করোনার নতুন ধরন ল্যাম্বডা ভ্যারিয়েন্ট পৃথিবীর প্রায় ৩০টি দেশে ছড়িয়েছে বলে সতর্ক করেছে মালয়েশিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ল্যাম্বডা ভ্যারিয়েন্টকে এপ্রিলে ভারতে প্রথমবারের মতো শনাক্ত হওয়া ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের চেয়েও প্রাণঘাতী বলছে প্রতিষ্ঠানটি।
মঙ্গলবার মালয়েশিয়ার সংবাদমাধ্যম দি স্টারের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সোমবার এক টুইট বার্তায় দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় লিখেছে, ‘ল্যাম্বডা ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়েছে পেরু থেকে, যেখানে মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি।’
ওই টুইট বার্তার সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার একটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের লিংক যুক্ত করা হয়েছে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এপ্রিল থেকে পেরুতে করোনা শনাক্তের ৮১ শতাংশ ল্যাম্বডা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত।
যুক্তরাজ্যে ইতোমধ্যে ছয় জনের শরীরে ল্যাম্বডা ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে।
গবেষকরা আশঙ্কা করছেন, নতুন এই ভ্যারিয়েন্টটি ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টেরও চেয়েও বেশি সংক্রামক।
পেরুর কায়েটানো হেরেডিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পাবলো সুকায়ামা জানিয়েছেন, পেরুতে করোনা শনাক্তদের ৮২ শতাংশ ল্যাম্বডা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত। এদের মধ্যে ১০ শতাংশই মারা যাচ্ছেন। মৃত্যুর হার প্রতি এক লাখ জনে ৬০০ জন।
তিনি বলেন, ‘এ থেকে বোঝা যায় অন্য ভ্যারিয়েন্টের চেয়ে ল্যাম্বডা ভারিয়েন্টের সংক্রমণের হার বেশি।’
যুক্তরাজ্যে করোনার সাম্প্রতিক শনাক্তের ৯০ শতাংশ এবং যুক্তরাষ্ট্রে শনাক্ত ৩০ শতাংশই ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে প্রথম অস্তিত্ব জানা যায় মানবদেহে সংক্রামক করোনাভাইরাসের নতুন প্রজাতির। এরপর থেকে বিভিন্ন সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভাইরাসটির রূপ পরিবর্তিত নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হচ্ছে।
এসব ভ্যারিয়েন্টের মধ্যে যুক্তরাজ্যে প্রথম শনাক্ত আলফা ভ্যারিয়েন্টের (বি.১.১.৭) সংক্রমণের মাত্রা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দেয়। কারণ ২০১৯ সালে আবিষ্কৃত করোনার চেয়ে ৭০ শতাংশ বেশি সংক্রামক ছিল নতুন ভ্যারিয়েন্টটি।
ইউরোপের গবেষকরা বলছেন, আলফার চেয়েও ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ বেশি সংক্রামক ডেল্টা।
স্বাস্থ্যবিধি শিথিল বলে আগস্ট নাগাদ ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে করোনা সংক্রমণের ৯০ শতাংশ ডেল্টা হবে বলে সতর্ক করেছেন বিজ্ঞানীরা।
এ অবস্থায় স্পেন, নেদারল্যান্ডসসহ বিভিন্ন দেশে অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি শিথিল থাকলেও মাস্ক পরার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
লন্ডন স্কুল অফ হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনের টিকা বিশেষজ্ঞ ড. অ্যানেলিস ওয়াইল্ডার স্মিথ বলেন, ‘ডেল্টা বেশি মানুষকে আক্রান্ত করেছে। এটি দ্রুত ছড়াতে সক্ষম। ভারতের পর অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া আর যুক্তরাজ্যেও এর উপস্থিতি মিলেছে।
‘আমার ধারণা, এখন ইউরোপ আর আমেরিকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়বে ডেল্টা।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভাইরাসের যে অংশটির মাধ্যমে মানবদেহের সঙ্গে এটি আটকে থাকে, রূপ পরিবর্তনের মাধ্যমে তার আকৃতি বদলে যাচ্ছে।
এর মাধ্যমে করোনা প্রতিরোধী বিদ্যমান টিকাকে ফাঁকি দিয়ে মানবশরীরে জীবিতই থেকে যাচ্ছে সেটি।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেল্টার বিরুদ্ধে বিদ্যমান টিকা কম কার্যকর। কম কার্যকারিতা পাওয়া যায় দ্বিতীয় ডোজ নেয়ার পর।
বিশ্বে এখন পর্যন্ত টিকা কার্যক্রমে সবচেয়ে সফল ইসরায়েলেও কয়েক দিন ধরে বাড়ছে সংক্রমণ। মাস্ক ব্যবহারের নির্দেশ শিথিলের পর থেকেই দেশটিতে করোনার সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী।
আফ্রিকার ১২টি দেশে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের কারণে হাসপাতালে রোগী ভর্তির সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে বলে নিশ্চিত করেছে অঞ্চলটির রোগ প্রতিরোধ ও প্রশমন কেন্দ্র।
পুরো অঞ্চলে টিকাগ্রহীতার হার মোট জনগোষ্ঠীর মাত্র এক শতাংশ, যা সারা বিশ্বে অঞ্চলের হিসাবে সর্বনিম্ন।