এক ব্যক্তির দেহে একই সময়ে করোনাভাইরাসের রূপ পরিবর্তিত দুটি ধরনের সংক্রমণ অসম্ভব নয় বলে সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
একই সঙ্গে করোনার আলফা ও বেটা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণে এক নারীর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর এ সতর্কতা জারি করা হয়।
আলফা ভ্যারিয়েন্ট যুক্তরাজ্যে এবং বেটা ভ্যারিয়েন্ট সাউথ আফ্রিকায় প্রথম শনাক্ত হয়।
বিবিসির প্রতিবেদনে জানানো হয়, চলতি বছরের মার্চ মাসে ভ্যারিয়েন্ট দুটিতে আক্রান্ত নারীর মৃত্যুর ঘটনাটি বেলজিয়ামের। তার বয়স ছিল ৯০ বছর। তিনি করোনার টিকা নেননি।
তার চিকিৎসকদের ধারণা, দুইজন ব্যক্তির মাধ্যমে দুই ধরনের করোনাভাইরাসের সংস্পর্শে যান ওই নারী।
এ ধরনের ঘটনার খবর এটিই প্রথম। বিরল হলেও এমন ঘটনা আরও ঘটছে বলেও মত চিকিৎসকদের।
ক্লিনিক্যাল মাইক্রোবায়োলজি ও সংক্রামক রোগবিষয়ক ইউরোপীয় কংগ্রেসের চলতি বছরের অধিবেশনে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে একসঙ্গে দুই ধরনের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত দুই ব্যক্তির তথ্য প্রকাশ করেন ব্রাজিলের বিজ্ঞানীরা। এদের মধ্যে একজনের দেহে গামা ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়।
করোনাভাইরাসের যে ভ্যারিয়েন্টগুলো অধিক সংক্রামক বলে দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে, তার অন্যতম গামা।
অন্যদিকে পর্তুগালে সম্প্রতি করোনার চিকিৎসা নেয়া ১৭ বছর বয়সী এক কিশোরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখছেন গবেষকরা। তার দেহেও দুই ধরনের করোনার সংক্রমণ হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এখনও তার মধ্যে করোনার নতুন কিছু উপসর্গ বিদ্যমান।
অধিক সংক্রামক বলে করোনাভাইরাসের সবচেয়ে উদ্বেগজনক নতুন ভ্যারিয়েন্ট হলো আলফা ও বেটা, যে দুটিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে বেলজিয়ামের ৯০ বছর বয়সী ওই নারীর। করোনার এ দুটি ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে এখনও গবেষণা করছেন বিজ্ঞানীরা।
মৃদু শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ওই নারী। কিন্তু পরে তার শ্বাসজনিত জটিলতা তীব্র রূপ নেয়।
হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সময় তার নমুনা পরীক্ষায় করোনা শনাক্ত হয়। পরে নমুনা বিশ্লেষণের পর মহামারি আকারে ছড়ানো ভাইরাসটির ভিন্ন দুটি রূপ পরিবর্তিত সংস্করণ চিহ্নিত করেন গবেষকরা।
প্রধান গবেষক বেলজিয়ামের আলস্টে ওএলভি হাসপাতালের ড. অ্যান ভানকিরবার্গেন বলেন, ‘বেলজিয়ামে আলফা ও বেটা ভ্যারিয়েন্ট যখন খুব ছড়াচ্ছিল, তখনই এই নারী দুইজন ব্যক্তির মাধ্যমে ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের দুই করোনায় আক্রান্ত হন বলে মনে হচ্ছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে তিনি কীভাবে করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন, তা আমরা জানতে পারিনি।
ভানকিরবার্গেন বলেন, ‘তিনি একা থাকতেন। তবে তাকে দেখাশোনার জন্য অনেক সহযোগী তার বাড়িতে আসা-যাওয়া করত।
‘হাসপাতালে ভর্তি হলেও ওই রোগীর শারীরিক অবস্থার অবনতি খুব দ্রুত ঘটেছে। একই সঙ্গে করোনার দুটি উদ্বেগজনক ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ এর কারণ কি না, তা বলা খুব মুশকিল।’
দ্রুত বংশবিস্তারের কারণে ভাইরাস অব্যাহতভাবে রূপ পরিবর্তনের মাধ্যমে বিকশিত হতে সক্ষম। এভাবেই ভাইরাসের নতুন প্রজাতি বা ভ্যারিয়েন্টের জন্ম হয়।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের মাধ্যমে করোনাভাইরাস আরও শক্তিশালী হয়ে উঠছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যেমন এর দ্রুত রূপ পরিবর্তন সক্ষমতার কারণে এটি টিকা গ্রহণ বা আগে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ফলে শরীরে তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডিকে ফাঁকি দিতে পারছে।
এ রকম বেশ কয়েকটি উদ্বেগজনক ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে গবেষণা করছেন বিজ্ঞানীরা।
বর্তমানে যুক্তরাজ্যে সবচেয়ে বেশি গতিতে ছড়াচ্ছে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট, যেটি প্রথম শনাক্ত হয়েছিল ভারতে।
তবে বিদ্যমান টিকা ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে সুরক্ষা নিশ্চিতে সক্ষম বলে আশাবাদী বিজ্ঞানীরা।
ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্টের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে নতুন টিকা তৈরিতে গবেষণা চলছে এখন। এসব টিকাকে বুস্টার শট হিসেবে ব্যবহার করা হতে পারে।