কদিন ধরেই করোনার উপসর্গে ভুগছিলেন সিলেটের জৈন্তাপুরের রিয়াজ আহমদ। বুধবার রাতে তার শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। রাতেই তাকে সিলেটের শহীদ ডা. শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে নেন ছেলে রুহেল আহমদ। রোগী দেখে চিকিৎসকরা জানান, নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) প্রয়োজন হবে। কিন্তু হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা খালি নেই। বাবাকে নিয়ে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়েও আইসিইউ পাননি রুহেল। পরে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় রিয়াজ আহমদকে।
সদর উপজেলার জালালবাদ ইউনিয়ন থেকে আলমগীর হোসেনকে বৃহস্পতিবার সকালে শামসুদ্দিন হাসপাতালে নিয়ে আসেন তার স্বজনরা। জ্বর-সর্দিতে ভুগছেন তিনি। কিন্তু হাসপাতালে শয্যা খালি না থাকার কথা বলে তাকে ভর্তি করেনি কর্তৃপক্ষ।
আলমগীরের ভাই আয়নাল হোসেন বলেন, শামসুদ্দিনে ভর্তির সুযোগ না পেয়ে ভাইকে ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি করেছি। সেখানেও শয্যা খালি নেই। ভাইকে মেঝেতে শয্যা পেতে রাখা হয়েছে।
সিলেটে দ্রুত বাড়ছে করোনা রোগীর সংখ্যা। রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতালগুলো। করোনা চিকিৎসার বিভাগের একমাত্র ডেডিকেটেড চিকিৎসাকেন্দ্র শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে শয্যাই খালি পাওয়া যাচ্ছে না। হাসপাতালে ভর্তি হতে আসা রোগীদের ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে। আর পুরো বিভাগেই আইসিইউর তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। সরকারির পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতালগুলোতেও করোনা রোগীদের জন্য শয্যা খালি পাওয়া যাচ্ছে না।
গত ২৪ ঘণ্টায় (বুধবার সকাল ১০টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত) সিলেটে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৭ জন। এই সময়ে করোনা শনাক্ত হয়েছে ১৯৯ জনের।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রোগীর সংখ্যা এভাবে বাড়তে থাকলে হাসপাতালগুলোতে সংকট আরও বাড়বে। বাড়তি রোগীর চাপ সামলাতে পারবে না হাসপাতালগুলো।
করোনা ডেডিকেটেড শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে শয্যা আছে ৯০টি। বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত এই হাসপাতালে ভর্তি আছে ৯৩ জন। এর মধ্যে ৪৩ জনের করোনা পজিটিভ এবং ৫১ জন উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসাধীন।
হাসপাতালটির ১৬ শয্যার আইসিইউর সবগুলোই রোগীতে পূর্ণ। শয্যাসংখ্যা খালি না থাকায় নতুন করে রোগী ভর্তি করতে পারছে না হাসপাতালটি।
শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. সুশান্ত কুমার মহাপাত্র বলেন, ‘হাসপাতাল রোগীতে পরিপূর্ণ। রোগীর চাপ সামলাতে আমরা হিমশিম খাচ্ছি। কোনো রোগী কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠলেই তাকে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। আর সেই খালি সিটে নতুন করে রোগী ভর্তি করা হচ্ছে। আর আইসিইউ-সংকট থাকায় করোনা পজিটিভ রোগী ছাড়া অন্য রোগীদের সেখানে ভর্তি করা সম্ভব হচ্ছে না।’
সিলেটে করোনা রোগী বেড়ে যাওয়ায় ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ২৬ ও ২৭ নম্বর ওয়ার্ডকে করোনা আইসোলেশন ইউনিট করে সেখানে রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এই দুই ওয়ার্ডে শয্যা রয়েছে ২০০টি। এগুলোও পূর্ণ হয়েছে রোগীতে। এই হাসপাতালে ১০ শয্যার আইসিইউ রয়েছে। তবে বৃহস্পতিবার সকালে এই ১০টি আইসিইউর একটিও খালি নেই বলে জানা গেছে।
হাসপাতালের উপপরিচালক হিমাংশু লাল রায় বলেন, করোনা রোগী বেড়ে যাওয়াতে চিকিৎসাসেবার জন্য হাসপাতালে দুটি ওয়ার্ড নিয়ে আইসোলেশন ইউনিট করা হয়েছে। উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীদের এখানে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তবে হাসপাতালে আইসিইউ রয়েছে মাত্র ১০টি; যা সব সময়ই রোগীতে পূর্ণ থাকে। আরও ১০টি আইসিইউ শয্যা প্রস্তুত করা হচ্ছে।
সরকারি হাসপাতালের সঙ্গে সঙ্গে সিলেট নগরীর তিনিটি বেসরকারি হাসপাতালেও করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তবে এগুলোর চিকিৎসা ব্যয় স্বল্প আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে। তবু এসব হাসপাতালেও আইসিইউ খালি মিলছে না। আইসোলেশন ইউনিটও রোগীতে পূর্ণ থাকছে।
নগরীর আখালিয়ার মাউন্ট এডোরা হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য রয়েছে ৯টি আইসিইউ। এ ছাড়া ২৬টি রয়েছে আইসোলেশন শয্যা।
এই হাসপাতালে করোনা ইউনিটের কোনো শয্যাই খালি নেই বলে জানান হাসপাতালের বিজনেস ডেভেলপমেন্ট কনসালট্যান্ট রাশেদুল ইসলাম। দক্ষিণ সুরমার নর্থইস্ট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে রয়েছে ১২টি আইসিইউ শয্যা।
হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘করোনা আক্রান্ত রোগীদের চাপ বাড়ছে। তাই আমরাও আইসোলেশন শয্যা ও আইসিইউর সংখ্যাও বাড়িয়েছি। তবে এই মুহূর্তে হাসপাতালের আইসোলেশন শয্যা ও আইসিইউ বেডের একটিও খালি নেই।’
নগরের নুরজাহান হাসপাতালের করোনা ইউনিটে শয্যা খালি নেই বলে জানিয়েছেন হাসপাতালটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাসিম আহমদ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক সুলতানা রাজিয়া জানান, সিলেটের চার জেলা মিলিয়ে ৩৬৮ জন করোনা আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। যাদের ৩৪১ জনই সিলেটের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। এ ছাড়া করোনার উপসর্গ নিয়েও চিকিৎসাধীন রয়েছেন অনেকে।
তিনি বলেন, করোনা রোগীদের জন্য পুরো সিলেট বিভাগে সরকারি হাসপাতালগুলোতে বরাদ্দ আইসিইউ রয়েছে ২১টি। এর মধ্যে শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে ১৬টি ও মৌলভীবাজার হাসপাতালে ৫টি। সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জ সরকারি হাসপাতালগুলোতে আইসিইউর ব্যবস্থা নেই।
সুলতানা রাজিয়া বলেন, ‘ওসমানী হাসপাতালে ১০টি আইসিইউ রয়েছে। তবে সেখানে করোনা শনাক্ত হওয়া রোগীদের ভর্তি করা হয় না। করোনা শনাক্ত হওয়া রোগীদের জন্য ওসমানীতে আমরা ১০টি আইসিইউর ব্যবস্থা করছি।’