বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

টিকা: রাশিয়া থেকে মিলতে পারে সুখবর

  •    
  • ১৬ জুন, ২০২১ ১৮:১০

‘তাদের অনেক মানাতে হচ্ছে। তাদের সঙ্গে অনেক কথাবার্তা বলতে হচ্ছে। আমরা হয়তো অনেক আগে পেয়ে যেতাম। এটুকুর কারণে ডিলে হয়ে গেল। আর কত ডিলে হবে, সেই বিষয়টাও আমরা বুঝতে পারছি না।’

‘ভালোবাসার নৌকা পাহাড় বাইয়া চললেও’ মান ভাঙেনি চীনের। চীনের সিনোফার্মের টিকার দাম প্রকাশ হওয়ায় টিকা পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তার মেঘ এখনও কাটেনি। তাই চুক্তির সব কাজ শেষ হলেও টিকা কবে আসবে জানাতে পারেননি স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

রাশিয়া থেকেও টিকা আনার জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে সরকার। আলোচনা গড়িয়েছে অনেক দূর। বুধবারই দেশটি থেকে একটা সুখবরের আশা করছে সরকার।

বুধবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ তথ্য জানিয়েছেন মন্ত্রী।

এবার বেশ সতর্ক সরকার। তাই রাশিয়ার টিকার দাম নিয়ে নিশ্চুপ মন্ত্রী। ভুলের পুনরাবৃত্তি করতে চায় না সরকার।

এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘রাশিয়ার সঙ্গেও আমরা নন-ডিসক্লোজার সই করেছি। কাজেই দামটা আমরা এখনই বলতে পারব না। যখন সময় হবে তখন আপনারা জানতে পারবেন।’

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক

আর তখনই চীনের অভিমান নিয়ে মুখ খোলেন মন্ত্রী। বলেন, ‘চীনের (টিকার) দামটি যখন জনসমক্ষে চলে আসল, সে কারণে চীন আমাদের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়েছিল। নারাজ হয়েছিল। যেহেতু আমরা নন-ডিসক্লোজারে সই করেছিলাম।’

নন-ডিসক্লোজার নিয়েও নিজের ব্যাখ্যা তুলে ধরেন মন্ত্রী। বলেন, ‘নন-ডিসক্লোজার হলো একটি রাষ্ট্রীয় কমিটমেন্ট, আরেক রাষ্ট্রের কাছে, যে আমরা এই তথ্যটা গোপন রাখব। এই চুক্তি আমরা করেছি। সেই চুক্তি যদি আমরা ভঙ্গ করি, তাহলে এক রাষ্ট্রের সঙ্গে আরেক রাষ্ট্রের চুক্তি ভঙ্গ করা হয়।’

মন্ত্রী জানালেন, শুধু এই একটি কারণে বন্ধুপ্রতিম চীন থেকে টিকা পেতে দেরি হচ্ছে।

‘তাদের অনেক মানাতে হচ্ছে। তাদের সঙ্গে অনেক কথাবার্তা বলতে হচ্ছে। আমরা হয়তো অনেক আগে পেয়ে যেতাম। এটুকুর কারণে ডিলে হয়ে গেল। আর কত ডিলে হবে, সেই বিষয়টাও আমরা বুঝতে পারছি না।’

চীনের সিনোফার্মের দেড় কোটি টিকা আনতে চায় সরকার। ২৭ মে চীনের কাছ থেকে দেড় কোটি টিকা কেনার প্রস্তাব অনুমোদন দেয় ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।

সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে ৪ ডলারে টিকা কিনতে চুক্তি সইয়ের পর এই টিকার দাম বেশি হয়েছে কি না, এ নিয়ে তুমুল বিতর্ক হয়েছে বাংলাদেশে। সরকারবিরোধীদের দাবি, অন্যান্য দেশ যে দামে টিকা কিনছে বাংলাদেশ তার চেয়ে বেশি দিচ্ছে।

চীনের কাছ থেকে টিকা কেনার আলোচনার সময় দাম কত হবে, এ বিষয়ে কোনো কিছুই বলা হচ্ছিল না। তবে গত ২৭ মে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকের পর দামসংক্রান্ত তথ্য পাওয়া যায়।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. শাহিদা আকতার বলেন, ‘চীন থেকে প্রতি চালানে ৫০ লাখ করে তিন ধাপে দেড় কোটি ডোজ করোনার টিকা কেনার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। এক ডোজ টিকা ১০ ডলার ধরে হিসাব করলে দেড় কোটি ডোজ আনতে সরকারের খরচ হবে ১ হাজার ২৬৭ কোটি টাকা। সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে এ টিকা কেনা হবে।’

