একে তো করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের ঊর্ধমুখী সংক্রমণ; তার ওপর ভাইরাসটি প্রতিরোধী টিকার সংকট। পরিস্থিতি মোকাবিলায় দেশেই টিকা উৎপাদনের ওপর জোর দিচ্ছে সরকার। এ বিষয়ে এখন সক্ষমতা যাচাই চলছে বলে জানালেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বুধবার সভাকক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব তথ্য জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেন, ‘যতগুলো টিকা উৎপাদনকারী দেশ, কোম্পানি, প্রতিষ্ঠান আছে আমরা প্রত্যেককে দুটো প্রপোজাল দিই। একটি হলো আমরা সরাসরি ক্রয় করতে চাই, আমাদের দেন ফিনিশড প্রোডাক্ট। পাশাপাশি এটাও বলি, আমাদের দেশে আপনারা টিকা উৎপাদন করেন যৌথ উদ্যোগে- সেটা সরকারি বা বেসরকারি পর্যায়ে।’
করোনা প্রতিরোধে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ৩ কোটি ডোজ টিকা কিনতে উৎপাদক প্রতিষ্ঠান ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে চুক্তি করে সরকার। কিন্তু চুক্তি থাকলেও টিকা দিতে ব্যর্থ হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘দুঃখজনক হলেও সত্য যে সিরাম ইনস্টিটিউট পরবর্তীতে আমাদের ভ্যাকসিন দিতে পারেনি। যেহেতু ভারতে নিজের অবস্থা অনেক খারাপ হয়ে গিয়েছিল এবং তাদেরই ভ্যাকসিনের অনেক বেশি প্রয়োজন দেখা দিল। ফলে আমাদের দেশে আমরা সেভাবে ভ্যাকসিন পাইনি।’
এদিকে চীন থেকে টিকা কেনার প্রক্রিয়া অনেকখানি এগিয়ে গেলেও টিকার দাম আগেভাগে প্রকাশ পেয়ে যাওয়ায় বেজায় চটেছে দেশটি।
মন্ত্রী বলেন, ‘তাদের (চীন) অনেক মানাতে হচ্ছে। তাদের সঙ্গে অনেক কথা-বার্তা বলতে হচ্ছে। আমরা হয়ত অনেক আগে পেয়ে যেতাম। এটুকুর কারণে ডিলে হয়ে গেল। আর কত ডিলে হবে, সেই বিষয়টাও আমরা বুঝতে পারছি না।’
টিকা পেতে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও আলোচনা চলছে। টিকার যোগান ঠিক রাখতে উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাংলাদেশে উৎপাদনের প্রস্তাব দিচ্ছে সরকার।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘রাশিয়াকেও (প্রস্তাব) দিয়েছি, চীনকেও দিয়েছি এবং অন্যান্য যারা আছে সকলকে দেয়া আছে। উনারা এটা এখন ভেবে চিন্তে দেখছেন। উনারা এখনই উৎপাদনে চলে আসবে, সরাসরি সেভাবে আমাদের কাছে কেউ আসেনি।’
সরাসরি উৎপাদনের সিদ্ধান্ত না হলেও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান আগ্রহ দেখিয়েছে বলে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘তারা যাচাই বাছাই করে দেখবে, আমাদের দেশের সক্ষমতা কী আছে সরকারিভাবে, বেসরকারিভাবে। এটার ওপর নির্ভর করে তারা সিদ্ধান্ত নেবে।’
সংকট মোকাবিলায় দেশে টিকা উৎপাদন ব্যবস্থাকে আরও জোরদার করা হচ্ছে বলে জানান জাহিদ মালেক। বললেন, বেসরকারি খাতকেও এক্ষেত্রে উৎসাহিত করতে চায় সরকার।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘প্রাইভেট সেক্টরে উৎপাদন করলেও আমরা খুশি হব। তাদের আমরা অনুমোদন দেব। সরকারিভাবেও ভ্যাকসিন তৈরি করার জন্য আমরা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটা মিটিংও হয়ে গেছে। এ বিষয়টি নিয়ে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।’
কবে নাগাদ উৎপাদন হতে পারে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘ভ্যাকসিন একটা খুব হাইলো টেকনিক্যাল বিষয়। পৃথিবীর মাত্র কয়েকটি দেশ তৈরি করে। কাজেই সময় লাগবে। লোকালি নিজেরা ভ্যাকসিন ডেভেলপ করে এটাকে প্রোডাকশনে নেয়া, একটু টাইম লাগবে। তবে আমরা ইতোমধ্যে কাজকর্ম শুরু করে দিয়েছি।’