আগামী জুলাই মাসে আবারও গণটিকা কার্যক্রম শুরু হতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমেদ কায়কাউস। বৃহস্পতিবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ আশা জানান।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, টিকার জন্য ১৪ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী। টিকা পেতে প্রতিদিনই বিভিন্ন দেশ এবং প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা চলছে। আমরা অনেক দূর এগিয়েছি।
‘আমরা টিকা কিনে নিতে চাই। কারও দয়া চাই না। আশা করছি জুলাই থেকে গণটিকা কার্যক্রম শুরু করা যাবে।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে টিকার যে বাজার, সেখানে কিন্তু কেউ সরাসরি বিক্রি করছে না। আমরা প্রথম দিন থেকেই পৃথিবীর সব জায়গায় চেষ্টা করেছি। তখন আমাদের কাছে যে অপশনটা ছিলো সেটা আমরা গ্রহন করেছি। এখন পর্যন্ত পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে কম দামেই কিন্তু সেটা আমরা পেয়েছিলাম।
‘অরটারনেটিভ সোর্সের জন্য আমরা দিনরাত খুঁজে বেড়াচ্ছি। আমরা যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপ, চীন সহ সব দেশে আমাদের রাষ্ট্রদূতেরা যোগাযোগ করে চলেছে। আমরাও যোগাযোগ করছি। এখন কয়েকটা দেশের সাথে আমাদের কথাও হয়েছে। আমরা প্রত্যাশা করছি দ্রুত আমরা টিকা পাবো।’
মুখ্যসচিব বলেন, ‘আমরা প্রথমে যে তালিকাটা করেছিলাম, সেখানে যারা ক্রিটিক্যাল ছিলেন তাদের কিন্তু টিকা দেয়া হয়ে গেছে। প্রায়ই শোনা যায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র টিকা দিয়েছে বা দিচ্ছে। আপনারা খোঁজ নিয়ে দেখেন এখনো চূড়ান্ত কিছু হয়নি।
‘আমরা সব ভাবেই চেষ্টা করছি। কিন্তু যার কাছে আছে, সে যদি বিক্রি না করেন তাহলে কি করার আছে?’
করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে বাংলাদেশের পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হয়ে উঠছে। করোনা শনাক্তের সংখ্যা ও মৃত্যুর ঘটনা ওঠানামা করছে প্রতিদিনই। এরই মাঝে টিকাস্বল্পতায় বন্ধ হয়ে গেছে গণটিকা। যদিও স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক শনিবার থেকে গণটিকা ফের চালু করার ব্যাপারে আশাবাদ জানিয়েছিলেন।
এদিকে টিকার সংকটকালে চীন উপহার হিসেবে বাংলাদেশকে চলতি সপ্তাহেই দিয়েছে সিনোফার্মের করোনা প্রতিরোধী ৬ লাখ ডোজ টিকা। এর এক মাস আগে ৫ লাখ ডোজ টিকা বাংলাদেশকে উপহার দিয়েছিল চীন, যা ১২ মে বাংলাদেশে এসে পৌঁছায়। সব ডোজই চীনের সিনোফার্ম উদ্ভাবিত বিবিআইবিপি-করভি টিকার।
বাংলাদেশ প্রথমে করোনার অক্সফোর্ড উদ্ভাবিত টিকা ব্যবহারের পক্ষে ছিল। এ জন্য ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে ৩ কোটি ৪০ লাখ টিকা কেনার চুক্তিও করে।
প্রতি মাসে আসার কথা ছিল ৫০ লাখ করে। কিন্তু দুই মেয়াদে ৭০ লাখ টিকা পাঠানোর পর ভারত সরকারের নিষেধাজ্ঞায় আর কোনো টিকা পাঠাতে পারেনি। কেনা টিকার বাইরে উপহার হিসেবে বাংলাদেশকে ৩৩ লাখ ডোজ টিকা দিয়েছে ভারত।
ন্যায্যতার ভিত্তিতে টিকা বিতরণে গড়ে ওঠা জোট কোভ্যাক্স থেকেও আসার কথা ছিল ৬ কোটি ৭০ লাখ টিকা। পরে জানানো হয় আরও বেশি আসবে। কিন্তু সেখান থেকে আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না।
চলতি মাসের প্রথম দিন কোভ্যাক্স থেকে মাত্র ১ লাখ ৬২০ ডোজ ফাইজারের টিকা এসেছে দেশে। এই পরিস্থিতিতে টিকাস্বল্পতায় বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচিই বন্ধ হয়ে যেতে চলেছে।
এমন অবস্থায় টিকার বিকল্প উৎস হিসেবে চীন ও রাশিয়া থেকে টিকা আনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে চীন থেকে ৪ থেকে ৫ কোটি টিকা কেনার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি দুটি দেশের টিকা দেশে উৎপাদনের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
দেশে করোনার উর্ধ্বমুখীতার মধ্যে আবারও কড়াকড়ি আরোপ করা হবে কী-না- জানতে চাইলে মুখ্য সচিব আহমেদ কায়কাউস বলেন, ‘সারা দেশে একসঙ্গে আর লকডাউনের পরিকল্পনা আপাতত নেই। প্রয়োজনে স্থানীয়ভাবে প্রশাসন লকডাউনের সিদ্ধান্ত নেবে।’