চুক্তি হওয়ার আগেই দাম গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়ে পড়ায় তৈরি হয় জটিলতা।

পরে বিষয়টি নিয়ে ভুল-বোঝাবুঝির অবসান হয়েছে বলে জানিয়েছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। নিউজবাংলাকে তিনি জানান, বাংলাদেশ দুঃখ প্রকাশ করে চিঠি দেয়ার পর ভুল-বোঝাবুঝির অবসান হয়েছে।

ঘটনার ১৭ দিন পার হয়ে গেলেও বিষয়টি নিয়ে চীনের মান এখনও ভাঙেনি বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তাই বলে আশা ফুরিয়ে যায়নি এখনও।

মন্ত্রী বলেন, ‘ইতিমধ্যে চীন থেকে ভ্যাকসিন আনার জন্য চুক্তিতে যা যা সই করতে হয়, সেগুলো আমরা যাচাই-বাছাই করে বহুবার বসে সেগুলো সই-স্বাক্ষর করে চীনে পাঠিয়ে দিয়েছি।’

টিকা সংগ্রহে চেষ্টার ত্রুটি নেই জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘এখন আমরা অপেক্ষায় আছি তারা একটি শিডিউল দেবে। কবে, কী পরিমাণ টিকা তারা আমাদের দেবে তার অপেক্ষায় আমরা এখনও আছি। সে তথ্যটা এখন আমাদেরকে জানানো হয়নি চীনের পক্ষ থেকে। আমরা প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে যাচ্ছি জানার জন্য।’

করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পাশাপাশি ভাইরাস প্রতিরোধী টিকার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন মন্ত্রী। কিন্তু আক্ষেপ করে বলেন, ‘বিশ্বে যে টিকা উৎপাদন হচ্ছে তার ৯০ শতাংশ উন্নত দেশগুলো নিয়ে রাখছে।’

এক সমীক্ষার কথা তুলে ধরে জাহিদ মালেক বলেন, ‘যদি উন্নত দেশের ৭৩ জন টিকা পায়, তাহলে অনুন্নত দেশের পায় ১ জন। কাজেই ভ্যাকসিনের ডিস্ট্রিবিউশনের মধ্যে সমতা নেই।’

বিশ্বের অনেক দেশের আগেই বাংলাদেশে টিকার সংস্থান হলেও বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে সেটি ধরে রাখা সম্ভব হয়নি বলে মনে করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে সিরাম ইনস্টিটিউট পরবর্তীতে আমাদের ভ্যাকসিন দিতে পারেনি। যেহেতু ভারতে নিজের অবস্থা অনেক খারাপ হয়ে গিয়েছিল এবং তাদেরই ভ্যাকসিনের অনেক বেশি প্রয়োজন দেখা দিল। ফলে আমাদের দেশে আমরা সেভাবে ভ্যাকসিন পাইনি।’

করোনভাইরাস প্রতিরোধী টিকা পেতে রাশিয়ার সঙ্গেও আলোচনা চলমান রয়েছে বলে জানান মন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘রাশিয়ার সঙ্গে আমরা অনেক দূর আলোচনা করেছি। অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। চুক্তি নিয়েও আলোচনা হয়েছে। মোটামুটি আমরা একটা সমঝোতার পর্যায়ে পৌঁছে গেছি। এখন আমরা অপেক্ষা করছি যে তারা কবে কী পরিমাণ টিকা দেবে।’

ইতিবাচক সিদ্ধান্তের আশা রেখে মন্ত্রী বলেন, ‘এ বিষয়ে আলোচনা বেশ কিছুদিন ধরে চলছে। আজও আলোচনা চলবে। আজকেও হয়তো একটা ভালো সিদ্ধান্ত রাশিয়ার কাছ থেকে পেতে পারি।’

ইতিবাচক কোনো সিদ্ধান্ত এলে সেটি গণমাধ্যমকে জানানো হবে বলেও নিশ্চিত করেন মন্ত্রী।

যুক্তরাষ্ট্র থেকেও টিকা আনার চেষ্টা চলমান আছে বলেও দাবি করেন তিনি। বলেন, ‘জনসন অ্যান্ড জনসন যেটা আছে, সেটারও অনুমোদন দেয়া হয়েছে। সিনোভ্যাকের অনুমোদন আমরা দিয়েছি। এর উদ্দেশ্য হলো যেখান থেকে হোক আমরা যাতে তাড়াতাড়ি ভ্যাকসিন পেতে পারি।’

এ বিভাগের আরো খবর