রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে বেড সঙ্কটে ওয়ার্ডের মেঝে ও বারান্দায় করোনার চিকিৎসা নিচ্ছেন রোগীরা।
এই হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে বেড সংখ্যা ২৭১টি। এখন ভর্তি আছে ২৯৪ জন।
হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী জানান, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ ছাড়াও আশপাশের জেলাগুলোতে করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির কারণে চাপ পড়েছে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।
প্রতিদিন করোনা আক্রান্ত রোগীরা আসছেন এখানে ভর্তি হতে। হাসপাতালের সেন্ট্রাল অক্সিজেন সমৃদ্ধ ওয়ার্ডকে করোনা ওয়ার্ডে রূপান্তরিত করেও পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছে না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
তিনি বলেন, ‘হাসপাতালের আরও একটি ওয়ার্ডে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সংযোগ দেয়ার কাজ চলছে। অক্সিজেন সংযোগ দেয়া শেষ হলে ওই ওয়ার্ডেও করোনার রোগী ভর্তি করা হবে।
‘চিন্তিত হওয়ার কারণ নেই। আমরা কোনো রোগীকেই ফিরিয়ে দেবো না। যারা ভর্তি হতে আসবেন তাদের ভর্তি নেয়া হবে, চিকিৎসাও দেয়া হবে।’
শিক্ষানগরী হিসেবে পরিচিত রাজশাহীর পথঘাট এখন ফাঁকা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকায় ছাত্রদের আনাগোনা তো নেইই, সাধারণ মানুষও ঘরবন্দি।
নগরের পয়েন্টে পয়েন্টে পুলিশের চেকপোস্ট। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বের হলেই দিতে হচ্ছে জরিমানা।
মহানগর পুলিশের পাশাপাশি লকডাউন কার্যকরে মাঠে আছে জেলা পুলিশের রিজার্ভ ফোর্স সদস্যরা। নগরজুড়ে আছে র্যাবের টহল। কাজ করছে আনসার সদস্যরাও।
জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিলের মতে, সবদিক মিলিয়ে লকডাউন ভালোভাবেই কার্যকর হচ্ছে। তবে কিছু সংখ্যক উঠতি বয়সী উৎসুক তরুণ লকডাউন দেখার জন্য রাস্তায় বের হচ্ছেন। তাদের থামাতে প্রয়োজনে আরও কঠোর হবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি ঠেকাতে গত শুক্রবার বিকেল ৫টা থেকে রাজশাহীতে শুরু হয়েছে সাতদিনের সর্বাত্মক লকডাউন। শহরের তিনটি প্রবেশমুখ আমচত্বর, কাশিয়াডাঙ্গা ও কাটাখালী এলাকাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে বসানো হয়েছে চেকপোস্ট।
পণ্যবাহী পরিবহন, পিকআপভ্যান ও মালবাহী ট্রাক ছাড়া কিছুই রাজশাহী শহরে ঢুকতে বা বের হতে দেয়া হচ্ছে না। শহরের প্রবেশমুখগুলোতে যানবাহন থামিয়ে দেয়ায় অনেকেই হেঁটে গন্তব্যে যাচ্ছেন।
লকডাউনের তৃতীয় দিন দেখা যায়, ওষুধের দোকান আর কাঁচাবাজার ছাড়া সব দোকানই বন্ধ। কেউ কেউ দোকানের সামনের গেট লাগিয়ে বা অর্ধেক খোলা রেখে বিক্রির চেষ্টা করছেন। তবে ক্রেতার সংখ্যা খুবই কম।
যানবাহনের মধ্যে কিছু রিকশা ও মোটরসাইকেল চলাচল করলেও রাজশাহীর সঙ্গে সারা দেশের বাস ও ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ আছে।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু আসলাম নিউজবাংলাকে জানান, নগরবাসীকে স্বাস্থ্যবিধি ও লকডাউন মানাতে মাঠে রয়েছে চারটি ভ্রাম্যমাণ আদালত। স্বাস্থ্যবিধি ও লকডাউন না মানায় শনিবার ভ্রাম্যমাণ আদালত ৫৭ জনকে ৩৪ হাজার ৮০০ টাকা জরিমানা করেছে।
রোববার দুপুরে লকডাউন পরিস্থিতি দেখতে নগরীর সাহেব বাজার এলাকায় যান জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল।
তিনি বলেন, ‘মানুষ লকডাউন কার্যকরে যথেষ্ট সহযোগিতা করছে। দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। পরিবহনও বন্ধ। কিন্তু কিছু উৎসুক তরুণ লকডাউন দেখার জন্য রাস্তায় আসছে। এটা দুঃখজনক।
‘এসব দেখার জন্য মহানগর পুলিশকে বলা হয়েছে। তবে আমরা চাচ্ছি না আমাদের আরও কঠোর হতে হোক। আশা করি মানুষ নিজেরাই সচেতন হবে ও লকডাউন কার্যকরে সহায়তা করবে।’