বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

শাটডাউনেও লাফিয়ে বাড়ছে মৃত্যু, শনাক্ত, শতকরা হার

  •    
  • ৭ জুলাই, ২০২১ ২৩:২১

শয্যা আর আইসিইউর মতোই অক্সিজেনের সরবরাহও বড় শহরকেন্দ্রিক। মফস্বলের হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন ব্যবস্থা গড়ে তোলা যায়নি। আর গ্রামের হাসপাতালে চিকিৎসক না থাকার সমস্যারও যেন কোনো সমাধান নেই।

করোনার বিস্তার ঠেকাতে গত এপ্রিলে যখন লকডাউন দেয়া হয়, সে সময় পরিস্থিতির দৃশ্যমান অগ্রগতি ছিল দুই সপ্তাহে। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন।

শাটডাউন নামে পরিচিতি পাওয়া বিধিনিষেধে এবার অন্যান্য বারের তুলনায় মানুষের চলাচল সীমিত। কিন্তু ভাইরাস ছড়াচ্ছে ব্যাপকভাবে। শনাক্তের সংখ্যা, শতকরা হার প্রতিদিন যেমন বেড়েই চলেছে, তেমনি বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা।

করোনার ইতালীয় ধরনের পর যুক্তরাজ্য ও সাউথ আফ্রিকান ধরনের তুলনায় ভীতি জাগানিয়া ভারতীয় ধরন বা ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট যেমন ছড়াচ্ছে বেশি, তেমনি মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। কিন্তু এই পরিস্থিতিতেও স্বাস্থ্যবিধি মানতে মানুষের মধ্যে অনীহা স্পষ্ট।

আর করোনার প্রথম ঢেউ বা দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রথম দিকে বড় শহর এলাকায় রোগীর সংখ্যা বেশি হলেও এবার আক্রান্ত হচ্ছে মফস্বল বা গ্রামের মানুষ।

পরিস্থিতি নিয়ে শঙ্কিত খোদ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে মুখপাত্র নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘লকডাউন বা বিধিনিষেধ অমান্য করার কারণে রোগীর সংখ্যা যদি অস্বাভাবিক বেড়ে যায়, তাহলে আমরা আবারও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে যাব।’

গত বছর দেশে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ার পর দেশের হাসপাতালে চিকিৎসাসেবার অপ্রতুলতা, শয্যা, বিশেষ করে অক্সিজেন সরবরাহে অবকাঠামোর ঘাটতি আর নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র বা আইসিইউর অভাবের বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

এই এক বছরে শয্যা বা আইসিইউ যত বাড়ানো হয়েছে, তার বেশির ভাগ প্রধান শহরগুলোতে। মফস্বলে শয্যা পাঠালেও বিশেষজ্ঞের অভাব বা টেকনিশিয়ান না থাকায় আইসিইউ ইউনিটগুলো চালু করা যায়নি। সেই সঙ্গে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করা যায়নি।

এরই মধ্যে সাতক্ষীরা, বগুড়া, কুষ্টিয়ায় পর্যাপ্ত অক্সিজেনের অভাবে রোগীর মৃত্যুর খবর এসেছে গণমাধ্যমে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, অক্সিজেনের চাহিদা মেটানোর মতো সক্ষমতা এখনও আছে। তবে সরবরাহ নিয়ে দুশ্চিন্তা রয়েই গেছে।

শয্যা আর আইসিইউর মতোই অক্সিজেনের সরবরাহও বড় শহরকেন্দ্রিক। মফস্বলের হাসপাতালে সেন্টাল অক্সিজেনব্যবস্থা গড়ে তোলা যায়নি। আর গ্রামের হাসপাতালে চিকিৎসক না থাকার সমস্যারও যেন কোনো সমাধান নেই।

ক্রমেই রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। একই সঙ্গে কমছে হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা। ছবি: নিউজবাংলা

