দেশের উত্তরাঞ্চলীয় জেলাগুলোর পাশাপাশি রাজবাড়ী এবং নোয়াখালীতে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। এই ঢেউ ঢাকার কাছাকাছি বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। বলেছেন, করোনা নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে অর্থনীতিতে অচলাবস্থা তৈরি হবে।
করোনা পরিস্থিতি ও করোনা প্রতিরোধী টিকা নিয়ে বুধবার সচিবালয়ের মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের উত্তর দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘(করোনা ঢেউ) ঢাকার কাছাকাছি চলে আসছে। এ জন্য আমাদের সকলকে সজাগ হতে হবে। স্বাস্থ্যবিধিগুলো মেনে চলতে হবে। করোনা যদি নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারি, তাহলে আমাদের অর্থনীতিও ভালোভাবে সচল থাকবে না।’
করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় বেশি পরিমাণে টেস্ট করার ওপর জোর দিচ্ছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তার যুক্তি, এর মধ্য দিয়ে সঠিকভাবে আক্রান্তের সংখ্যা নির্ণয় করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ সহজ হবে।
যেখানে সংক্রমণ বেশি সেখানে বিনা মূল্যে টেস্ট করার সুযোগ দেয়া হয়েছে বলেও জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তবে নমুনা টেস্টের সংখ্যা বাড়ছে না বলে আক্ষেপ করেন তিনি।
যেখানে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে, সেখানে লকডাউন দেয়া হচ্ছে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘স্থানীয় প্রশাসন আছে, তারা লকডাউন দিচ্ছে এবং লকডাউনকে কার্যকর করার চেষ্টা করছে।’
সীমান্ত বন্ধ রাখার পাশাপাশি সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে বেশ কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে বলেও জানান মন্ত্রী। বলেন, ‘ফরমাল চ্যানেল নয়, সেদিক দিয়েও লোক যাওয়া-আসা করেন। ইনফর্মাল চ্যানেল দিয়ে লোক যাওয়া-আসা করে, সেটা থামানো কঠিন। আমাদের পুলিশ বিজিবি প্রশাসন সকলেই চেষ্টা করছে। যতখানি সম্ভব এ বর্ডার নিয়ন্ত্রণ করা যায়।’
শনিবার থেকে গণটিকা
করোনা নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পাশাপাশি টিকার খুব প্রয়োজন বলে মনে করেন মন্ত্রী। কিন্তু বিশ্বে যে টিকা উৎপাদন হচ্ছে তার ৯০ শতাংশ উন্নত দেশগুলো নিয়ে রাখছে।
এক সমীক্ষার কথা তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, ‘যদি উন্নত দেশের ৭৩ জন টিকা পায়, তাহলে অনুন্নত দেশের ১ জন পায়। কাজেই ভ্যাকসিনের ডিস্ট্রিবিউশনের মধ্যে সমতা নেই।’
অনেক দেশের আগে টিকার সংস্থান করা হলেও বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে সেটি ধরে রাখা সম্ভব হয়নি বলে মনে করেন জাহিদ মালেক।
উপহার হিসেবে চীন থেকে মোট ১১ লাখ ভ্যাকসিন এসেছে বলে জানান মন্ত্রী। সেগুলো দিয়েই দ্বিতীয় দফায় গণটিকা কর্মসূচি শুরু করতে যাচ্ছে সরকার।
মন্ত্রী বলেন, ‘এগুলোকে দেয়ার ব্যবস্থা শুরু করছি আমরা ১৯ তারিখ থেকে। টিকা কার্যক্রম আবার শুরু হচ্ছে। আমরা আশা করি ৫ লাখ লোককে দেব।’
দ্বিতীয় ডোজ হাতে রেখে দেয়ার পরিকল্পনা থেকেই এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
কাদের দেয়া হবে
৫ লাখ লোক বেশি নয় বলে মানছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তাই ক্যাটাগরি করেই দেয়া হবে এই টিকা।
তিনি বলেন, ‘প্রবাসে যারা যাবেন চাকরিতে, তাদের জন্য টিকা চেয়েছেন প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী। বিজিএমইএ থেকে আসছেন সভাপতি। তাদের ওখানে দেশি-বিদেশি যারা কাজ করেন, তাদের জন্য কিছু টিকা দেয়ার বিষয়ে কথা বলেছেন।’
মন্ত্রী জানালেন একটা ‘প্রায়োরিটি লিস্ট’ আছে। সেই মোতাবেক দেয়া হবে টিকা।
এই তালিকায় আছে: যারা আগে নিবন্ধন করেও টিকা পাননি তাদের নাম, সরকারি স্বাস্থ্যকর্মী ও পুলিশ সদস্য, সরকারি ও বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও ডেন্টালের শিক্ষার্থীরা, নার্স, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক শিক্ষার্থীরা, সরকারি মেগা প্রকল্পে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা, বিদেশগামী জনশক্তি, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মী, করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়াদের মৃতদেহ সৎকারে নিয়োজিতরা, দেশে বসবাসরত চীনা নাগরিক এবং এর বাইরেও বিদেশি নাগরিকরা।
স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ
মন্ত্রী জানালেন, যেখানে সংক্রমণ বেড়েছে সেখানে চিকিৎসক, সেবিকার সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি নিয়োগ নিয়েও ভাবছে সরকার।
তিনি বলেন, ‘নর্দার্ন রিজিয়নে যে হাসপাতালগুলো আছে, যেখানে রোগী অনেক বেড়েছে, সেখানে আমরা নতুন করে আরও ডাক্তার, নার্স আমরা প্রেরণ করেছি, যা যা যন্ত্রপাতি, আরও যদি বেশি প্রয়োজন হয় সেটাও দিয়েছি, ওষুধপত্রও দিয়েছি।’
১৪০০ নতুন নার্স নিয়োগ দেয়া হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘অল্প সময়ে অনেক কিছু কার্টেল করে আমরা নিয়োগ দিয়েছি। বাড়তি জনবলের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও নির্দেশনা দিয়েছেন। যেখানে যেখানে কমতি আছে, তাড়াতাড়ি করে এই করোনার মধ্যেও আমরা নিয়োগ দিয়েছি ২০ হাজার এবং আরও যাতে নিয়োগ দেয়া হয়, সে বিষয়েও তিনি আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন।’