বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

দৈনিক মৃত্যু ৩০০ ছাড়িয়ে যেতে পারে

  •    
  • ১০ জুলাই, ২০২১ ০৮:১৮

দেশে করোনার গতিপ্রকৃতি দেখে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, আগামী এক সপ্তাহ সংক্রমণ পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাবে। এক দিনে সংক্রমণ ১৩ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে এবং মৃত্যু ৩০০ ছাড়িয়ে যেতে পারে। এদের মধ্যে যদি দিনে ২ হাজারের মতো লোককেও হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়, পুরো স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভেঙে পড়বে।

দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতি দ্রুত অবনতির দিকে যাচ্ছে। সংক্রমণের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যু। প্রতিদিনই শনাক্ত ও মৃত্যুর রেকর্ড ভাঙছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ২১২ জনের মৃত্যু সংবাদ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

মার্চের মাঝামাঝি করোনা শনাক্তের হার যেখানে ২ শতাংশে নেমে এসেছিল, সেখানে জুনে সেটা লাফিয়ে ২৩ দশমিক ৮৬ শতাংশে পৌঁছায়। গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ৩০ দশমিক ৯৫ শতাংশ।

পরিস্থিতি কতটা খারাপ হতে পারে? স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ রকম পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে আগামী সপ্তাহের মধ্যে এক দিনে মৃত্যুর সংখ্যা ৩০০ ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে ।

উদ্বেগ প্রকাশ করে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, আগামী এক সপ্তাহ করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাবে। এক দিনে সংক্রমণ ১৩ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে এবং মৃত্যু ৩০০ ছাড়িয়ে যেতে পারে। এ ছাড়া সামনে ঈদযাত্রা নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলে পরিস্থিতি সামাল দেয়া কষ্টকর হবে।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চলতি মাসের মাঝামাঝি করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু চূড়ায় পৌঁছাবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বেনজির আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, এখন প্রতিদিন ১১ হাজারের ওপর মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। তাদের মধ্যে যদি ২ হাজারের মতো মানুষকেও হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হয়, স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা ভেঙে পড়বে।

সরকারের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মুশতাক হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘করোনাভাইরাসের সংক্রমণকাল দুই সপ্তাহ। যে দুই সপ্তাহের লকডাউন দেয়া হয়েছে, এই লকডাউনের ফলাফল পেতে আরও দুই সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হবে। এখন যাদের মধ্যে সংক্রমণ দেখা দিচ্ছে ও যাদের মৃত্যু ঘটছে, তারা জুলাইয়ের আগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তাদের লক্ষণগুলো এখন প্রকাশ পাচ্ছে।

‘এক সপ্তাহ পর করোনা সংক্রমণ স্থিতিশীল হতে পারে, যদি সরকার যে লকডাউন দিয়েছে, সেটা যথাযথ বাস্তবায়ন হয়। এখন যারা শনাক্ত হচ্ছেন, তাদের যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিত করতে না পারলে মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।’

আসন্ন ঈদে আবার গাদাগাদি করে মানুষ ঢাকাসহ বিভিন্ন শহর থেকে গ্রামে যাবে। লকডাউনের মধ্যেও মানুষ একইভাবে চলাচল করেছে, তার প্রভাব দেখার জন্য দুই থেকে তিন সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হবে। ঈদের পরও সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়তে পারে বলেও শঙ্কা এই বিশেষজ্ঞের।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, করোনা প্রথম শনাক্ত হয় গত বছরের ৮ মার্চ। উদ্বেগ থাকলেও প্রথম কয়েক মাসে ভাইরাসটি সেভাবে ছড়ায়নি। তবে মে মাস থেকে ব্যাপকভাবে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়তে থাকে। তখন আক্রান্তের হটস্পট ছিল ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামের মতো জনবহুল শহরগুলো।

গত শীতে দ্বিতীয় ঢেউ আসার উদ্বেগ থাকলেও সংক্রমণ ও মৃত্যু দুটোই কমে আসে। একপর্যায়ে পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৩ শতাংশের নিচে নেমে যায়, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিবেচনায় মহামারি নয়, নিয়ন্ত্রিত পরিস্থিতি।

তবে গত মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে শনাক্তের হার আবার বাড়তে থাকে। দ্বিতীয় ঢেউ নিশ্চিত হওয়ার পর এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট নামে করোনার নতুন ধরনের কথা জানা যায় ভারতে। সেই ভ্যারিয়েন্ট শুধু দ্রুত সংক্রমিতই হয় না, আক্রান্তদের দ্রুত অসুস্থ করে দেয়, তাদের অক্সিজেন লাগে বেশি। তাই মৃত্যুর সংখ্যাও বেশি।

বাংলাদেশে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে সীমান্ত বন্ধ করে দেয়া হয় ২৪ এপ্রিল। কিন্তু বিধিনিষেধ না মানায় ভাইরাসের প্রকোপ ঠেকানো যায়নি।

প্রথমে ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট রাজশাহী অঞ্চলে ব্যাপক মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। পরে তা ছড়ায় খুলনা বিভাগে। সেই সঙ্গে ঢাকা বিভাগের বৃহত্তর ফরিদপুর অঞ্চল আর টাঙ্গাইল এলাকাতেও সংক্রমণ ঘটে ভাইরাসটির। পরিস্থিতি ভয়াবহ হওয়ায় ২২ জুন থেকে ঢাকাকে ঘিরে রাখা সাত জেলায় যান চলাচল বন্ধ করে রাজধানীকে বিচ্ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এতেও কাজ না হওয়ায় ১ জুলাই থেকে শুরু হয় শাটডাউন।

সরকার জনগণের চলাচল রোধে এবার যে কঠোর, তার প্রমাণ মেলে সেনাবাহিনী মোতায়েনে। অকারণে বাড়ির বাইরে আসায় প্রতিদিনই বিপুল পরিমাণ জরিমানা আদায় করা হচ্ছে; কেবল ঢাকায় আটক করা হচ্ছে কয়েক শ মানুষকে। শাটডাউন প্রথমে সাত দিনের জন্য দেয়া হলেও পরে তা বাড়ানো হয়েছে আরও সাত দিন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে শনাক্তের হার কমে ২ শতাংশের কাছাকাছি পৌঁছায়। মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রতি উদাসীনতা তৈরি হয় ফলে মার্চ থেকে সংক্রমণ ও মৃত্যু আবার বাড়তে থাকে। এপ্রিলের মাঝামাঝি সংক্রমণ চূড়ায় পৌঁছায়।

এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়ার কারণ যাথাযথ লকডাউন বাস্তবায়ন না হওয়া এবং আক্রান্ত রোগীরা চিকিৎসা না পাওয়া। যদি চলমান লকডাউন কার্যকর করা যায় এবং হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের যথাযথ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা যায়, তাহলে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসবে।

এ বিভাগের আরো খবর