এই পরিস্থিতিতে তোপের মুখে স্বাস্থ্যমন্ত্রী। কিন্তু পরিস্থিতি পাল্টাতে তার মন্ত্রণালয়ের দৃশ্যমান তৎপরতা নেই।

আর যে বিধিনিষেধ দেয়া হয়েছে, সেটিও সেভাবে কার্যকর হচ্ছে না বলে মনে করেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ লেলিন চৌধুরী। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে গেলে লকডাউন সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। অর্ধেক লকডাউন অর্ধেক খোলা রেখে করোনা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না। সবকিছু খোলা রেখে লকডাউন দেয়া মানে লকডাউনের সঙ্গে প্রহসন ছাড়া আর কিছুই নেই।’

বিজ্ঞানসম্মতভাবে লকডাউন বাস্তবায়ন হয়নি দাবি করে তিনি মানুষের মধ্যে উদাসীনতার বিষয়টি তুলে ধরেও আক্ষেপ করেন। সেই সঙ্গে সরকারের পর্যাপ্ত উদ্যোগ নেই বলেও মনে করেন তিনি।

এই চিকিৎসক বলেন, ‘মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মানানোর ও মাস্ক পরানোর জন্য প্রশাসনের কর্মসূচি দেখেছি। তবে বিনা মূল্যে মাস্ক দেয়ার কোনো কর্মসূচি দেখিনি। একই সঙ্গে জনগণ কেন মাস্ক পরে না, সে কারণ খোঁজার চেষ্টাও করি না। আমরা করোনা নিয়ন্ত্রণে প্রচুর কথা বলেছি। তবে অনেক কম কাজ করেছি। গত দেড় বছর জেলা শহরে আইসিইউ তৈরি করতে পারলাম না। অথচ জেলা শহরগুলো এখন করোনা রোগী বেশি বেড়েছে।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাশার খুরশীদ আলম বলেন, ‘আমাদের প্রস্তুতিরও সীমাবদ্ধতা রয়েছে, এটা আমাদের মানতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘রোগীর সংখ্যা যদি আমরা না কমাতে পারি, যতই প্রস্তুত থাকুন না কেন, ১৬ কোটি মানুষের দেশে আমরা কত বিছানা দেব? বিছানা দিয়েও সামাল দেয়া যাবে না। আপনারা দেখছেন, কঠোর লকডাউনের মধ্যে মানুষ কীভাবে বের হচ্ছে। লোকজন স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। এমন হতে থাকলে পরিস্থিতি খারাপ হবে।’

তিনি বলেন, ‘উপজেলার হাসপাতালগুলোতে আমরা শয্যা বাড়ানোর চেষ্টা করছি। অক্সিজেন সরবরাহ ঠিক রাখার চেষ্টা করছি।’

শাটডাউনের ছয় দিনে রোগী, মৃত্যু বেড়েছে লাফিয়ে লাফিয়ে

গত ১ জুলাই থেকে শাটডাউন শুরুর পরদিন ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ১৪৩ জন। এরপর তা বেড়ে ১৫৩ জন হয় গত ৪ জুলাই। ৫ জুলাই জানানো হয় ১৬৪ জনের মৃত্যুর তথ্য।

পরদিন মৃত্যু ছিল ১৬৩ জনের। আর বুধবার এক লাফে মৃত্যু ছাড়িয়ে যায় দুই শর ঘর। গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ২০১ জনের।

মৃত্যুর পাশাপাশি বাড়ছে শনাক্ত আর পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের শতকরা হার।

শাটডাউন কার্যকরে পথে পথে পুলিশ ও সেনাবাহিনী। ছবি: সাইফুল ইসলাম

১ জুলাই ৮ হাজার ৩০১ জন শনাক্তের কথা জানায় সরকার। আগের সেই ২৪ ঘণ্টায় যতজন পরীক্ষা করেছিলেন, তাদের মধ্যে শনাক্তের হার ২৫.৯০ শতাংশ।

