দেশে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকা প্রথম নিয়েছেন রাহাত চৌধুরী মুন্না। তার বয়স ৪৬ বছর।
তিনি একজন ব্যবসায়ী। থাকেন রাজধানীর মালিবাগে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) কনভেনশন সেন্টারে সোমবার সকাল ৯টা ৪৯ মিনিটে মুন্নাকে টিকা দেয়ার মধ্য দিয়ে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ।
দেশে প্রয়োগ করা হবে ফাইজারের টিকার ১ লাখ ৬২০ ডোজ।
গত ৭ ফেব্রুয়ারি গণটিকাদান শুরু হওয়ার সময় বাংলাদেশে প্রথম টিকা নেন রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স রুনু ভেরোনিকা কস্তা। এরপর দেশে ব্যবহার হওয়া দ্বিতীয় টিকা চীনের সিনোফার্মের বিবিআইবিপি-করভি দেয়া শুরু হয় ২৫ মে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থী অনন্যা সালাম সমতা প্রথম এই টিকা নেন।
ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকা নেয়ার পর রাহাত চৌধুরী মুন্নার সঙ্গে কথা হয় নিউজবাংলার।
তিনি জানান, এপ্রিলে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা পেতে নিবন্ধন করেছিলেন তিনি। সিরামের টিকা শেষ হওয়ার কারণে এত দিন অপেক্ষায় ছিলেন। পরে গত রাতে এসএমএস আসে টিকা নেয়ার জন্য।
তিনি আরও বলেন, ‘ছোটবেলায় যেভাবে টিকা নিয়েছেন, সেভাবেই টিকা দেয়া হয়েছে। কোনো ধরনের ব্যথা অনুভব হয়নি।’
মুন্না বলেন, ‘ফাইজারের টিকা প্রথম ব্যক্তি হিসেবে নিতে পেরে আনন্দ অনুভব করছি। টিকা নেয়ার পর এখন কোনো ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়নি।
‘টিকা দেওয়া স্থানে এখনও ব্যথা অনুভব করছি না। ভালো লাগছে; শরীরেও কোনো ব্যথা অনুভূত করছি না।’
টিকা নেয়ার পর ৩০ মিনিট বিশ্রাম নেন মুন্না। পরে প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।
রাজধানীর তিন হাসপাতালে সকাল সাড়ে ৯টার পর শুরু হওয়া টিকাদান কার্যক্রম চলবে বেলা ৩টা পর্যন্ত। তিন হাসপাতলের প্রতি কেন্দ্রে ১২০ জন করে মোট ৩৬০ জনকে সোমবার টিকা দেয়া হবে।
বাংলাদেশ গত ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে গণটিকা শুরু করে ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে আসা টিকা দিয়ে। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা উদ্ভাবিত এই টিকা কেনার চুক্তি হয়েছিল ৩ কোটি ৪০ লাখ।
তবে রপ্তানিতে ভারত সরকারের নিষেধাজ্ঞার কারণে ৭০ লাখ দেয়ার পর সিরাম আর টিকা দিতে পারেনি। এ অবস্থায় অন্য দেশ থেকে টিকা পাওয়ার চেষ্টা করছে বাংলাদেশ। আর ফাইজারের কিছু টিকা পাওয়া গেছে। তবে তা চাহিদার তুলনায় একেবারেই কম।
উৎপাদক প্রতিষ্ঠান দাবি করছে, কার্যকারিতার দিক থেকে ফাইজারের টিকা করোনা প্রতিরোধে ৯৫ শতাংশ পর্যন্ত কার্যকর। তবে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা কোভিশিল্ড, সিনোফার্মের টিকা বিবিআইবিপি-করভি, রাশিয়ার স্পুৎনিক-ভির মতো ফাইজারের টিকাও নিতে হয় দুই ডোজ করে।
ন্যায্যতার ভিত্তিতে বিশ্বের সব দেশে করোনার টিকা নিশ্চিতের প্ল্যাটফর্ম কোভ্যাক্সের মাধ্যমে ফাইজারের এই টিকা দেয়া হয়েছে বাংলাদেশকে। এই টিকার দাম তুলনামূলক বেশি। আর এর কার্যকারিতাও বেশি। এ কারণে এই টিকার প্রতি মানুষের আগ্রহ আছে।
ফাইজারের টিকা সারা দেশে পরিবহন করার মতো কোল্ড চেইন সিস্টেম না থাকায় এগুলো মূলত রাজধানীতেই দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ফাইজারের টিকা অবশ্যই মাইনাস ৬০ থেকে ৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয়।