অ্যাস্ট্রেজেনেকা, সিনোফার্ম এবং ফাইজারের পর এবার ন্যায্যতার ভিত্তিতে টিকা পাওয়ার বৈশ্বিক জোট কোভ্যাক্সের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে উদ্ভাবিত মডার্নার করোনা প্রতিরোধী টিকা পেয়েছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশকে উপহার হিসেবে এই টিকা দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত রবার্ট মিলার।
শুক্রবার বিমানবন্দরে টিকা আসার পর এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘এই টিকা উপহার। আমেরিকার জনগণ টিকাগুলো বিনামূল্যে বাংলাদেশকে পাঠিয়েছে উপহার হিসেবে। আমরা একমাত্র উদ্দেশ্য নিয়ে টিকাগুলো বাংলাদেশের জনগণের সাথে ভাগ করে নিচ্ছি, সেটি হলো মানুষের জীবন বাঁচানো।’
মিলার বলেন, ‘কারণ এটিই হলো সঠিক কাজ। আমেরিকানরা সবসময় মানুষের প্রয়োজনে ও বিপদে তাদের পাশে দাঁড়ায়। আমরা আমাদের সামর্থ্য ও ইচ্ছাশক্তি নিয়ে এগিয়ে যাই এবং যা করার দরকার সেটা করি।’
শুক্রবার রাতে বিশেষ ফ্লাইটে রাত সোয়া ১১টার দিকে মডার্নার টিকার প্রথম চালান পৌঁছায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে। দ্বিতীয় চালানে ১৩ লাখ টিকা আসবে শনিবার সকালে।
মডার্নার টিকা আসার দেড় ঘণ্টা পর চীন থেকে কেনা সিনোফার্মের টিকা প্রথম চালানও দেশে এসেছে। দ্বিতীয় চালানে আরও ১০ লাখ টিকা আসবে শনিবার সকালে।
যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের করোনা মোকাবিলা সহায়তার ক্ষেত্রে বৃহত্তম দাতা দেশ।
যুক্তরাষ্ট্রের সরকার মহামারি মোকাবেলায় বাংলাদেশকে ৮৪ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি সহায়তা দিয়েছে উল্লেখ করে মিলার বলেন, ‘এই সহায়তার মধ্যে অন্যান্য কিছুর সাথে ভেন্টিলেটর, অক্সিজেন সিলিন্ডার, ১২০০ পালস অক্সিমিটারসহ বাংলাদেশব্যাপী কর্মরত সম্মুখসারির হাজার হাজার স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য ২০ লাখের বেশি ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম, ৫০ লাখ সার্জিক্যাল মাস্ক এবং ৫২ হাজার জোড়া সুরক্ষামূলক গগলস রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘একথা পরিষ্কারভাবে বলা দরকার আজকে রাতে ও কয়েক ঘণ্টা পর বিমানযোগে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা টিকার এই অনুদান শুরু মাত্র। যুক্তরাষ্ট্র জরুরিভিত্তিতে বাংলাদেশে দ্রুততার সাথে যতো বেশি সম্ভব নিরাপদ ও কার্যকর টিকা পৌঁছানোর গুরুত্ব জানে ও বুঝতে পারে।’
করোনা মোকাবিলায় একসঙ্গে কাজ করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা জানি বিশ্বব্যাপী মানুষের জীবন বাঁচাতে, ভাইরাসের নতুন ধরন তৈরি হওয়া থামাতে এবং বৈশ্বিক অর্থনীতি পুনর্গঠনে বিশ্বের সর্বত্র যতো বেশি সম্ভব মানুষকে দ্রুততার সাথে টিকাদান করতে আমাদেরকে অবশ্যই একসাথে কাজ করতে হবে।’
টিকার সংকট কাটাতে সরকারের নানামুখী পদক্ষেপের মধ্যে চলতি সপ্তাহ থেকেই অগ্রগতি দেখা দিচ্ছে। শুক্রবার ও শনিবারের মধ্যেই টিকার চীন ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৪৫ লাখ ডোজ টিকা পাচ্ছে দেশ।
এ ছাড়া সরকারের হাতে বর্তমানে ফাইজার, কোভিশিল্ড, বিবিআইবিপি-করভি মিলিয়ে ১৪ লাখ টিকা। এই টিকা দিয়ে আগামী এক মাস টিকা কার্যক্রম চালিয়ে নেয়া যাবে।
অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নেয়া প্রায় সাড়ে ১৫ লাখ মানুষের সংকটও দূর হচ্ছে। জুলাইয়ের মধ্যে এই টিকাও হাতে পাচ্ছে সরকার। সিরাম ইনস্টিটিউট টিকা দিতে না পারলেও যুক্তরাষ্ট্র থেকে চালান আসছে। ফলে অ্যাস্ট্রাজেনেকার প্রথম ডোজ যারা নিয়েছেন, তাদের সবাইকে দ্বিতীয় ডোজ দেয়া যাবে।
আগামী মাসের মধ্যেই রাশিয়ার তৈরি করোনা টিকা স্পুৎনিক-ভির ৪০ লাখ ডোজ দেশে আসবে বলেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আশা করছে।
গত ২৭ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টিকাদান কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। আর গণটিকা শুরু হয় ৭ ফেব্রুয়ারি। প্রতি মাসে ভারত থেকে আসার কথা ছিল ৫০ লাখ করে। এ ছাড়া বিশ্বজুড়ে ন্যায্যতার ভিত্তিতে টিকা বিতরণে গড়ে ওঠা জোট কোভ্যাক্স থেকে পাওয়ার কথা ছিল সাত কোটির বেশি টিকা।