উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা দিনাজপুরে কঠোর লকডাউন ঘোষণা করা হলেও করোনা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিধিনিষেধ হিসেবে যেসব প্রশাসন যেসব নির্দেশনা দিয়েছে, সেগুলো মানতে চরম অনীহা দেখাচ্ছে মানুষ।
শহরের সরকারি কলেজ মোড়, মহারাজার মোড় ও ফুলবাড়ী বাসস্ট্যান্ডের পাশাপাশি শহরে প্রবেশের সব পথগুলো বাঁশের ব্যরিকেড দিয়ে বন্ধ করে দেয়া হলেও সাধারণ মানুষকে দমানো যাচ্ছে না।
সেখানে দায়িত্বরত পুলিশ ও আনসার সদস্যদের কাছে ওষুধ, বাচ্চার খাবারসহ নানা জিনিসের জরুরি প্রয়োজনের দোহাই দিচ্ছেন তারা। এভাবে প্রতিদিনই শহরে ঢুকছে অসংখ্য মানুষ।
দিনাজপুরে করোনার সংক্রমণ ও এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে থাকায় গত ১৫ জুন মঙ্গলবার থেকে কঠোর লকডাউন চলছে। লকডাউনের পঞ্চম দিন শনিবার শহরে প্রবেশের সব পথে বাঁশের ব্যারিকেড দেখা গেলেও সেগুলো কাজে লাগতে দেখা যায়নি।
তেমন কোনো কাজ না থাকলেও ওষুধ-খাবারের জরুরি প্রয়োজনের দোহাই দিয়ে দিচ্ছেন ব্যারিকেডে দায়িত্বরত পুলিশ ও আনসার সদস্যদের। তাদের আর আটকে রাখার মতো পর্যাপ্ত লোকবল নেই প্রশাসনের। এই সুযোগে বাঁশের ব্যরিকেডের নিচ দিয়ে শহরের ঢুকতে দেখা গেছে অনেক মানুষকে। শহরে গণপরিবহন বন্ধ থাকার কথা থাকলেও চলছে ইজিবাইক, ভ্যান ও রিকশা। বেশিরভাগ দোকানপাটও রয়েছে খোলা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা যথা সাধ্য বাধা দিচ্ছেন। কিন্তু মানুষ কথা শুনতে চায় না। নিষেধ করলে নানা অজুহাত দেখায়। বোঝা যায়, বেশিরভাগ বানানো কথা। কিন্তু যাচাই করা সম্ভব হয় না। তাই ছেড়ে দিতে হয়।
শনাক্ত আরও ৬৫, মৃত্যু ৩
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য বলছে, দিনাজপুরে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ৬৫ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়েছে। এ সময়ে ১৩৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়; শনাক্তের হার ৪৭ শতাংশ।
সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় সদর উপজেলায় ১১১ জনের করোনা পরীক্ষা করা হয়, ভাইরাসটি শনাক্ত হয়ে ৫৫ জনের; শনাক্তের হার প্রায় ৫০ শতাংশ।
একই সময়ে জেলায় করোনায় মারা গেছেন ৩ জন। তারা হলেন চিরিরবন্দর উপজেলার ভিয়াইল তালপুকুর গ্রামের ৮৪ বছর বয়সী আনিসুর রহমান, ফুলবাড়ী উপজেলার কাটাবাড়ী গ্রামের ৮৪ বছর বয়সী এম এ হান্নান ও হাকিমপুর পৌর শহরের হিলি বাজারের ৫০ বছর বয়সী রোকেয়া বেগম।
তাদেরকে নিয়ে জেলায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে ১৫০ জনের মৃত্যু হলো। এর মধ্যে চলতি মাসে মৃত্যু হয়েছে ২২ জনের।
দিনাজপুরের সিভিল সার্জন ও জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সদস্য সচিব আব্দুল কুদ্দুস বলেন, ‘জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক কঠোর লকডাউন চলছে। তবে প্রশাসনের চেয়ে সাধারণ মানুষদের আগের সচেতন হতে হবে।’