জুনের প্রথম দিনগুলোর তুলনায় করোনায় মৃত্যু এখন দ্বিগুণেরও বেশি। ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের পরিমাণও প্রায় চার গুণ। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হারও বেড়ে দ্বিগুণেরও বেশি হয়ে গেছে।
গত বছর দেশে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ার পর সবচেয়ে বেশি রোগী পাওয়া যাচ্ছিল ঢাকা ও আশপাশের জেলায়। কিন্তু এখন রোগী বেশি পশ্চিম সীমান্তে ভারত লাগোয়া জেলাগুলোতে।
ভারতে করোনার নতুন ধরন শনাক্তের পর এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে দেশটির সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ করে দেয়া হয়। কিন্তু ভারতে বৈধপথে যাতায়াত নিয়ন্ত্রিত ও আসার পর রোগীদের কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করা গেলেও অরক্ষিত সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে যাওয়া-আসা ঠেকানো যায়নি। আর একপর্যায়ে করোনার ভারতীয় ধরন ছড়িয়ে পড়ে সীমান্তের জেলাগুলোতে। পরে এসব জেলাগুলোর পাশের জেলায় ছড়ায় রোগী।
জুনের শুরুতে নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ছিল ১০ শতাংশের নিচে। সেটি চার সপ্তাহের মধ্যে বেড়ে ২১ শতাংশ ছাড়িয়েছে।
হঠাৎ করোনা বাড়ার বিষয়ে বিশিষ্ট ভাইরোলজিস্ট ও কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক নজরুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সীমান্তে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট প্রবেশ করা, জনগণের স্বাস্থ্যবিধি না মানা এবং সঠিক সময়ে ভ্যাকসিনেশন না করতে পারার করোনা বিস্তার আবার বেড়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এই সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে শুধু লকডাউন দিয়ে দিলেই চবে না। সারা দেশে পরিকল্পনা করে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। লকডাউন চলমান থাকার অবস্থায় বেশি বেশি টেস্ট করতে হবে এবং আক্রান্ত ব্যক্তির পরিবারকে কোয়ারেন্টাইন করতে হবে।’
সংক্রমণ চক্র ভাঙতে অফিস আদালত সব কিছু বন্ধ করার পরামর্শ তার।
Covid 25/6/2021Infogramএরই মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে সোমবার থেকে সারা দেশে আবার কঠোর বিধিনিষেধ দেয়ার ঘোষণা এসেছে। এই বিধিনিষেধ এবার পরিচিতি পেয়েছে ‘শাটডাউন’ হিসেবে।
কী কী বিধিনিষেধ সেটি শনিবার প্রজ্ঞাপনে স্পষ্ট করা হবে। তবে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন সাংবাদিকদেরকে বলেছেন, ‘বাজেট পাসের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ প্রয়োজনীয় আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সীমিত সময়ের জন্য খোলা থাকবে।’
আর ব্যাংক খোলা থাকলে পুঁজিবাজারও খোলা থাকবে- জানিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি।
লকডাউন আর কঠোর লকডাউনেও খোলা ছিল পোশাক শিল্প কারখানা। এবার খোলা থাকবে কি না, সে বিষয়ে এখনও কিছু জানানো হয়নি।
শনাক্তের সংখ্যা, হার আর মৃ্ত্যু বেড়েই চলেছে
১ জুন ২৪ ঘণ্টায় ৪১ জনের মৃত্যুর তথ্য জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সেদিন শনাক্তের সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৭৬৫ জন। পরীক্ষার বিপরীতে শতকরা ৯.৫৬ শতাংশের করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে।
শনাক্তের সংখ্যা আর হার এবং মৃত্যুর সংখ্যা কীভাবে ধীরে ধীরে বেড়েছে, সেটি একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর পরিসংখ্যান দেখলেই বোঝা যায়।
৫ জুন মৃত্যু হয় ৪৩ জনের। সেদিন রোগী শনাক্ত হয় ১ হাজার ৬৭৫ জন। সেদিন পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ছিল ১১ শতাংশ।
৯ জুন মৃত্যু ৩৬ জন হলেও শনাক্ত বেড়ে হয় ২ হাজার ৫৩৭ জন। শনাক্তের হার বেড়ে হয় ১২.৩৩ শতাংশ।
১৪ জুন মৃত্যু বেড়ে হয় ৫৪ জন। শনাক্ত আরও বেড়ে হয় ৩ হাজার ৫০ জন। শনাক্তের হার বেড়ে হয় ১৪.৮০ শতাংশ।
১৮ জুনও মৃত্যু হয় ৫৪ জনের। শনাক্ত আরও বেড়ে হয় ৩ হাজার ৮৮৩ জন। শনাক্তের হার বেড়ে হয় ১৮.০২ শতাংশ।
২২ জুন মৃত্যু বেড়ে হয় ৭৬ জন। শনাক্ত আরও বেড়ে হয় ৪ হাজার ৮৪৬ জন। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার আরও বেড়ে হয় ১৯.৩৬ শতাংশ।
আর ২৫ জুন মৃত্যু হয়েছে ১০৮ জনের। বাংলাদেশে এর আগে ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ মৃত্যু ছিল এক দিনই। গত ১৯ এপ্রিল ১১২ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হয়েছে ৫ হাজার ৮৭৯ জন। আর পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ২১.২২ শতাংশ।
উচ্চ ঝুঁকিতে যেসব জেলা
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সব শেষ তথ্য অনুযায়ী সংক্রমণের হার অতি উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ জেলা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে- ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট, দিনাজপুর, রংপুর, কুড়িগ্রাম, জয়পুরহাট, নওগাঁ, বগুড়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, নাটোর, রাজবাড়ী, ঝিনাইদহ, মাগুরা, ফরিদপুর, যশোর, নড়াইল, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরিশাল, চাঁদপুর, ফেনী, শেরপুর, জামালপুর, টাঙ্গাইল, গাজীপুর, কিশোরগঞ্জ, সিলেট, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও খাগড়াছড়ি।
অন্যদিকে, উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ জেলা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে ঢাকা, পঞ্চগড়, নীলফামারী, গাইবান্ধা, ময়মনসিংহ, নেত্রকোণা, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, কুমিল্লা, মুন্সিগঞ্জ, লক্ষ্মীপুর ও রাঙ্গামাটি।