ফাইজার-বায়োএনটেক ও মডার্নার করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা নেয়ার পর হৃৎপিণ্ডের জটিলতা নিশ্চিত করেছে ইউরোপের ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইউরোপিয়ান মেডিসিন্স এজেন্সি (ইএমএ)।
জানিয়েছে, টিকা নেয়ার পর হৃৎপিণ্ডের জটিলতায় আক্রান্ত হয়ে পাঁচজনের মৃত্যুও হয়েছে। তারা সবাই প্রবীণ এবং আগে থেকেই বিভিন্ন স্বাস্থ্য জটিলতায় ভুগছিলেন।
তবে টিকার এ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ‘অত্যন্ত বিরল’, বলছে ইএমএ। ফলে ঝুঁকি বিবেচনায় করোনার টিকা না নেয়ার সুযোগ নেই।
বিবিসির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, মূলত তরুণদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে এসব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। চিকিৎসক ও রোগীদের টিকা নেয়ার পর হৃদরোগ সংক্রান্ত উপসর্গ দেখা দিচ্ছে কি না, সে বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন স্বাস্থ্যবিদরা।
উপসর্গের মধ্যে আছে বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্টের অনুভূতি ও হৃৎকম্পন বেড়ে বা কমে যাওয়া। টিকা নেয়ার পর এ ধরনের কোনো উপসর্গ দেখা দিলেই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
টিকার সঙ্গে সম্পর্কিত দুই ধরনের হৃৎরোগ জটিলতা শনাক্ত করেছে ইএমএ। একটি হলো মায়োকার্ডিটিস, অর্থাৎ হৃৎপিণ্ডের পেশিতে প্রদাহ। আরেকটি হলো পেরিকার্ডিটিস, অর্থাৎ যে তরলে হৃৎপিণ্ডের অবস্থান- সেখানে প্রদাহ।
ইএমএর তথ্য অনুযায়ী, ফাইজার-বায়োএনটেকের প্রায় ১৮ কোটি ডোজ নেয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ১৪৫ জন মায়োকার্ডিটিস ও ১৩৮ জন পেরিকার্ডিটিসে আক্রান্ত হয়েছেন।
অপরদিকে মডার্নার ২ কোটি ডোজ নেয়া মানুষের মধ্যে ১৯ জন মায়োকার্ডিটিস ও ১৯ জন পেরিকার্ডিটিসে আক্রান্ত হয়েছেন।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে টিকা নেয়ার ১৪ দিনের মধ্যে উপসর্গ দেখা গেছে এবং সাধারণ চিকিৎসা ও বিশ্রাম নিয়ে অল্প সময়েই সেরে উঠেছেন রোগীরা।
এর আগে ফাইজার-বায়োএনটেক ও মডার্নার গবেষণালব্ধ করোনা টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় হৃৎপিণ্ডের বিরল জটিলতার বিষয়টি নিশ্চিত করে যুক্তরাষ্ট্র। বিষয়টি খতিয়ে দেখছে যুক্তরাজ্যও।
যুক্তরাজ্য ও ইউরোপে মায়োকার্ডিটিস ও পেরিকার্ডিটিসে করোনা টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে সরকারিভাবে তালিকাভুক্ত হতে যাচ্ছে।
কেবল মলিকিউলার রাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড বা এমআরএনএ প্রযুক্তিনির্ভর টিকার ক্ষেত্রেই এসব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। এই প্রযুক্তিতেই তৈরি ফাইজার-বায়োএনটেক ও মডার্নার করোনা টিকা।
অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা বা জনসন অ্যান্ড জনসনের ভিন্ন প্রযুক্তিনির্ভর টিকার ক্ষেত্রে এমন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। ভাইরাসের জিনগত পরিবর্তনের মাধ্যমে করোনার টিকা তৈরি করেছে এ দুটি প্রতিষ্ঠান।
তবে ক্যাপিলারি লিক সিনড্রোমের ইতিহাস আছে, এমন কাউকে জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকা না নেয়ার পরামর্শ দিয়েছে ইএমএ।
ক্যাপিলারি লিক সিনড্রোমও বেশ বিরল, কিন্তু গুরুতর রোগ। এ রোগে আক্রান্তদের দেহের রক্তনালী থেকে তরল প্লাজমা বেরিয়ে যায়।