গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা ও উপসর্গ নিয়ে কুষ্টিয়ায় ১৮ জন, রাজশাহীতে ১৪ জন ও ময়মনসিংহে ১২ জন মারা গেছেন। এ ছাড়া খুলনা ও চট্টগ্রাম বিভাগে টানা কয়েকদিন রেকর্ডের পর কিছুটা কমেছে শনাক্ত ও মৃত্যুহার।
কুষ্টিয়া
জেলা সদর হাসপাতালের করোনা ইউনিটে আরও ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।
শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে শনিবার সকাল ৮টার মধ্যে তাদের মৃত্যু হয়।
হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডের নার্স ইনচার্জ দীপ্তি রানী জানান, মৃতদের মধ্যে ১৫ জন করোনা আক্রান্ত ছিলেন। বাকি ৩ জনের মৃত্যু হয় উপর্সগ নিয়ে।
বর্তমানে হাসপাতালে ১৯২ জন করোনা পজিটিভ রোগী আর উপর্সগ নিয়ে ১০০ জন চিকিৎসা নিচ্ছেন। এক দিনে সুস্থ হয়েছেন ১০৪ জন।
জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় ৫৮৯টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৭৬ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়। শনাক্তের হার ২৯ দশমিক ৮৮ শতাংশ। এ পর্যন্ত জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়লো।
রাজশাহী
রাজশাহী বিভাগে করোনা ও উপসর্গ নিয়ে এক দিনে ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।
শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে শনিবার সকাল ৮টার মধ্যে তাদের মৃত্যু হয়। এর আগে বৃহস্পতিবার এখানে ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় মৃতদের মধ্যে ৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল। বাকি ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে উপসর্গ নিয়ে। এক দিনে মৃতদের মধ্যে ৫ জন নারী ও ৯ জন পুরুষ।
তাদের মধ্যে রাজশাহীর ৭ জন, নাটোরের ৪ জন, পাবনা, চুয়াডাঙ্গা ও জয়পুরহাটে একজন করে মারা গেছেন।
তিনি আরও জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় রামেকের করোনা ইউনিটে নতুন ভর্তি হয়েছেন ৬০ জন। এ সময় সুস্থ হয়ে ছাড়পত্র পেয়েছেন ২৬ জন।
বর্তমানে রামেক হাসপাতালে ৪৫৪টি করোনা ডেডিকেটেড শয্যার বিপরীতে ৫২২ জন রোগী ভর্তি আছেন।
ময়মনসিংহ
ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ২৪ ঘণ্টায় ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৬ জন করোনা শনাক্ত হয়ে ও বাকিরা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন।
হাসপাতালের করোনা ইউনিটের আবাসিক অফিসার (ফোকাল পার্সন) মহিউদ্দিন খান মুন শনিবার সকাল সাড়ে ৯টায় নিউজবাংলাকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে করোনা ইউনিটে ৪১৭ জন চিকিৎসা নিচ্ছেন। এর মধ্যে আইসিইউতে ভর্তি আছেন ২১ জন। নতুন করে ভর্তি হয়েছেন ৭৩ জন। এই সময়ের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৩৩ জন।
সিভিল সার্জন নজরুল ইসলাম জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৪২৯টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৫৪ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। জেলায় আক্রান্তের হার ৩৫ দশমিক ৮৯ শতাংশ।
খুলনা
এ বিভাগের তিন হাসপাতালে একদিনে আরও ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে খুলনা করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে ৬ জন, জেলা জেনারেল হাসপাতালে ১ জন, গাজী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৩ জন মারা গেছেন।
শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত হাসপাতাল গুলোতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তারা মারা যান। এই সময়ের মধ্যে আবু নাসের হাসপাতালে আজ কেউ মারা যাননি।
ডেডিকেটেড হাসপাতালের আবাসিক অফিসার (ফোকাল পার্সন) সুহাস রঞ্জন হালদার জানান, এ হাসপাতালে মৃতদের মধ্যে করোনা নিয়ে ৩ জন ও উপসর্গ নিয়ে ৩ জন মারা গেছেন। মৃতদের মধ্যে খুলনা, বাগেরহাট ও নড়াইলে ১ জন করে শনাক্ত হয়ে মারা যান।
