করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ও মোকাবিলায় মাঠ পর্যায়ে জনসচেতনতা সৃষ্টি এবং প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের জন্য ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে নির্বাচিত জনপ্রতিধিদের নেতৃত্বে কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে শনিবার কোভিড-১৯ এর দ্বিতীয় ঢেউ প্রতিরোধ ও মোকাবিলায় মাঠ পর্যায়ে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে এক জুম সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, জনগণের মধ্যে স্বাস্থ্যসচেতনতা সৃষ্টি, চিকিৎসা বিষয়ক পরামর্শ ও সহায়তা প্রদান, ভ্যাকসিন প্রদানে উদ্বুদ্ধকরণ ও সহায়তা প্রদানের জন্য কাজ করবে এই কমিটি।
প্রস্তাবিত কমিটিতে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, স্বাস্থ্য, যুব, কৃষি, আনসার ভিডিপির মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা, মসজিদের ইমাম, এনজিও প্রতিনিধি, হাট-বাজার সমিতির নেতৃবৃন্দসহ সংশ্লিষ্টদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
জুম সভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব লোকমান হোসেন মিয়া, জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দীন, এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ, তথ্যসচিব মো. মকবুল হোসেন, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব মো. আলী নূরসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
দেশে করোনা প্রথম শনাক্ত হয় গত বছরের ৮ মার্চ। উদ্বেগ থাকলেও প্রথম কয়েক মাসে ভাইরাসটি খুব একটা ছড়ায়নি।
তবে মে মাস থেকে ব্যাপকভাবে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়তে থাকে। তখন আক্রান্তের হটস্পট ছিল ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রামের মতো জনবহুল শহরগুলো।
গত শীতে দ্বিতীয় ঢেউ আসার উদ্বেগ থাকলেও সংক্রমণ ও মৃত্যু- দুটোই কমে আসে। এক পর্যায়ে পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৩ শতাংশের নিচে নেমে যায়, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিবেচনায় নিয়ন্ত্রিত পরিস্থিতি।
তবে গত মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে শনাক্তের হার আবার বাড়তে থাকে। দ্বিতীয় ঢেউ নিশ্চিত হওয়ার পর এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে ভারতে করোনার নতুন ধরনের কথা জানা যায়। এই ভ্যারিয়েন্ট আক্রান্তদের দ্রুত অসুস্থ করে দেয়, তাদের অক্সিজেন লাগে বেশি। ছড়ায়ও দ্রুত, তাই মৃত্যুর সংখ্যাও বেশি।
বাংলাদেশে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে সীমান্ত বন্ধ করে দেয়া হয় ২৪ এপ্রিল। কিন্তু বিধিনিষেধ না মানায় ভাইরাসের প্রকোপ ঠেকানো যায়নি।
প্রথমে ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট রাজশাহী অঞ্চলে ব্যাপক মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। পরে তা ছড়ায় খুলনা বিভাগে। সেই সঙ্গে ঢাকা বিভাগের বৃহত্তর ফরিদপুর অঞ্চল আর টাঙ্গাইল এলাকাতেও সংক্রমণ ঘটে ভাইরাসটির।
পরিস্থিতি ভয়াবহ হওয়ায় গত ২২ জুন থেকে ঢাকাকে ঘিরে রাখা সাত জেলায় যান চলাচল বন্ধ করে রাজধানীকে বিচ্ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।
এতেও কাজ না হওয়ায় ১ জুলাই থেকে শুরু হয় শাটডাউন। সরকার জনগণের চলাচল রোধে এবার যে কঠোর, তার প্রমাণ মেলে সেনাবাহিনী মোতায়েনেই।
অকারণে বাড়ির বাইরে আসায় প্রতিদিনই বিপুল পরিমাণ জরিমানা আদায় করা হচ্ছে; কেবল ঢাকায় আটক করা হচ্ছে কয়েক শ মানুষকে। শাটডাউন প্রথমে সাত দিনের জন্য দেয়া হলেও পরে তা বাড়ানো হয়েছে আরও সাত দিন, যা চলবে ১৪ জুলাই রাত পর্যন্ত।