চীনের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান সিনোফার্মের টিকা বিবিআইবিপি-করভি দিয়ে দেশে ফের শুরু হচ্ছে গণটিকাদান।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বুধবারের স্বাস্থ্য বুলেটিনে এ তথ্য জানিয়েছেন দপ্তরটির ভ্যাকসিন ডেপ্লয়মেন্ট কমিটির সদস্য সচিব ডা. শামসুল হক।
গণটিকাদান নিয়ে ডা. শামসুল হক বলেন, ‘সারা দেশের সকল মেডিক্যাল হাসপাতাল, জেলা হাসপাতাল, সদর হাসপাতালে এই কার্যক্রম শুরু হবে। এসব হাসপাতালে প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বিকাল তিনটা পর্যন্ত এই টিকাদান চলবে।
‘ঢাকা শহরের মধ্যে ইতোপূর্বে ৪৮ টিকাকেন্দ্রে টিকাদান কর্মকাণ্ড চলেছিল। এই মুহূর্তে রাজধানীতে ৮টি কেন্দ্র বাদে ৪০টি কেন্দ্রে এই টিকা দেয়া হবে। আগের ন্যায় একই সময়ে একই নিয়মে এই টিকা দেয়া হবে। আমরা এই ৮ কেন্দ্রের নাম পরে জানিয়ে দিব।’
আবার শুরু হলো নিবন্ধন
টিকা পেতে বুধবার থেকে নিবন্ধনও শুরু হচ্ছে। এখন থেকে টিকা পেতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিবন্ধন করা যাবে। আগে যারা নিবন্ধন করেছেন, তাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার থেকে টিকা দেয়া হবে। যারা আগে এসব কেন্দ্রে নিবন্ধন করে টিকা পাননি তারাও এখন টিকা নিতে পারবেন।
এ ছাড়া এখনও যারা টিকা পেতে নিবন্ধন করেননি, তাদের জন্য বৃহস্পতিবার থেকে নিবন্ধন চালু করা হচ্ছে। তারা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিবন্ধন করার সুযোগ পাবেন। নিবন্ধনের পর যখন কেন্দ্র থেকে এসএমএস আসবে, তখন সেই কেন্দ্রে গিয়ে টিকা নেয়ার সুযোগ পাবেন।
ফাইজারের টিকা দেয়া হবে প্রবাসীদের
সৌদি আরব ও কুয়েতগামী প্রবাসী কর্মীদের করোনাভাইরাস প্রতিরোধী ফাইজারের টিকা দেয়া হবে। রাজধানীর সাতটি হাসপাতালে বৃহস্পতিবার সকালে এই টিকা দেয়া শুরু হবে বলে জানান ডা. শামসুল হক।
তিনি জানান, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, সৌদি ও কুয়েতগামীদের সিনোফার্মের টিকা দিতে চেয়েছিল সরকার। কিন্তু প্রবাসীকর্মীরা জানান, সৌদি সরকার চীন উদ্ভাবিত এ টিকার অনুমোদন দেয়নি। সিনোফার্মের টিকা নিলেও সৌদি বা কুয়েতে গিয়ে নিজ খরচে বাধ্যতামূলকভাবে কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। এ জন্য তাদের সৌদি ও কুয়েতে অনুমোদন পাওয়া ফাইজারের টিকাই দেয়া হচ্ছে।
লকডাউনের মধ্যে চলবে টিকাদান
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে বৃহস্পতিবার থেকে সাত দিনের শাটডাউন বা কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে টিকা নেবেন, তারা টিকা কার্ড দেখিয়ে বাইরে বের হতে পারবেন। আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যদের টিকা কার্ড দেখালে তারা সহযোগিতা করবে বলে জানিয়েছেন ডা. শামসুল হক।
তিনি বলেন, ‘চীনের টিকা কিছু প্রবাসীকে দেয়া হবে। যে সকল কেন্দ্র থেকে আমাদের চীনের টিকা দেয়া হবে, সেই সকল কেন্দ্রে প্রবাসী শ্রমিকরা যেসব দেশে চীনের টিকার অনুমোদন দিয়েছে, সেইসব দেশের শ্রমিকরা চীনের টিকা নিতে পারবেন এবং টিকার সনদ নিয়ে বিদেশ যেতে পারবেন।’
রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে গত ২৭ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণটিকাদান কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। ওই দিন প্রথম টিকা নেন হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স রুনু ভেরোনিকা কস্তা।
অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা কোভিশিল্ড দিয়ে দেশে শুরু হয় গণটিকাদান। ভারতের প্রতিষ্ঠান সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে এ টিকা কিনেছে বাংলাদেশ।
চুক্তি অনুযায়ী, ভারত থেকে তিন কোটি ৪০ লাখ টিকা পাওয়ার কথা ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু সিরাম এখন পর্যন্ত টিকা সরবরাহ করেছে ৭০ লাখ।
ভারতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে টিকা স্বল্পতার কথা জানিয়ে রপ্তানি বন্ধ রেখেছে সিরাম। এমন বাস্তবতায় চীন, রাশিয়ার টিকা আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ।
এরই মধ্যে চীনের উপহারের ১১ লাখ টিকা পেয়েছে বাংলাদেশ।
যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে অ্যাস্ট্রাজেনেকা উদ্ভাবিত টিকা দেয়ার আশ্বাস দিয়েছে। এর বাইরে বিশ্বজুড়ে ন্যায্যতার ভিত্তিতে টিকা বিতরণে গড়ে ওঠা জোট কোভ্যাক্স থেকেও পাওয়া গেছে ১ লাখ টিকা।
তবে এসব টিকা বাংলাদেশের চাহিদার তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল। আর সিরাম থেকে টিকা এনে যাদের প্রথম ডোজ দেয়া হয়েছে, তাদের সবাইকে দ্বিতীয় ডোজ দেয়া যাবে কি না, এই বিষয়টি এখনও অনিশ্চিত। অথচ শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হতে দুই ডোজ লাগে।