করোনাভাইরাস মহামারিতে ত্বকের প্রদাহ সৃষ্টিকারী সোরিয়াসিস রোগের মাত্রা বিশ্বব্যাপী ব্যাপকভাবে বেড়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মহামারির সময়ে মানসিক চাপ, উদ্বেগ, হতাশা বেড়ে যাওয়ার কারণেই বাড়ছে এই চর্মরোগ।
দেহের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা অতিমাত্রায় সক্রিয় হলে মানুষ সোরিয়াসিসে আক্রান্ত হতে পারে। এটি দীর্ঘস্থায়ীভাবে ত্বকে প্রদাহ সৃষ্টি করে। এতে ত্বকের কোষের জীবনচক্র দ্রুত শেষ হতে থাকে। এর ফলে ত্বকের ওপর বাড়তি কোষের একটি বোঝা জমে ওঠে। ত্বকের জিভিন্ন জায়গা খসখসে লাল বা সাদাটে হতে পারে। আবার ফেটেও যায়। ত্বক মাছের আঁশের মতো খসখসে হয়ে পড়ে।
এই রোগে ভোগা ব্যক্তির কনুই, হাঁটু, মাথা, হাত ও পায়ের নখ আক্রান্ত হতে পারে। হাতের নখের রং নষ্ট ও গর্ত হয়ে যায়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মাথার ত্বকও আক্রান্ত হয়ে থাকে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবের বরাত দিয়ে সংবাদ ও কারেন্ট অ্যাফেয়ার্সভিত্তিক সাইট ভাইস-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বজুড়ে সোরিয়াসিসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় ১০ কোটি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে করোনা মহামারির কারণে। মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে এই রোগ।
গত বছর অনলাইনে পরিচালিত এক জরিপে ৪৩ দশমিক ৭ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, মহামারি শুরুর পর থেকে সোরিয়াসিস উপসর্গের অবনতি ঘটেছে।
ইতালির মিলানের সান্তাগোস্তিনো মেডিক্যাল সেন্টারের চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মিশেল কার্ডোন মনে করছেন, মহামারির সময়ে ঘরবন্দি থাকার কারণে রোদের উত্তাপ বঞ্চিত হচ্ছে মানুষ। পাশাপাশি বেড়েছে মানসিক চাপ, উদ্বেগ ও হতাশা। এসব কারণে বাড়ছে সোরিয়াসিসের বিস্তার।
কার্ডন বলেন, ‘ত্বকও একটি অঙ্গ এবং একে মানব মনের বর্ধিত অংশের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। মহামারির সময়ে সোরিয়াসিস ছাড়াও আরও বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগ বেড়েছে। স্যানিটাইজার ব্যবহারে হাতের তালু খসখসে হয়ে যাওয়া, মাস্কের কারণে মুখে ব্রণ জন্মানো এগুলোর অন্যতম।’
অন্যান্য দীর্ঘমেয়াদি রোগের মতো সোরিয়াসিসও শরীরে বিভিন্ন ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। প্রায় ৩০ শতাংশ ক্ষেত্রে এটি আরথ্রাইটিসের সঙ্গে সম্পর্কিত এবং শরীরে তীব্র ব্যথা সৃষ্টিকারী ফোলা এবং হাড়সন্ধির স্থিতিশীলতা কমিয়ে দেয়ার কারণ হতে পারে। সোরিয়াসিসের সঙ্গে ডায়াবেটিস ও হাইপারলিপিডেমিয়ারও (রক্তে উচ্চমাত্রায় চর্বি) যোগসূত্র রয়েছে।
মানসিক চাপ ছাড়াও জিন ও পরিবশগত বেশ কিছু কারণে মানুষ সোরিয়াসিসে আক্রান্ত হতে পারে। এ ছাড়া বেশি মদ্যপান, আগুনে পোড়া অথবা বিভিন্ন ওষুধের প্রভাবেও এই রোগ হওয়ার নজির রয়েছে।