখ্যা হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে দ্রুতগতিতে। করোনা চিহ্নিত না হলেও করোনা রোগের সব লক্ষণ নিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন তারা। তাদের প্রায় সবারই ফুসফুসে আক্রান্ত।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু মূলত করোনার কারণেই হচ্ছে। তবে, এসব মৃত্যুর হিসাব যোগ হচ্ছে না স্বাস্থ্য বিভাগের মৃত্যুর তালিকায়। প্রতিদিনিই করোনার থেকে উপসর্গেই মৃত্যু বেশি। কোনো কোনো দিন করোনার চেয়ে উপসর্গের মৃত্যু হচ্ছে ৪ থেকে ৫ গুণ বেশি।

রাজশাহী

রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে এক দিনে আরও ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে।

সোমবার সকাল থেকে মঙ্গলবার সকালের মধ্যে তাদের মৃত্যু হয়।

রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী জানান, মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে করোনা আক্রান্ত হয়ে ৮ জন ও উপসর্গে ১১জন মারা গেছেন। এদের মধ্যে করোনা নেগেটিভ হওয়ার পর ১ জনের মৃত্যু হয়েছে।

এর আগের ২৪ ঘণ্টায় এখানে ১৪ জনের মৃত্যু হয়।

এদিকে, চলতি মাসের ১৩ দিনে এই হাসপাতালে মারা গেছেন ২২৩ জন। এর মধ্যে করোনা শনাক্ত হয়ে মারা যান ৭১ জন। বাকি ১৫২ জন মারা যান উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায়।

গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে রাজশাহীর ৬ জন, নাটোরের ৩ জন, নওগাঁর ৩ জন, পাবনার ৩ জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ২ জন এবং বগুড়া ও সিরাজগঞ্জে একজন করে রয়েছেন।

বয়স বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ১৯ জনের মধ্যে ৭ জন ষাটোর্ধ্ব, ১০ জন পঞ্চাশোর্ধ এবং ২ জন চল্লিশোর্ধ্ব।

তিনি আরও জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা ওয়ার্ডে নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন ৬৩ জন। এ সময় সুস্থ হয়ে ছাড়পত্র নিয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন ৭৬ জন। সকালে ৪৫৪ বেডের বিপরীতে মোট ভর্তি রোগী ছিলেন ৫০৪ জন।

এদিকে, সোমবার রাজশাহীর দুটি পিসিআর ল্যাবে রাজশাহী জেলার ৪৬৯টি নমুনা পরীক্ষায় ১৫৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। রাজশাহীতে শনাক্তের হার ৩৩ দশমিক ৬৯ শতাংশ।

খুলনা

খুলনায় ৪ হাসপাতালে করোনা ও উপসর্গ নিয়ে এক দিনে ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় খুলনা করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে ১০ জন, জেলা জেনারেল হাসপাতালে ৪ জন, গাজী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৪ জন ও আবু নাসের হাসপাতালে ১ জন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

ডেডিকেটেড হাসপাতালের আবাসিক কর্মকর্তা (ফোকাল পার্সন) সুহাস রঞ্জন হালদার জানান, এ হাসপাতালে মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে করোনা নিয়ে ৫ ও উপসর্গ নিয়ে ৫ জন মারা গেছেন। শনাক্ত হয়ে মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে খুলনার ৪ জন ও বাগেরহাটে ১ জন।

এ ছাড়া এই হাসপাতালে ১৯৫ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। যার মধ্যে রেড জোনে ১৩০ জন, ইয়েলো জোনে ২৫ জন, এইচডিইউতে ২০ ও আইসিইউতে ২০ জন। নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন ৪৩ জন।

গাজী মেডিক্যালের মালিক গাজী মিজানুর রহমান জানান, এই হাসপাতালে মৃত ৪ জনের মধ্য খুলনার ৩ ও বাগেরহাটে ১ জন।

