খুলনায় করোনায় আক্রান্তের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। এত মৃত্যুর কারণ কী, তা বোঝার চেষ্টা চলছে।
চিকিৎসকরা বলছেন, আক্রান্তরা সঙ্গে সঙ্গে যথাযথ চিকিৎসা নিচ্ছেন না।
খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক সুহাস রঞ্জন হালদার বলেন, ‘যারা আক্রান্ত হচ্ছে তাদের মধ্যে বেশিরভাগই হাসপাতালে আসছেন শেষ মুহুর্তে। তাদের শারীরিক অবস্থা নাজুক হয়ে পড়ে ততক্ষণে।
তিনি বলেন, ‘বেশিরভাগ রোগীর অক্সিজেন লেভেল নেমে যাচ্ছে ৮০ এর নিচে। এ সমস্ত রোগীরাই মৃত্যুর তালিকা বাড়াচ্ছে।’
চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণ বলছে, যেসব রোগীদের ডায়বেটিক বেশি, হার্টের সমস্যা রয়েছে, লিভারের রোগে আক্রান্ত ও ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত এরা করোনায় আক্রান্ত হলেই তাদের অক্সিজেন লেভেল কমে যাচ্ছে। চিকিৎসকরা ব্যাপক চেষ্টা চালিয়েও তাদের বাঁচিয়ে রাখতে পারছেন না।
খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উপাধ্যক্ষ ও জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির আহ্বায়ক মেহেদী নেওয়াজ বলেন, ‘যেসব রোগীরা গ্রাম থেকে এসে ভর্তি হচ্ছেন তারা অধিকাংশই জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। অনেকে আবার চিকিৎসকদের ফোন করে হাসপাতালে ভর্তি হতে চান। সে সময় দেখা যায় তাদের স্যাচুরেশন ৮০র নিচে।
‘প্রথম থেকে তারা যথাযথ চিকিৎসা নেননি অথবা করোনার পরীক্ষা করাচ্ছেন অনেক দেরিতে। ফলে করোনার সংক্রমণে দেহের যে ক্ষতি হওয়ার সেটা আগেই হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু পরীক্ষা বা ট্রিটমেন্ট যদি শুরু থেকেই নেয়া হতো তাহলে হয়ত রোগীদের বাঁচানো সম্ভব হতো।’
তিনি বলেন, ‘এর পাশাপাশি যেসব রোগীরা মারা যাচ্ছে তাদের বেশিরভাগই অ্যাজমা, হাইপারটেনশন, ডায়াবেটিস ও ব্লাড প্রেশারে আক্রান্ত। এছাড়া বয়স্ক রোগী বেশি মারা যাচ্ছেন।’
শনিবার সকাল থেকে রবিবার সকাল পর্যন্ত খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছে ৭ জন রোগী। এরমধ্যে দুই জনের বয়স ৫২ ও ৫৫। বাকিদের বয়স ষাটের বেশি।
জেনারেল হাসপাতালে মারা গেছেন ২ জন, যাদের বয়স ষাটের বেশি।
গাজী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা যাওয়া ৬ জনের মধ্যে একজনের বয়স ২৭। বাকিদের বয়স ৬৫ বছরের উপরে।
খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক সুহাস রঞ্জন হালদার বলেন, ‘চিকিৎসা সেবা বাড়াতে খুলনা মেডিক্যালে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে শয্যা বাড়ানো হচ্ছে। এখন ১৩০টি শয্যা রয়েছে। সোমবার থেকে আরও ২০টি শয্যা প্রস্তুত করা হচ্ছে। দুই-তিন দিনের মধ্যে আরও ৫০টি শয্যা চালু করা হবে।
বিভাগে কোন জেলায় কত মৃত্যু
রোববার সকাল আটটা পর্যন্ত বিভাগে ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। যার মধ্যে খুলনার ১৫ জন, কুষ্টিয়ায় ১৫ জন, যশোরে সাতজন, ঝিনাইদহ, মাগুরা ও চুয়াডাঙ্গায় দুজন করে এবং বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও মেহেরপুরে একজন করে মারা গেছেন।
২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ১ হাজার ৩০৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে বিভাগে শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ৬০ হাজার ৫৬৪ জন।
এর আগে ১ জুলাই ২৪ ঘণ্টায়য় সর্বোচ্চ ৩৯ জনের মৃত্যু হয়েছিল। ওই সময়ে নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছিল ১ হাজার ২৪৫ জন।
এখন পর্যন্ত খুলনা জেলায় মোট আক্রান্ত হয়েছে ১৬ হাজার ৩৮৭ জন। মৃত্যু হয়েছে ৩০০ জনের।
কুষ্টিয়ায় মোট শনাক্ত হয়েছে ৮ হাজার ৪৫৩ জন। মারা গেছেন ২৪৫ জন।
বাগেরহাটে মোট শনাক্ত ৩ হাজার ৭৭৩ জনের। মৃত্যু ৮৯ জন।
সাতক্ষীরায় মোট শনাক্ত ৩ হাজার ৬৩৮ জন এবং মৃত্যু ৭৫ জন।
যশোরে মোট শনাক্ত ১৩ হাজার ২৩৫ জন। মারা গেছেন ১৬৯ জন।
নড়াইলে মোট শনাক্ত হয়েছে ২ হাজার ৯৬৩ জন। মারা গেছেন ৫০ জন।
মাগুরায় মোট শনাক্ত ১ হাজার ৭০০ জন। মারা গেছেন ২৯।
ঝিনাইদহে মোট শনাক্ত ৪ হাজার ৭০৪ জন। মারা গেছেন ১০২ জন।
চুয়াডাঙ্গায় মোট শনাক্ত ৩ হাজার ৬৫৩ জন। মৃত্যু ৯৮ জন।
মেহেরপুরে মোট শনাক্ত ২ হাজার ৩৮ জন। মারা গেছেন ৫৭ জন।
অর্থ্যাৎ বিভাগের মধ্যে খুলনা জেলায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার বেশি।
জেলা সিভিল সার্জন অফিসের মেডিক্যাল অফিসার (রোগ নিয়ন্ত্রণ) শেখ সাদিয়া মনোয়ারা ঊষা জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৩৬টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৫০ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। যা মোট নমুনা পরীক্ষার ৩৪ শতাংশের সংক্রমণ ধরা পড়েছে।