টিকার সংকট কাটাতে সরকারের নানামুখী পদক্ষেপে চলতি সপ্তাহ থেকেই অগ্রগতি দেখা দিচ্ছে। শুক্রবার ও শনিবারের মধ্যে টিকার বড় চালান সরকারের হাতে আসছে। এই দুই দিনে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৪৫ লাখ ডোজ টিকা পাচ্ছে দেশ।
এ ছাড়া সরকারের হাতে বর্তমানে ফাইজার, কোভিশিল্ড, বিবিআইবিপি-করভি মিলিয়ে ১৪ লাখ টিকা। এই টিকা দিয়ে আগামী এক মাস টিকা কার্যক্রম চালিয়ে নেয়া যাবে।
অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নেয়া প্রায় সাড়ে ১৫ লাখ মানুষের সংকটও দূর হচ্ছে। জুলাইয়ের মধ্যে এই টিকাও হাতে পাচ্ছে সরকার। সিরাম ইনস্টিটিউট টিকা দিতে না পারলেও যুক্তরাষ্ট্র থেকে চালান আসছে। ফলে অ্যাস্ট্রাজেনেকার প্রথম ডোজ যারা নিয়েছেন, তাদের সবাইকে দ্বিতীয় ডোজ দেয়া যাবে।
আগামী মাসের মধ্যেই রাশিয়ার তৈরি করোনা টিকা স্পুৎনিক-ভির ৪০ লাখ ডোজ দেশে আসবে বলেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আশা করছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শুক্রবার রাতে কোভ্যাক্সের আওতায় যুক্তরাষ্ট্রের ১৩ লাখ মডার্নার এবং চীনের ২০ লাখ টিকা ঢাকায় আসছে।
শনিবার সকালে কোভ্যাক্সের আরও ১২ লাখ টিকা ঢাকায় এসে পৌঁছাবে। সব মিলিয়ে শনিবার সকালে সরকারের হাতে ব্যবহারযোগ্য ৪৫ লাখ টিকা থাকবে।
গত ১২ মে চীনের টিকা নিয়ে ঢাকায় অবতরণ করে বিমান বাহিনীর উড়োজাহাজ। ছবি: সংগৃহীত
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা আশা করছি, জুলাইয়ের মধ্যে এক কোটির বেশি টিকা আমাদের হাতে এসে পৌঁছাবে। বিভিন্ন উৎস থেকে এসব টিকা হাতে এলেই থমকে থাকা গণটিকা গতি পাবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা যদি ১০ মিলিয়ন টিকা পাই, তাহলে বেশিসংখ্যক মানুষকে টিকা দিতে পারব। আমরা আশাবাদী, এই মাসের মধ্যে বিভিন্ন উৎস থেকে টিকা আসবে এবং ধারাবাহিকভাবে আসতে থাকবে।’
বুধবার জাতীয় সংসদকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ডিসেম্বরের মধ্যে ১০ কোটি ও ২০২২ সালের মধ্যে আরও ৭ কোটি করোনাভাইরাসের টিকা দেশের হাতে থাকবে। ডিসেম্বরের মধ্যে দুই ডোজ হিসেবে পাঁচ কোটি মানুষকে টিকা দেয়া হবে।
দেশে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি টিকা দিয়ে গণটিকা কার্যক্রম শুরু করেছিল সরকার। ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে কেনা ৩ কোটি ৪০ লাখ ডোজের মধ্যে বাংলাদেশ পায় মাত্র ৭০ লাখ টিকা। এর পাশাপাশি ভারত সরকার বাংলাদেশকে উপহার দেয় ৩৩ লাখ টিকা। যা দিয়ে টিকা কার্যক্রম শুরু করলেও সিরাম বাংলাদেশকে আর টিকা না দিলে টিকাদান বন্ধ হয়ে যায়।
গত ২৭ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টিকাদান কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। আর গণটিকা শুরু হয় ৭ ফেব্রুয়ারি। প্রতি মাসে ভারত থেকে আসার কথা ছিল ৫০ লাখ করে। এ ছাড়া বিশ্বজুড়ে ন্যায্যতার ভিত্তিতে টিকা বিতরণে গড়ে ওঠা জোট কোভ্যাক্স থেকে পাওয়ার কথা ছিল সাত কোটির বেশি টিকা।
তবে ভারতে করোনার নতুন ধরনের ব্যাপক বিস্তারে সব পরিকল্পনা ভণ্ডুল হয়ে যায়। নিজ দেশে টিকার চাহিদা মেটাতে সে দেশের সরকার বিশ্বের সবচেয়ে বড় টিকা উৎপাদনকারী কোম্পানি সিরাম ইন্টারন্যাশনালকে করোনার টিকা রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়। এর ফলে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করা টিকা যেমন দেয়া যায়নি, তাই কোভ্যাক্সের টিকা পায়নি বাংলাদেশ। এই বৈশ্বিক উদ্যোগও সিরাম থেকেই টিকা নেয়ার পরিকল্পনা করে রেখেছিল।
এই পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ২৬ এপ্রিল টিকার প্রথম ডোজ দেয়া বন্ধ রাখে। আর সিরামের দ্বিতীয় ডোজও কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে ঈদের পর।
তবে সিরাম থেকে টিকা প্রাপ্তিতে অনিশ্চয়তার পর সরকার চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি করার চেষ্টা করছে। এরই মধ্যে চীন থেকে দুই ধাপে ১১ লাখ টিকা পাওয়া গেছে উপহার হিসেবে। আর এই দেশটি থেকে সরকার তিন থেকে চার কোটি টিকা কেনার কথা বলছে। এর মধ্যে কত টিকার চুক্তি হয়েছে, সেটি এখনও প্রকাশ হয়নি।
হাতে টিকা নিয়ে গত বৃহস্পতিবার থেকে সারা দেশে আবার গণটিকা শুরু করেছে সরকার। ঢাকায় ৪০টি আর বাইরে প্রায় এক হাজার কেন্দ্রে চলছে এই কার্যক্রম।