করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকার ‘বুস্টার শট’ হিসেবে তৃতীয় ডোজ আনতে চায় ফাইজার-বায়োএনটেক। অনুমোদনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থার (এফডিএ) ও রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংস্থার (সিডিসি) কাছে আবেদন করবে প্রতিষ্ঠানটি।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়, আগামী মাসের মধ্যে তৃতীয় ডোজে অনুমোদন পেতে তৎপরতা শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ফার্মাসিউটিক্যাল প্রতিষ্ঠানটি।
ফাইজারের শীর্ষ বিজ্ঞানী মিকাইল ডোলস্টেন বৃহস্পতিবার জানান, বর্তমানে দুই ডোজের টিকা সম্পন্নের ছয় মাস পর করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায় বলে প্রমাণ মিলেছে। করোনার রূপ পরিবর্তিত অধিক ছোঁয়াচে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণকেন্দ্রিক তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতেও এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
জার্মানির বায়োটেকনোলজি প্রতিষ্ঠান বায়োএনটেকের সঙ্গে যৌথভাবে করোনা প্রতিরোধী টিকা ‘কোমির্নাটি’ আবিষ্কার ও উৎপাদন করছে ফাইজার।
তবে এফডিএ ও সিডিসির পক্ষ থেকে যৌথ বিবৃতিতে জানানো হয়, দুই ডোজ টিকা নেয়া সম্পন্ন করা আমেরিকান নাগরিকদের আপাতত বুস্টার শট দেয়ার প্রয়োজন নেই।
অনেক গবেষকই করোনা প্রতিরোধী টিকার বুস্টার শটের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
তবে ফাইজারের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডোলস্টেন জানিয়েছেন, সম্প্রতি ইসরায়েলে টিকার কার্যকারিতা বেশ নিম্নমুখী। দেশটিতে চলতি বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে যারা টিকা নিয়েছেন, মূলত তারাই এখন করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন।
ইসরায়েলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, জুনে করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধ ও উপসর্গহীন রোগ হ্রাসে টিকার কার্যকারিতা কমেছে ৬৪ শতাংশ।
এক সাক্ষাৎকারে ডোলস্টেন বলেন, ‘ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ঠেকাতে ফাইজারের টিকা উচ্চ মাত্রায় সক্রিয়। কিন্তু দ্বিতীয় ডোজ নেয়ার ছয় মাস পর দেহে অ্যান্টিবডি কমতে শুরু করে বলে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়তে থাকে।
‘এমনটা যে ঘটতে পারে, তা আগেই ধারণা করেছিলাম আমরা। এখন তথ্য-প্রমাণ পেয়েছি।’
এ বিষয়ে ইসরায়েলের করোনা সম্পর্কিত তথ্য পুরোটা এখনও প্রকাশ করেনি ফাইজার। তবে শিগগিরই বিস্তারিত জানা যাবে বলে জানিয়েছে।
ডোলস্টেন বলেন, ‘তথ্যের পরিধি খুব একটা বড় না। কিন্তু রোগ ছড়ানোর যে প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, তা সঠিক বলে মনে করছি।
‘যেহেতু ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট এখন পর্যন্ত সবচেয়ে সংক্রামক ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের ও রূপ পরিবর্তিত করোনা, দ্বিতীয় ডোজ নেয়ার ছয় মাস পর এটি মানবদেহে আবার রোগ তৈরিতে সক্ষম। মৃদু উপসর্গও দেখা যায় এ সময়।’
যৌথ বিবৃতিতে এফডিএ ও সিডিসি বলছে, ‘বুস্টার শটের প্রয়োজন হলে এবং বিজ্ঞানীরা এ বিষয়ে তথ্যপ্রমাণ উপস্থাপন করলে তৃতীয় ডোজ দিতে আমরা প্রস্তুত।’
যুক্তরাষ্ট্রে ফাইজারের নিজস্ব তথ্যে দেখা গেছে, ৮০ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ নেয়ার ছয় মাস পর টিকার কার্যকারিতা কমছে।
ডোলস্টেন জানান, ইসরায়েল ও যুক্তরাজ্য থেকে প্রাপ্ত তথ্যে অ্যান্টিবডি কমতে দেখা গেলেও গুরুতর উপসর্গ ঠেকাতে টিকার কার্যকারিতা এখনও ৯৫ শতাংশের বেশি।
গত বছর ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকাটি করোনার সব ধরনের উপসর্গ ঠেকাতে ৯৫ শতাংশ কার্যকর বলে জানা গিয়েছিল।
ডোলস্টেন জানান, তৃতীয় বুস্টার ডোজে দ্বিতীয় ডোজের তুলনায় পাঁচ থেকে ১০ গুণ অ্যান্টিবডি তৈরি হয় দেহে। ফলে তৃতীয় ডোজেই করোনার বিরুদ্ধে সুরক্ষা নিশ্চিত হবে বলে মনে করছেন তারা।
ইউরোপসহ বিভিন্ন অঞ্চলে বুস্টার ডোজ দেয়া নিয়ে এরই মধ্যে আলোচনা শুরু করেছে ফাইজার। যুক্তরাষ্ট্রে অনুমোদনের আগেই অন্যান্য অঞ্চলে তৃতীয় ডোজ দেয়া শুরু হতে পারে।
মূলত প্রবীণ জনগোষ্ঠীর জন্য তৃতীয় ডোজ বেশি জরুরি বলে মনে করা হচ্ছে।
খুব শিগগিরই ১০ হাজার মানুষকে নিয়ে তৃতীয় ডোজের পরীক্ষা শুরু করবে ফাইজার, যা চলবে এ বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত।
করোনা ঠেকাতে মাথাপিছু দুই ডোজ হিসাবে চলতি বছর ৩০০ ও আগামী বছর ৪০০ কোটি ডোজ টিকা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছিল ফাইজার। তৃতীয় ডোজ দেয়া হলে উৎপাদন কী পরিমাণ ফাইজার বাড়াতে পারবে, সে বিষয়টি অনিশ্চিত।
করোনাভাইরাসের টিকা আগামী কয়েক বছর যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্বের বড় অংশ হয়ে থাকবে বলে আশাবাদী ফাইজার। চলতি বছরই দুই হাজার ৬০০ কোটি ডলার আয়ের আভাস দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত তথ্যবিষয়ক প্রতিষ্ঠান ইকভিয়া হোল্ডিংস জানিয়েছে, ২০২৫ সালের মধ্যে করোনাভাইরাসের টিকা আর বুস্টার শটের জন্য বৈশ্বিক ব্যয়ের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়াতে পারে প্রায় ১৬ হাজার কোটি ডলারে।