দেশে করোনাভাইরাসের বিস্তার বিপজ্জনক রূপ নেয়ার পরিপ্রেক্ষিতে রাজধানীতে ১২০০ শয্যার ফিল্ড হাসপাতাল স্থাপন করা হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কনভেশন সেন্টারে এ হাসপাতাল দ্রুতই স্থাপন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
শনিবার দুপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কনভেশন সেন্টার পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
জাহিদ মালেক বলেন, ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা শুক্রবার সারা দিন ঘুরে দেখেছেন রাজধানীর কোন কোন স্থানে ফিল্ড হাসপাতাল করা যায়। তার মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কনভেশন সেন্টারে আমরা ১০০০ থেকে ১২০০ শয্যার হাসপাতাল দ্রুত সময়ের মধ্যেই করতে পারব।
‘এই হাসপাতালটি আমি মনে করি বাংলাদেশের সবচেয়ে ভালো করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল হিসেবে তৈরি হবে। এটি ফাইভ স্টার স্ট্যান্ডার্ড বিল্ডিং। এখানে হাসপাতালে সব ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে। শুধু অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারলেই হবে। সব সুযোগ-সুবিধা এখানে থাকবে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা মোতাবেক আমাদের চেষ্টা থাকবে যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালটি চালু করা। ফিল্ড হাসপাতালে চার শতাধিক আইসিইউ স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। আরও চার শ বেডের আইসিইউ সমতুল্য এসডিইউ স্থাপন করা হবে। বাকি শয্যাগুলোতেও অক্সিজেনের সুব্যবস্থা থাকবে।’
সারা দেশে রোগীর চাপ বেড়েছে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বাইরের রোগী এখন ঢাকাতে চলে আসছে। সে কারণে ঢাকাতে চাপ বেড়েছে। বিশেষ করে খুলনা, রাজশাহী, সিলেটে, রংপুরসহ প্রায় প্রতিটি বিভাগে করোনা রোগীর চাপ বেড়েছে। সে কারণে জেলা পর্যায়ে নতুন করে করোনা বিশেষায়িত হাসপাতাল বাড়ানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বর্তমান সংকট সামলাতে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে আড়াই হাজার কনসেনট্রেটেড অক্সিজেন সুবিধা বাড়ানো হয়েছে। দেয়া হয়েছে ১৮ শ হাই ফ্লো ন্যাসাল ক্যানুলা।
‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশনা দিয়েছেন, শুধু শয্যা বাড়ালেই চলবে না, সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে আমাদের। এ ছাড়া হাসপাতালের বেড বাড়ানোর একটা সীমাবদ্ধতা আছে। আমরা তো গোটা দেশকে হাসপাতাল বানাতে পারব না। আর সব জায়গায় হাসপাতাল স্থাপনের জায়গাও পাব না। হাসপাতালে শুধু শয্যা বানালেই হবে না, জনবলও নিয়োগ দিতে হবে।’
উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানছে না বলেই সংক্রমণ কমছে না। মানুষ মাস্ক পড়েনা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখছে না। করোনা রোগী বেড়েছে ৮ গুন। রোগীরা হাসপাতালে আসছে ৭০ ভাগ ফুসফুস সংক্রমিত হয়ে। তাদের চিকিৎসা দেয়া কঠিন হয়ে পড়ছে।'
টিকা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘ভ্যাকসিনের আর অভাব থাকবে না। দেশের ৮০ ভাগ মানুষকে টিকা দেয়ার লক্ষ্য রয়েছে। বিভিন্ন দেশ থেকে টিকা সংগ্রহের পাশাপাশি দেশেই উৎপাদনের চেষ্টা চলছে। টিকা উৎপাদনে বেসরকারি খাত তৎপরতা শুরু করেছে, নীতিগত সহায়তা দিচ্ছে সরকার। গোপালগঞ্জে সরকারিভাবে একটি প্ল্যান্ট স্থাপনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।’
এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ডা. একেএম মোশাররফ হোসেনসহ স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা।