চলতি বছরের জুলাই ও আগস্টের মধ্যে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী প্রায় ২ কোটি টিকা বাংলাদেশে আসছে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিকে জানিয়েছে ওই মন্ত্রণালয়।
বিভিন্ন দেশ থেকে এ টিকা আসবে বলে কমিটিকে অবহিত করা হয়েছে।
এসব টিকা এলে গণটিকাদান চালু থাকবে বলেও জানিয়েছে মন্ত্রণালয়।
সংসদ ভবনে রোববার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে টিকা কূটনীতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় বলে নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন কমিটির সদস্য হাবিবে মিল্লাত। সেখানেই টিকা প্রাপ্তির বিষয়টি উল্লেখ করা হয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন দেশ থেকে টিকা সংগ্রহ অব্যাহত রেখেছে সরকার। মাঝখানে ভারত থেকে টিকা রপ্তানি বন্ধ হলেও এখন সরকারের টিকা কূটনীতিতে আশার আলো দেখা যাচ্ছে।
আরও পড়ুন: ৮০ ভাগ মানুষকে টিকা দিতে লাগবে ৪ বছর
বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, জুলাইয়ে প্রথমে চীনের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান সিনোফার্মের ২০ লাখ ডোজ টিকা আসবে। এরপর টিকা বিতরণের বৈশ্বিক কর্মসূচি কোভ্যাক্সের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২৫ লাখ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ১০ লাখ আর জাপান থেকে আসবে ২৫ লাখ। চলতি মাসের শেষ দিকে আরও ৫ লাখ টিকা আসবে চীনের সিনোফার্ম থেকে। এসব টিকা আসা মোটামুটি নিশ্চিত। অর্থাৎ জুলাই মাসে আসছে ৮০ থেকে ৮৫ লাখ ডোজ টিকা।
এ ছাড়া আগস্টে ৬২ লাখ ডোজ টিকা আসবে কোভ্যাক্সের মাধ্যমে। সেটাও বিভিন্ন জায়গা থেকে আসবে। আর ৫০ লাখ ডোজ আসবে চীন থেকে। সেটাও কোভ্যাক্সের মাধ্যমে।
অর্থাৎ আগস্টে আসবে ১ কোটি ১২ লাখ টিকা। জুলাই-আগস্ট মাসে প্রায় ২ কোটি টিকা আসছে।
দেশে প্রথম পর্যায়ে গণটিকাদান শুরু হয়েছিল ৭ ফেব্রুয়ারি। শুরুতে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দেয়া হয়। দ্বিতীয় ডোজ নিশ্চিত না করেই ৫৮ লাখ ২০ হাজারের বেশি মানুষকে ওই টিকার প্রথম ডোজ দেয়া হয়। এর মধ্যে ৪৩ লাখ ৯৫ হাজার ২১৮ জনকে দ্বিতীয় ডোজ দেয়া সম্ভব হয়েছে।
করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা সংকটের কারণ দেখিয়ে গত ৫ মে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নিবন্ধন কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ কোম্পানি ফাইজার ও চীনের সিনোফার্ম উদ্ভাবিত টিকা বিবিআইবিপি-করভির ডোজ হাতে আসার পর সরকার তিন শ্রেণির জন্য নিবন্ধন অ্যাপ চালু করে।
এখন ২২ ক্যটাগরির মানুষ নিবন্ধন সুযোগ পাচ্ছে। তবে সিরামের টিকা সরকারের হাতে না থাকার কারণে এখনো ১৫ লাখ ২৪ হাজারের বেশি মানুষ দ্বিতীয় ডোজের অপেক্ষায় আছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, আগামী মাসে এ টিকার সংকটও সমাধান হবে।
বৈঠকে টিকা কূটনীতিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা, করোনাকালে বাংলাদেশের বিভিন্ন দূতাবাসের সার্বিক ব্যবস্থাপনা ও সেবাদান নিয়ে পর্যালোচনা, বাংলাদেশে অবস্থিত ব্রুনাই দূতাবাসের জমি প্রাপ্তি নিয়ে আলোচনা এবং মরক্কো ও দক্ষিণ কোরিয়ায় নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতদের কর্মপরিকল্পনা নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়।
ভবিষ্যৎ বৈঠকের কার্যপত্র সংক্ষিপ্ত আকারে উপস্থাপনের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো বৈঠকের আগেই ই-মেইলের মাধ্যমে কমিটির সদস্যদের কাছে পাঠানোর জন্য কমিটি থেকে মন্ত্রণালয়কে পরামর্শ দেয়া হয়।
বৈঠকে মরক্কো ও দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক জোরদার করার জন্য কমিটি মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করে। মরক্কো প্রদত্ত শিক্ষাবিষয়ক বৃত্তিতে যেন মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা সুযোগ গ্রহণ করতে পারে, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে কমিটি থেকে সুপারিশ করা হয়।
ব্রুনাই দূতাবাসের অনুকূলে জমি বরাদ্দের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট দূতাবাসকে অবহিত করার ব্যাপারে কমিটি মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করে। সমুদ্রপথে অবৈধভাবে বিদেশ গমন রোধকল্পে স্বরাষ্ট্র ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়ে কমিটি মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করে।
ইথিওপিয়ায় আটকে পড়া বাংলাদেশি শ্রমিকদের ফেরত আনার পাশাপাশি লেবানন ও ইতালির মিলানে অবস্থিত শ্রমিকদের স্বার্থসুরক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বৈঠকে মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করা হয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি মুহাম্মদ ফারুক খানের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, নুরুল ইসলাম নাহিদ, গোলাম ফারুক খন্দকার প্রিন্স, মো. আব্দুল মজিদ খান, হাবিবে মিল্লাত এবং নিজাম উদ্দিন জলিল (জন) অংশ নেন।
এ ছাড়া পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, মরক্কো ও দক্ষিণ কোরিয়ায় নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূত, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কয়েকজন কর্মকর্তা এবং জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা এতে উপস্থিত ছিলেন।