করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আর মৃত্যু নিয়ে ভয়ঙ্কর খারাপ অবস্থা পার করছে রাজশাহী। শহর ছাড়াও গ্রামে গ্রামে ছড়িয়েছে করোনা। লকডাউনের মাঝেও প্রতিদিনই বাড়ছে সংক্রমণ।
রামেক হাসপাতালে মৃত্যুর ঘটনাও থামছেনা। রাজশাহী সিভিল সার্জন অফিসের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, করোনা শুরুর পর থেকে গত ১৫ মাসে রাজশাহীতে যতজন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, তার প্রায় সমান আক্রান্ত হয়েছেন গত এক মাসেই। এই সময়ে মৃত্যুর সংখ্যাও বেশি।
জেলা সিভিল সার্জন অফিসের তথ্য মতে, রাজশাহীতে গত বছরের মার্চেই প্রথমবারের মতো করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে। ওই সময় দিন দিন করোনা সংক্রমণ বাড়লেও বছর শেষে সেটি কমতে থাকে। এ বছরের ১৫ মার্চ জেলায় করোনা রোগীর সংখ্যা শূন্য হয়ে যায়। তবে এরপর থেকে আবারও করোনার ঊর্ধ্বমুখী যাত্রা আর থামানো যাচ্ছে না।
এ বছরের মে মাস থেকে ভয়ঙ্কর রূপ নেয় রাজশাহীর করোনা পরিস্থিতি। করোনা সংক্রমন শুরুর পর থেকে মে মাস পর্যন্ত ১৫ মাসে রাজশাহী জেলায় করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৯ হাজার ১৪ জনে। কিন্তু ভয়ঙ্কররূপে সংক্রমন বাড়ে জুন মাস জুড়ে।
এক মাসেই এক বছরের সমান করোনা রোগী বেড়ে যায়। ১ জুলাই এর তথ্য অনুযায়ী, রাজশাহী জেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৬০৪ জনে। শুধু জুন মাসেই করোনা শনাক্ত হয়েছে ৮ হাজার ৫৯০ জনের।
জেলাতে এই মাসে মৃত্যুও বেড়েছে অস্বাভাবিক গতিতে। করোনার শুরু থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত রাজশাহী জেলায় করোনায় মোট মৃত্যুর সংখ্যা ১৬০ জন। এর মধ্যে গত মে মাস পর্যন্ত ১৫ মাসে জেলায় মৃত্যু হয় ৮৬ জনের। আর শুধু জুন মাসেই মৃত্যু যোগ হয় আরও ৭৪ জন।
রাজশাহী জেলা সিভিল সার্জন ডা. কাউয়ুম তালুকদার বলেন, ‘আমাদের এখানে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট আছে। এটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। আমাদের জুন মাসে ৩৯ হাজার ১৮১টি নমুনা পরীক্ষা করে ৮ হাজার ৫৯০ জনের পজেটিভ আসে। মে মাসে ৭ হাজার ২৬৩টি নমুনা পরীক্ষা করে ১ হাজার ২৯৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়। এপ্রিল মাসে ৫ হাজার ৩৮২টি নমুনা পরীক্ষা করে ১ হাজার ২০৭টি পজিটিভ আসে। আমাদের যত বেশি নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে তত বেশি শনাক্ত হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘শতাংশ হিসেবে চিন্তা করলে এটি ঠিকই আছে। আমাদের এপ্রিল মাসে শনাক্তের হার ১৭ দশমিক ৮৯। মে মাসে শনাক্তের হার ২২ দশশিক ৪৩ এবং জুন মাসে ২১ দশমিক ৯২ শতাংশ শনাক্ত হয়। মূলত টেস্টের কারণেই সংখ্যাটি বেশি হচ্ছে। তবে হার বেশি হচ্ছে না।
রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাবিবুল আহসান তালুকদার বলেন, ‘আমাদের এখানে এপ্রিল মাসেই ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়। রোগী বাড়ছে। ডেল্টার সংক্রমণ বেশি। মানুষ সচেতন হচ্ছে। এ কারণে করোনা পরীক্ষা বেড়ে গেছে। শনাক্ত সংখ্যাও বাড়ছে।