বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ছোট হাসপাতালেও করোনার চিকিৎসা, বড়গুলোতে চাপ কমছে

  •    
  • ২৮ জুন, ২০২১ ১৯:৪৬

আগে করোনা হলেই সবাই ছুটত বিভাগীয় হাসপাতালে। এখন কম ঝুঁকিপূর্ণ রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেয়া যাচ্ছে জেলা-উপজেলার হাসপাতালগুলোতে। ফলে বড় রোগীর হাসপাতালে চাপ কমছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ হাসপাতালে এতদিন মাত্র ২০ শয্যার করোনা ইউনিট নিয়ে করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছিল। ২ জুন থেকে এখানে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সুবিধা চালু হওয়ার পর থেকে ২০ শয্যার করোনা ইউনিটে কয়েক দফায় শয্যা সংখ্যা বাড়িয়ে ৭২টিতে নেয়া হয়েছে।

এর ফলে চাঁপাইনবাবগঞ্জের রোগীদের রাজশাহী পাঠানোর প্রয়োজনীয়তা কমেছে।

শুধু চাপাইনবাবগঞ্জ না, নাটোর ও নওগাঁতেও এখন করোনার চিকিৎসার সুযোগ বাড়ানো হয়েছে।

রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী জানান, ‘জেলাগুলোতে রোগীর সেবা বাড়ানো হয়েছে। ফলে আমাদের উপর অনেক চাপ কমাচ্ছে। এটা না হলে আমরা আরো বেকায়দায় পড়তাম।’

চলতি বছরের মে মাসের শুরু থেকেই করোনা রোগীর বাড়তি চাপ সামাল দিতে হিমশিম খেতে থাকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। একের পর এক সাধারণ ওয়ার্ডকে করোনা ওয়ার্ডে রূপান্তর করতে হয়। একদিকে জায়গার অভাব, আরেক দিকে চিকিৎসকের সংকট। সব থেকে বড় চাপ পড়ে রোগীকে অক্সিজেন সরবরাহ দেয়ার ক্ষেত্রে। কারণ রাজশাহীতে যেসব রোগী আসে তার বেশিরভাগেরই প্রয়োজন হয় অক্সিজেন।

রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছর করোনার শুরুতে রাজশাহী বিভাগে করোনা চিকিৎসার জন্য শয্যা ছিল প্রায় ৫শ। তবে দেড় বছরে রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন জেলা হাসপাতালে শয্যা বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ১৩৮টি। এছাড়া উপজেলা পর্যায়ে রয়েছে আরও ৫৪৬টি শয্যা।

সম্প্রতি রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ ও নাটোরে করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় রামেক হাসপাতালেও বেড়ে যায় রোগীর চাপ। অবস্থা বেগতিক দেখে রামেক হাসপাতালে এখন শুধুমাত্র জটিল রোগীদেরই চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। করোনা আক্রান্ত বা উপসর্গ নিয়ে যারা আসছেন তাদেরও সবাইকে ভর্তি নেয়া হচ্ছে না। যাদের অক্সিজেন দেয়া জরুরি তাদেরকেই ভর্তি নিয়ে এখানে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

গত কয়েক দিন ধরে জেলা পর্যায়ে তুলনামূলক জটিল রোগীদেরও চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হচ্ছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহ করার পর সেখানে জটিল রোগীদেরও সেবা দেয়া যাচ্ছে। অন্যগুলোতে সিলিন্ডার অক্সিজেন দিয়ে সেবা দেয়া হচ্ছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর হাসপাতালের করোনা ইউনিটের চিকিৎসক আহনাফ শাহরিয়ার জানান, করোনা ইউনিটে ৭২ বেডের বিপরীতে ৭২ জন রোগীই ভর্তি আছে। তিনি জানান, সাধারণত যাদের মিনিটে ১৫ লিটার অক্সিজেন দিয়েও অবস্থার উন্নতি হয় না, তাদের রাজশাহীতে পাঠানো হয়। তবে এই সংখ্যাটাও আগের তুলনায় অনেক কমে এসেছে। আগে প্রতিদিনই দুই-তিন জন মারা যাচ্ছিল। সেখানে এখন অনেক দিন মৃত্যুশূন্য থাকছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জে চার উপজেলার মধ্যে গোমস্তাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনা রোগীদের চিকিৎসার কিছুটা সুযোগ আছে। সেখানে ছয়টি মাঝারি আকারের অক্সিজেন সিলিন্ডার দিয়ে একটি সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা করা হয়েছে।

উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাসুদ পারভেজ জানান, গোমস্তাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১০টি শয্যা আছে করোনা রোগীদের জন্য। সেখানে অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা আছে। তবে যাদের অক্সিজেন বেশি প্রয়োজন পড়ে, তাদের সদর হাসপাতালের করোনা ইউনিটে পাঠানো হয়।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. জাহিদ নজরুল চৌধুরী মনে করেন, কঠোর লকডাউনের কারণেই কমানো গেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের করোনার সংক্রমণের উর্দ্ধমুখী প্রবণতা। তিনি বলেন, ১৪ দিনের লকডাউন খুব বেশি কাজে দিয়েছে।

তিনি আরও জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জের করোনা আক্রান্তদের চাঁপাইনবাবগঞ্জেই যাতে চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হয়, সেই লক্ষে সদর হাসপাতালের করোনা ইউনিটের পরিসর বাড়ানো হয়েছে। এখানে ৭২ জন এখন চিকিৎসা নিতে পারছেন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মমিনুল হক বলেন, ‘অক্সিজেন লেভেল ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত থাকা রোগীদের আমরা ভর্তি রাখতে পারি। এরপর আমরা বড় হাসপাতালে পাঠাই। তবে এটি কমে গেছে। আমাদের জেলার রোগীদের মোটামুটি আমরাই কাভার দিতে পারি।’

নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সাপ্লাই সিস্টেম না থাকলেও সিলিন্ডারের মাধ্যমে অক্সিজেন ব্যবস্থা চালু থাকায় স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছে মানুষ। জেলার অধিকাংশ মানুষের চিকিৎসার অন্যতম ভরসাস্থল নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতাল। এখানে করোনা রোগীর জন্য ৫০ শয্যার বিপরীতে রোগী ভর্তি হয়েছে ৭০ জন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতেও সিলিন্ডারের মাধ্যমে আক্সিজেন ব্যবস্থা চালু আছে।

নওগাঁ সদর হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ডা. এ বি এম আবু হানিফ জানান, ‘নওগাঁ সদর হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য ৫০টি বেড রয়েছে। বর্তমানে ১১টি বেডে রোগি রয়েছে। আর ৩৯টি বেড খালি। সেখানে করোনা আক্রান্ত রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। তবে গুরুতর রোগীদের রাজশাহী ও ঢাকায় রেফার করা হয়।’

করোনা আক্রান্ত রোগীদের জন্য সদর হাসপাতালে ১২০টি অক্সিজেন সিলিন্ডার রয়েছে। ইতিমধ্যে ১০টি আইসিইউ বেডে অক্সিজেন সিলিন্ডার স্থাপন করা হয়েছে।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী বলেন, ‘আমাদের এখানে প্রতিদিনই রোগীর চাপ বাড়ছে। এ জন্য বাড়াতে হচ্ছে করোনা ওয়ার্ডও। সবশেষ রোববার একটি ওয়ার্ড বাড়ানো হয়েছে। এ নিয়ে বর্তমানে আমাদের হাসপাতালে করোনা বেডের সংখ্যা ৪০৫টি। এখানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৪৪২ জন। তবে, আশার কথা এখন জেলা পর্যায়েই অনেক করোনা রোগীর চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হচ্ছে। তা না হলে আমাদের এখানে রোগীর চাপ আরও বাড়ত।’

রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাবিবুল আহসান তালুকদার বলেন, ‘এখন অবস্থা কিছুটা উন্নতি হয়েছে। জেলা পর্যায়ে আইসিইউ করা যায়নি। কিন্তু রোগীদের চিকিৎসার সব থেকে বেশি প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সেবা বাড়িয়েছি। বেশ কিছু জায়গায় উপজেলা পর্যায়েও সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন আছে। সেগুলোর কারণে সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে। যেখানে সেন্ট্রাল অক্সিজেন নাই, সেখানে অক্সিজেন কনসালটেটর আছে। আমাদের ৫৮টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স আছে। সেগুলোতেও অন্তত ১০টি করে করোনা চিকিৎসার জন্য বেড রাখা আছে। জেলা হাসপাতালগুলোতেও অনেক রোগী ভর্তি আছে। আইসিইউ বাড়াতে যা যা দরকার, তা আমাদের এখনও নেই। আমাদের টার্গেট হলো অক্সিজেন সাপোর্ট নিশ্চিত করা।’

প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি আব্দুর রব নাহিদ, নাটোর প্রতিনিধি নাজমুল হাসান ও নওগাঁ প্রতিনিধি সবুজ হোসেন।

এ বিভাগের আরো খবর