৪ জুলাই সরকার জানায় ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হয়েছে মোট ৮ হাজার ৬৬১ জন। আর নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ২৮.৯৯ শতাংশ।

পরের দিন শনাক্তের সংখ্যা ছিল ৯ হাজার ৯৬৪ জন। আর শনাক্তের হার আরেকটু বেড়ে হয় ২৯.৩০ শতাংশ।

৬ জুলাই শনাক্তের সংখ্যা প্রথমবারের মতো ছাড়ায় ১০ হাজার। সেদিন আগের ২৪ ঘণ্টায় ১১ হাজার ৫২৫ জন শনাক্ত হয়। শতকরা হার ছিল ৩১.৪৬ শতাংশ।

আর ২০১ জনের মৃত্যুর দিন শনাক্ত হয় ১১ হাজার ১৬২ জন। শনাক্তের হার দাঁড়ায় ৩১.৩২ শতাংশ।

করোনা প্রথম শনাক্ত হয় গত বছরের ৮ মার্চ। উদ্বেগ থাকলেও প্রথম কয় মাসে ভাইরাসটি সেভাবে ছড়ায়নি।

তবে মে মাস থেকে ব্যাপকভাবে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়তে থাকে। তখন আক্রান্তের হটস্পট ছিল ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রামের মতো জনবহুল শহরগুলো।

গত শীতে দ্বিতীয় ঢেউ আসার উদ্বেগ থাকলেও সংক্রমণ, মৃত্যু- দুটোই কমে আসে। একপর্যায়ে পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৩ শতাংশের নিচে নেমে আসে, যেটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিবেচনায় করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ধরা যায়।

তবে গত মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে শনাক্তের হার আবার বাড়তে থাকে। দ্বিতীয় ঢেউ নিশ্চিত হওয়ার পর এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে ভারতে করোনার নতুন ধরনের কথা জানা যায়।

সেই ভ্যারিয়েন্ট আক্রান্তদের দ্রুত অসুস্থ করে দেয়, তাদের অক্সিজেন লাগে বেশি। আর ছড়ায় দ্রুত, তাই মৃত্যুর সংখ্যাও বেশি।

বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে সীমান্ত বন্ধ করে দেয়া হয় ২৪ এপ্রিল। কিন্তু অবৈধ পথে যোগাযোগ, বৈধ পথে দেশে এসে সীমান্তে বিধিনিষেধ না মেনে লুকিয়ে বাড়ি ফেরার প্রবণতার কারণে ভাইরাসের প্রকোপ ঠেকানো যায়নি।

প্রথমে ভারতীয় ধরন ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট রাজশাহী অঞ্চলে ব্যাপক মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। পরে তা ছড়ায় খুলনা বিভাগে। সেই সঙ্গে ঢাকা বিভাগের বৃহত্তর ফরিদপুর অঞ্চল আর টাঙ্গাইল এলাকাতেও সংক্রমণ ঘটে ভাইরাসটির।

পরিস্থিতি ভয়াবহ হওয়ায় গত ২২ জুন থেকে ঢাকাকে ঘিরে রাখা সাত জেলায় যান চলাচল বন্ধ করে রাজধানীকে বিচ্ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

এতেও কাজ না হওয়ায় ১ জুলাই থেকে শুরু হয় শাটডাউন। সরকার জনগণের চলাচল রোধে এবার যে কঠোর, তার প্রমাণ মেলে সেনাবাহিনী মোতায়েনেই।

অকারণে বাড়ির বাইরে আসায় প্রতিদিনই বিপুল পরিমাণ জরিমানা আদায় করা হচ্ছে; কেবল ঢাকায় আটক করা হচ্ছে কয়েকশ মানুষকে। শাটডাউন প্রথমে সাত দিনের জন্য দেয়া হলেও পরে তা বাড়ানো হয়েছে আরও সাত দিন।

এ বিভাগের আরো খবর