দাম জানিয়ে দেয়ার কারণে চীন উদ্ভাবিত সিনোফার্মের টিকাপ্রাপ্তি নিয়ে যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল তা এখনও কাটেনি বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। বললেন, সেই সাবধানতা থেকে রাশিয়ার টিকার দামও জানাতে চায় না সরকার।
সচিবালয়ে বুধবার সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘চীনের টিকার দাম প্রকাশ পাওয়ায় টিকা পেতে ঝামেলা হচ্ছে। তাদের মানাতে হচ্ছে। সে কারণে পিছিয়ে গেলাম। রাশিয়ার ক্ষেত্রে নন ডিসক্লোজার হওয়ায় দাম এখন বলা যাবে না।’
চীনের টিকা কেনার প্রস্তুতি যখন এগিয়ে চলেছে, তখন এই বিষয়টিতে অনিশ্চয়তা চলে আসে এক সরকারি কর্মকর্তার কারণে।
চীনের সিনোফার্মের দেড় কোটি টিকা আনতে চায় সরকার। ২৭ মে চীনের কাছ থেকে দেড় কোটি টিকা কেনার প্রস্তাব অনুমোদন দেয় ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।
সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে ৪ ডলারে টিকা কেনার চুক্তি হওয়ার পর এই টিকার দাম বেশি হয়েছে কি না, এ নিয়ে তুমুল বিতর্ক হয়েছে বাংলাদেশে। সরকারবিরোধীদের দাবি, অন্যান্য দেশ যে টাকায় টিকা কিনছে, বাংলাদেশ দিয়েছে এর চেয়ে বেশি।
চীনের কাছ থেকে টিকা কেনার আলোচনার সময় দাম কত হবে, এ বিষয়ে কোনো কিছুই বলা হচ্ছিল না। তবে গত ২৭ মে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকের পর এই বিষয়টি নিয়ে তথ্য পাওয়া যায়।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. শাহিদা আকতার বলেন, ‘চীন থেকে প্রতি চালানে ৫০ লাখ করে তিন ধাপে দেড় কোটি ডোজ করোনার টিকা কেনার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। এক ডোজ টিকা ১০ ডলার ধরে হিসাব করলে দেড় কোটি ডোজ আনতে সরকারের খরচ হবে ১ হাজার ২৬৭ কোটি টাকা। সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে এ টিকা কেনা হবে।’
চুক্তি হওয়ার আগেই দাম গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়ে পড়ায় তৈরি হয় জটিলতা।
পরে বিষয়টি নিয়ে ভুল-বোঝাবুঝির অবসান হয়েছে বলে জানিয়েছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। নিউজবাংলাকে তিনি জানান, বাংলাদেশ দুঃখ প্রকাশ করে চিঠি দেয়ার পর ভুল-বোঝাবুঝির অবসান হয়েছে।
ঘটনার ১৭ দিন পার হয়ে গেলেও বিষয়টি নিয়ে চীনের মান এখনও ভাঙেনি বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
চীনের টিকার চুক্তির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘চীন থেকে টিকা আনতে চুক্তিতে যা যা সই করার ছিল, সেটা করে পাঠিয়ে দিয়েছি। তারা একটা শিডিউল দেবে, কবে তারা কত টিকা দেবে। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।’
দ্রুত সময়ে টিকা পেতে রাশিয়ার ও যুক্তরাষ্ট্রের যোগাযোগ হচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘রাশিয়া থেকে একটা ভালো সিদ্ধান্ত পেতে পারি। পেলে আপনাদের জানানো হবে।’
এর মধ্যে চীন বাংলাদেশকে উপহার হিসেবে আরও ৬ লাখ ডোজ টিকা দিয়েছে। এর আগে প্রথম দফায় গত ১২ মে ৫ লাখ ডোজ টিকা পাঠায় বেইজিং। আর ৩১ মে কোভ্যাক্স থেকে ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকার ১ লাখ ৬২০ ডোজ টিকা পায় বাংলাদেশ।
চীন থেকে প্রথম দফায় টিকা পাওয়ার পর ঢাকার সরকারি চারটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিক্ষার্থীদের টিকা প্রদান শুরু হয়। আরও টিকা হাতে আসায় টিকাদানের পরিসর আরও বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আগামী শনিবার থেকে আবার গণটিকা দেয়া শুরু হচ্ছে। এই টিকা আগে যারা নিবন্ধন করেছেন তারা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পাবেন। চীনের ১১ লাখ টিকা থেকে ৫ লাখ মানুষকে দেব। বাকিগুলো দ্বিতীয় ডোজের জন্য হাতে রেখে দেব।’
দেশীয়ভাবে টিকা উৎপাদনের বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বেসরকারি ও সরকারি খাতে টিকা তৈরির বিষয়েও ভাবা হচ্ছে। কয়েকটি বৈঠকও হয়েছে। এটার জন্য সময় লাগবে। কাজকর্ম শুরু হয়েছে।
করোনা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে অর্থনীতি ঠিক রাখা কঠিন হবে বলে মন্তব্য করেন জাহিদ মালেক। নমুনা পরীক্ষার পরিমাণ আরও বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে প্রতিদিন ৪০ হাজার থেকে ৫০ হাজার করোনা পরীক্ষা করার সক্ষমতা রয়েছে। করোনা উপসর্গ দেখা দিলেই পরীক্ষা করাতে হবে।
‘সীমান্তে যেসব এলাকায় করোনা সংক্রমণ বেড়েছে, সেসব এলাকায় লকডাউন দেয়া হয়েছে। স্থানীয়ভাবেই লকডাউন দেয়া হয়েছে। সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে। সীমানা সিল করেছে। ইনফরমাল চ্যানেলে মানুষের যাতায়াত আছে। সেটা সামাল দেয়া কঠিন। ফলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।’