জেলা জেনারেল হাসপাতালের মুখপাত্র আবু রাশেদ জানান, এই হাসপাতালে ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। ৪ জনের বাড়ি খুলনায়। এই হাসপাতালে মোট রোগী রয়েছেন ৭৬ জন। নতুন ভর্তি হয়েছেন ১২ জন; সুস্থ হয়েছেন ৮ জন।

আবু নাসের হাসপাতালের মুখপাত্র প্রকাশ দেব নাথ জানান, এই হাসপাতালে ১ জনের মৃত্যু হয়েছে। তার বাড়ি খুলনায়। ৪৪ জন রোগী ভর্তি যার মধ্যে আইসিইউতে ১০ জন। এখানে নতুন ভর্তি হয়েছেন ৬ জন; সুস্থ হয়েছেন ৬ জন।

ময়মনসিংহ

ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ২৪ ঘণ্টায় ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ১০ জন করোনা শনাক্ত হয়ে ও বাকিরা উপসর্গ নিয়ে মারা যান।

হাসপাতালের করোনা ইউনিটের আবাসিক কর্মকর্তা (ফোকাল পার্সন) মহিউদ্দিন খান মুন মঙ্গলবার সকাল সোয়া ৯টায় নিউজবাংলাকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, বর্তমানে করোনা ইউনিটে ৪৬২ জন চিকিৎসা নিচ্ছেন। এর মধ্যে আইসিইউতে ভর্তি আছেন ২০ জন। নতুন করে ভর্তি হয়েছেন ৮৪ জন। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় ৫২ জন সুস্থ হয়েছেন।

তিনি আরও জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় টেলিমেডিসিন সেবা নিয়েছেন ৪৫ জন।

জেলা সিভিল সার্জন নজরুল ইসলাম জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৯৭৫টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৬৫ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। জেলায় আক্রান্তের হার ২৭ দশমিক ১৭ শতাংশ।

ঝিনাইদহ

জেলায় করোনা ও উপসর্গ নিয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়াও নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ১০৮ জন।

সিভিল সার্জন সেলিনা বেগম মঙ্গলবার সকালে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে সদর হাসপাতালে ৯ জন, কোটচাঁদপুরে ২ জন ও কালীগঞ্জে ১ জন মারা গেছেন।

এ ছাড়া জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৪৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১০৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তের হার ৩১ দশমিক ৩৯ ভাগ।

এ নিয়ে জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৫ হাজার ৮৫৮ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ৫৬ জন।

চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৯৫৫ জন। যা এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ আক্রান্ত। এই সময়ে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১০ জন।

জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে মঙ্গলবার এই তথ্য জানানো হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামের ১০টি এবং কক্সবাজারের একটিসহ মোট ১১টি ল্যাবে ২ হাজার ৬৪৯টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে নতুন করে ৯৫৫ জনের শরীরে করোনার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এখন পর্যন্ত এটাই ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ শনাক্ত।

এর আগে সোমবার সর্বোচ্চ ৮২১ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। নতুন আক্রান্তদের মধ্যে ৬৩৬ জন শহরের ও ৩১৯ জন উপজেলার বাসিন্দা। এ নিয়ে চট্টগ্রামে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৬৬ হাজার ৭৮৪ জন।

গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১০ জন। এর মধ্যে ৩ জন শহরের ও ৭ জন উপজেলার বাসিন্দা। এখন পর্যন্ত চট্টগ্রামে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন মোট ৭৯০ জন।

জেলার ১৪টি উপজেলার মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৫০ জন আক্রান্ত হয়েছেন সীতাকুণ্ডে এবং সবচেয়ে কম ৮ জন আক্রান্ত হয়েছেন লোহাগড়ায়। বাকি উপজেলাগুলোর মধ্যে সাতকানিয়ায় ৯ জন, বাঁশখালীতে ৯ জন, আনোয়ারায় ১৫ জন, চন্দনাইশে ১১ জন, পটিয়ায় ২১ জন, বোয়ালখালীতে ২৬ জন, রাঙ্গুনিয়ায় ২৮ জন, রাউজানে ৩৫ জন, ফটিকছড়িতে ৩০ জন, হাটহাজারীতে ২৬ জন, মীরসরাইয়ে ২৭ জন এবং সন্দ্বীপে ১৪ জন নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।

