করোনার উচ্চ সংক্রমণ ঠেকাতে রাজশাহী নগরীজুড়ে চলছে দুই সপ্তাহের লকডাউন। এরই মধ্যে সংক্রমণ বেড়ে গেছে গ্রামে। প্রতিদিন বাড়ছে মৃত্যু। মৃত্যুর তালিকায় নতুন করে যুক্ত হচ্ছেন তরুণরা।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গ্রামে করোনা সংক্রমণ হঠাৎ বাড়ে গেছে। রাজশাহীর আশপাশের জেলাগুলোতেও বেড়েছে রোগী। এ অবস্থায় শুধু রাজশাহী নগরীর লকডাউনে কতটা ফল মিলবে, তা নিয়েও দেখা দিয়েছে প্রশ্ন। এর মধ্যে উপজেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না কেউ।
রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী বলেন, ‘এবারের করোনার যে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট, সেটি কেউ মানছেন না। হাসপাতালে আগে দেখেছি গ্রামের কেউ করোনা আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে আসেননি। এখন করোনা ওয়ার্ডগুলোতে যারা ভর্তি আছেন, তাদের ৩০ থেকে ৪০ ভাগই গ্রামের শ্রমজীবী মানুষ।’
তিনি বলেন, ‘শ্রমজীবী মানুষের পাশাপাশি করোনা ইউনিটে মৃত্যুর মিছিলে যোগ হচ্ছেন তরুণ ও যুবকরা। আগে সাধারণত বেশি বয়সের মানুষ আক্রান্ত হতেন। এই ধারাও পরিবর্তন হচ্ছে, যারা কম বয়সী তারাও আক্রান্ত হচ্ছেন।’
সিভিল সার্জন অফিস জানায়, গত ১৫ মার্চ রাজশাহীর সব কটি উপজেলা করোনামুক্ত হয়েছিল। ওই সময় সিটি করপোরেশন এলাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৪৩ রোগী থাকলেও জেলার কোনো উপজেলাতে একজন রোগীও ছিলেন না।
এ অবস্থা বেশি দিন থাকেনি। ১৫ এপ্রিল উপজেলা পর্যায়ে রোগীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৬০ জনে। তখন সিটি করপোরেশন এলাকায় রোগী ছিলেন ১ হাজার ১৪৮ জন।
১৫ মে উপজেলা পর্যায়ে রোগী কমে দাঁড়ায় ২২ জনে। এদিন রাজশাহী সিটি এলাকায় রোগী ছিলেন ৭৩৮ জন।
তবে জুনে বাড়তে থাকে রোগী। শহরের পাশাপাশি পাল্লা দিয়ে গ্রামেও বেড়ে যায় করোনার সংক্রমণ। ১৫ জুন রাজশাহীর উপজেলাগুলোতে করোনা রোগীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৬৭৪ জনে। এদিন সিটি এলাকায় রোগীর সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৫৫৫ জন।
করোনায় মৃত্যুও বেড়ে গেছে জুনে। মার্চে সিটি করপোরেশন এলাকা ছাড়া রাজশাহী জেলার নয় উপজেলায় মারা যান ২১ জন। এপ্রিলে এই সংখ্যা বেড়ে হয় ২৩। মে মাসে ২৭। আর জুনের ১৫ দিনেই মারা গেছেন ৪৫ জন।
রাজশাহীর সিভিল সার্জন কাইয়ুম তালুকদার বলেন, ‘আমাদের উপজেলাগুলোতে রোগী বেড়েছে। বিষয়টি আমাদের নলেজে আছে।’শুধু শহরের লকডাউনের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. নওশাদ আলী বলেন, ‘করোনা তো শুধু রাজশাহী নগরে না, আশপাশের জেলাগুলোতেও ব্যাপক হারে ছড়িয়েছে। শহরের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করা না গেলে শহরের লকডাউনের ফল পাওয়া মুশকিল।’
রাজশাহীর জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল বলেন, ‘উপজেলা পর্যায়ে আগে টেস্ট হতো না। এখন উপজেলায় র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট করাচ্ছি বলেই এই রিপোর্ট আসছে। দুই সপ্তাহ ধরে টেস্ট ফ্রি করে দিয়েছি। উপজেলাগুলোতে আগেও করোনা ছিল, এখনও আছে।’