করোনাভাইরাস প্রতিরোধী ফাইজার-বায়োএনটেক ও মডার্নার টিকা নেয়ার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় দেখা দিচ্ছে হৃৎপিণ্ডের বিরল জটিলতা।
শিগগিরই এ বিষয়ে সতর্কতা জারির পরিকল্পনা করছে যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা এফডিএ।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়, মেসেঞ্জার রাইবোনিউক্লিক অ্যাসিডের (এমআরএনএ) ওপর ভিত্তি করে তৈরি এসব টিকা নেয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রে কয়েক শ কিশোর ও তরুণের হৃৎপিণ্ডে একধরনের প্রদাহ তৈরি হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় দফায় দফায় বৈঠক করছে যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের (সিডিসি) স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
তারা বলছেন, হৃৎপিণ্ডে প্রদাহের সঙ্গে টিকার সম্পর্ক রয়েছে বলেই প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। তবে এ ঝুঁকির কারণে টিকা নেয়ার উপযোগিতা উপেক্ষা করার সুযোগ নেই। টিকা নেয়ার পর হৃৎপিণ্ডে প্রদাহ তৈরি হলেও রোগীরা দ্রুতই সেরে উঠছেন এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার উপসর্গ চলে যাচ্ছে।
কয়েক মাস পর্যবেক্ষণ করে সিডিসি জানিয়েছে, টিকা নেয়ার পর হৃৎপিণ্ডে প্রদাহের ঘটনা বেশি ঘটেছে দ্বিতীয় ডোজ নেয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে। প্রদাহে আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষের সংখ্যা বেশি। ১২ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের মধ্যে এ হার অপ্রত্যাশিত রকমের বেশি।
৩০ বছরের কম বয়সী ৩০৯ জন এ পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ২৯৫ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
টিকা নেয়ার বিষয়ে মানুষের আস্থা রক্ষায় এর স্বাস্থ্য নিরাপত্তা আর করোনা ঠেকাতে কার্যকারিতার ওপর জোর দিয়ে বিবৃতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য ও জনসেবা বিভাগ। এতে সরকারি স্বাস্থ্যবিদ ও চিকিৎসকদের বিভিন্ন সংগঠন একযোগে জানিয়েছে, টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় হৃৎপিণ্ডে প্রদাহের ঘটনা অত্যন্ত বিরল।
চিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে এ ধরনের উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীদের খেয়াল রাখার নির্দেশ দিয়েছে এফডিএ। তাও এফডিএ ও সিডিসির এমন আভাসের পর পুঁজিবাজারে মডার্না ৪ দশমিক ২ শতাংশ আর ফাইজার ১ দশমিক ৪ শতাংশ দর হারিয়েছে।
ফাইজার-বায়োএনটেক আর মডার্নার এমআরএনএ প্রযুক্তিতে তৈরি করোনা প্রতিরোধী টিকার স্বাস্থ্যঝুঁকি খতিয়ে দেখতে বেশ কয়েকটি দেশে গবেষণা চলছে।
ভারতে প্রথম শনাক্ত হওয়া করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ যুক্তরাষ্ট্রে বাড়ছে বলে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় ১২ বছর থেকে শুরু করে সব বয়সীদের টিকা নেয়ার ওপর জোর দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন।
এপ্রিলের মাঝামাঝি পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে রেকর্ডসংখ্যক মানুষ টিকা নিলেও এর পর থেকে প্রথম ডোজ নেয়া দিন দিন কমছে। গত দুই মাসে টিকা নেয়ার হার কমেছে ৮৫ শতাংশ।
এ অবস্থায় আগামী ৪ জুলাই দেশটির স্বাধীনতা দিবসের আগেই ৭০ শতাংশ জনগোষ্ঠীকে কমপক্ষে এক ডোজ টিকা দেয়ার যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন, তা অর্জিত হবে না বলে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
সিডিসির তথ্য অনুযায়ী, ২১ জুন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে করোনা প্রতিরোধী এমআরএনএ টিকার দুই ডোজই নিয়েছে ১৩ কোটি ৮০ লাখের বেশি মানুষ।