এদিকে জেলার বড় সরকারি হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে করোনা রোগী ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত রোগীর চাপ। ইতোমধ্যে কোভিড চিকিৎসা উন্নত করতে হাসপাতালে শয্যা খালি করার পাশাপাশি রুটিন ভর্তি ও রুটিন সার্জারি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল। রোববার এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে চারটি নির্দেশনা দিয়ে বিভাগীয় প্রধানদের চিঠি দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

ওই দিন থেকেই এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চমেক হাসপাতালের পরিচাল ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হুমায়ুন কবীর।

নির্দেশনায় বলা হয় কেবল জরুরি রোগীদের ভর্তি ব্যতীত অন্যান্য রুটিন অপারেশনসমূহ স্থগিত থাকবে। জরুরি রোগীদের ভর্তি করা হবে, তবে রুটিন ভর্তি বন্ধ থাকবে। ইতোমধ্যে ভর্তি রোগীদের মধ্যে যারা জরুরি নন (দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত) তাদের আপাতত প্রয়োজনীয় চিকিৎসা, ব্যবস্থাপত্র দিয়ে বাড়িতে চিকিৎসা গ্রহণের জন্য ছাড়পত্র দেয়া হবে।

এ বিষয়ে চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘ক্রমবর্ধমান কোভিড পরিস্থিতি মোকাবিলায় এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। রোববার থেকে আমাদের এই সিদ্ধান্তটি বাস্তবতায়ন করা হয়েছে। এটা কত দিন চলবে সেটা কেভিড পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে। তবে আমাদের ইমার্জেন্সি সেবা ঠিকঠাক চলছে।’

কুষ্টিয়া

কুষ্টিয়ায় গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা ও উপসর্গ নিয়ে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে ৯ জন করোনা আক্রান্ত ছিলেন। আর ১ জন ভর্তি ছিলেন উপসর্গ নিয়ে।

সোমবার সকাল ৮টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৮টার মধ্যে তাদের মৃত্যু হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আবদুল মোমেন।

জেলা প্রশাসনের হিসাব অনুযায়ী, ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ২৯১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। নমুনা পরীক্ষায় গত দিনের চেয়ে শনাক্তের হার ৩ বেড়ে ২৯ দশমিক ৩৯ শতাংশ হয়েছে।

জেলায় ৭ দিনে করোনা শনাক্ত হয়ে ৮৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই ৭ দিনে জেলায় ১ হাজার ৬৭৫ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এ পর্যন্ত জেলায় করোনা আক্রান্ত হয়ে ৩৫৯ জন মারা গেছেন।

এদিকে, কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে রোগীর চাপ বেড়েই চলেছে।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আবদুল মোমেন জানান, ২০০ শয্যায় করোনা ও এর উপসর্গ নিয়ে ভর্তি আছেন প্রায় ৩০০ জন। এদের মধ্যে করোনা শনাক্ত রোগী ১৯২ জন। বাকিরা উপসর্গ নিয়ে ভর্তি আছেন।

প্রায় ৭০ শতাংশ রোগীর অক্সিজেন প্রয়োজন হচ্ছে। এতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের প্রায় সব বেডে সেন্ট্রাল অক্সিজেন নিশ্চিত করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

তিনি আরও জানান, কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে দায়িত্বে অবহেলা নজরদারি করতে সিসি ক্যামেরা বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। একই সঙ্গে রোগীর মৃত্যুর বিষয়টিও নজরদারি করা হচ্ছে।

এ বিভাগের আরো খবর