এ হাসপাতালে ১৮৮ জন রোগী ভর্তি রয়েছে। যার মধ্যে রেড জোনে ১১৫ জন, ইয়ালো জোনে ৩৩ জন, এইচডিইউতে ২০ ও আইসিইউতে ১৯ জন। নতুন করে ভর্তি হয়েছেন ৩১ জন রোগী। সুস্থ হয়েছেন ২৫ জন।
গাজী মেডিক্যালের স্বত্বাধিকারী গাজী মিজানুর রহমান জানান, এই হাসপাতালে মৃত ৩ জনের মধ্য খুলনার ২ ও চুয়াডাঙ্গায় ১ জন।
হাসপাতালে ১৩০ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। এর মধ্যে আইসিইউতে ৭ ও এইচডিইউতে ১১ জন। এক দিনে নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন ২১ জন। সুস্থ হয়ে ফিরেছেন ১৭ জন।
জেলা জেনারেল হাসপাতালের মুখপাত্র আবু রাশেদ জানান, এ হাসপাতালে ১ জনের মৃত্যু হয়েছে। তার বাড়ি খুলনায়।
এ হাসপাতালে মোট রোগী রয়েছে ৭৬ জন। নতুন ভর্তি হয়েছে ১৫ জন; সুস্থ হয়েছেন ৮ জন।
আবু নাসের হাসপাতালের মুখপাত্র প্রকাশ দেব নাথ জানান, এ হাসপাতালে আজ কোন মৃত্যু নেই। তবে ৪৪ জন রোগী ভর্তি রয়েছে। যার মধ্যে আইসিইউতে আছেন ১০ জন। এখানে নতুন ভর্তি হয়েছেন ৫ জন; সুস্থ হয়েছেন ৪ জন।
চট্টগ্রাম
টানা কয়েকদিন রেকর্ড সংখ্যক করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্তের পর অবশেষে চট্টগ্রাম বিভাগে কমেছে নতুন আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা।
গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৬০৩ জন। এই সময়ের মধ্যে মারা গেছেন ৩ জন। তাদের মধ্যে দুইজন মহানগরের এবং একজন গ্রামের বাসিন্দা।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে শনিবার এসব তথ্য জানা যায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামের ১০টি ও কক্সবাজারের একটি ল্যাবে ১ হাজার ৯০৭টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে ৬০৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।
এখন পর্যন্ত জেলায় আক্রান্ত হয়েছেন ৬৪ হাজার ২৯৯ জন। মোট মারা গেছেন ৭৫৭ জন।
নতুন আক্রান্তদের মধ্যে ৪৩৬ জন মহানগরের এবং ১৩৬ জন বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা।
গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামের ১৪টি উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৩৬ জন আক্রান্ত হয়েছেন মিরসরাই উপজেলায়।
এ ছাড়া লোহাগাড়ায় ১ জন, সাতকানিয়ায় ১ জন, পটিয়ায় ২ জন, বোয়ালখালীতে ১০ জন, রাঙ্গুনিয়ায় ১৯ জন, রাউজানে ২৮ জন, ফটিকছড়িতে ২০ জন, হাটহাজারীতে ২০ জন, সীতাকুণ্ডে ২৬ জন ও সন্দ্বীপে ৪ জন আক্রান্ত হয়েছেন।
এ সময় বাঁশখালী, আনোয়ারা ও চন্দনাইশে নতুন করে কেউ করোনায় আক্রান্ত হননি।
কক্সবাজার
গত ২৪ ঘণ্টায় কক্সবাজারে ৭৬৭ জনের নমুনা পরীক্ষায় রেকর্ড ২০৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। তবে এই সময়ের মধ্যে কেউ মারা যাননি।
শুক্রবার রাতে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, আক্রান্তরদর মধ্যে ৬০ রোহিঙ্গাসহ সদর উপজেলার ৭৩ জন, রামুর ৫ জন, উখিয়ার ২৭ জন, টেকনাফের ১৭ জন, চকরিয়ার ১ জন, পেকুয়ার ২ জন, কুতুবদিয়ার ১জন, বান্দরবানের একজন ও চট্টগ্রামের বাঁশখালীর ৩ জন। শনাক্তের হার ২৪ শতাংশের উপরে। এর আগে বৃহস্পতিবার জেলায় শনাক্তের হার ছিল ২৩ শতাংশ।
এখন পর্যন্ত জেলায় করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ১৩৫ জনের। আর জেলায় এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ১৩ হাজার ৩৪৭ জন। সুস্থ হয়েছেন ১১ হাজার ৪৮০ জন।
জেলা সিভিল সার্জন মাহবুবুর রহমান নিউজবাংলাকে জানান, করোনা সংক্রমান বেড়ে যাওয়ায় কক্সবাজার সদর হাসপাতালের করোনা ইউনিটে আরও ২১ শয্যা বাড়িয়ে ১৪০ করা হয়েছে।
বর্তমানে সদর হাসপাতালে করোনা ইউনিটের সবগুলো শয্যায় রোগী ভর্তি।