উপহার হিসেবে বাংলাদেশকে দেয়া সিনোফার্মের করোনা প্রতিরোধী আরও ৬ লাখ ডোজ টিকা এখন দেশের পথে। বিকেল সাড়ে ৫টায় টিকা নিয়ে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর দুটি সি ১৩০ পরিবহন বিমানের ঢাকা পৌঁছানোর কথা রয়েছে।
এদিকে দ্রুত সময়ের মধ্যে কো-প্রডাকশনের ঘোষণা আসতে পারে জানিয়েছে ঢাকার চীনা দূতাবাস।
ঢাকায় নিযুক্ত চীনা উপরাষ্ট্রদূত হ্যালং ইয়ান রোববার সকালে এক ফেসবুক পোস্টে বেইজিং বিমানবন্দরে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর পাঠানো পরিবহন বিমানে টিকা লোডের ছবি পোস্ট করেছেন।
সেখানে তিনি টিকা আনতে বেইজিং বিমানবন্দরে যাওয়া বিমানবাহিনীর কর্মকর্তাদের গ্রুপ ছবিও পোস্ট করেছেন।
হ্যালং ইয়ান লেখেন, ‘রেডি ফর টেক অফ।’
একই ছবি পোস্ট করেছে চীনা দূতাবাসও।
একই সময় দেয়া অন্য একটি পোস্টে তিনি লেখেন, ‘ভ্যাকসিন কো-প্রোডাকশন।’
এটি শিগগির শুরুর কথাও জানান পোস্টে। এমনকি এর জন্য তিন থেকে ছয় মাস সময় প্রয়োজন বলেও উল্লেখ করেন সেখানে।
১০ জুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বলেছিলেন, ‘শিগগির দেশে যৌথভাবে টিকা উৎপাদন বিষয়ে একটি আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়া হবে।’
তিনি বলেছিলেন, বাংলাদেশে টিকা উত্পাদনের জন্য স্থানীয় ওষুধ প্রস্তুতকারী কোম্পানি নির্বাচন করতে সংশ্লিষ্টরা দেখবেন, তারা আসবেন এবং প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সক্ষমতা দেখে উৎপাদনে যেতে পারে।
‘একবার উৎপাদন শুরু হলে দেশে কোনো টিকার সংকট তৈরি হবে না। আশা করি, আমরা নিজেদের প্রয়োজন মিটিয়ে ভ্যাকসিন রপ্তানিকারক হয়ে উঠব।’
বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং এর আগে বলেছিলেন, চীনের কাছ থেকে বাংলাদেশের টিকা সংগ্রহ এবং যৌথভাবে করোনাভাইরাসের টিকা উৎপাদনের ব্যাপারে দুই দেশের মধ্যে ফলপ্রসূ আলোচনা চলছে।
গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকা থেকে বেইজিংয়ের উদ্দেশে টিকা আনতে রওনা হয় বিমানবাহিনীর দুটি পরিবহন বিমান।
নিজের ফেসবুক পেজে গত শুক্রবার সকালে পোস্টে হ্যালং ইয়ান টিকা পরিবহন ও মজুতের তিনটি ছবি পোস্ট করেন। তখন তিনি জানান, ৬ লাখ টিকা প্রস্তুত। ১৩ জুন তা বাংলাদেশে পৌঁছাবে।
অন্যদিকে ১০ জুন রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বলেন, ‘১৩ তারিখে ৬ লাখ ভ্যাকসিন আসবে। আমরা এখান থেকে দুটি সি-১৩০ বিমান পাঠাচ্ছি। ওরা ওই দিনই গিয়ে নিয়ে আসবে।’
আবদুল মোমেনকে গত ২১ মে টেলিফোন করে এই টিকা দেয়ার ঘোষণা দেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই।
উপহার হিসেবে এর আগেও ৫ লাখ ডোজ টিকা বাংলাদেশকে উপহার দিয়েছিল চীন, যা ১২ মে বাংলাদেশে এসে পৌঁছায়। সব ডোজই চীনের সিনোফার্ম উদ্ভাবিত বিবিআইবিপি-করভি টিকার।
বাংলাদেশ প্রথমে করোনার অক্সফোর্ড উদ্ভাবিত টিকা ব্যবহারের পক্ষে ছিল। এ জন্য ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে ৩ কোটি ৪০ লাখ টিকা কেনার চুক্তিও করে।
প্রতি মাসে আসার কথা ছিল ৫০ লাখ করে। কিন্তু দুই মেয়াদে ৭০ লাখ টিকা পাঠানোর পর ভারত সরকারের নিষেধাজ্ঞায় আর কোনো টিকা পাঠাতে পারেনি। কেনা টিকার বাইরে উপহার হিসেবে বাংলাদেশকে ৩৩ লাখ ডোজ টিকা দিয়েছে ভারত।
ন্যায্যতার ভিত্তিতে টিকা বিতরণে গড়ে ওঠা জোট কোভ্যাক্স থেকেও আসার কথা ছিল ৬ কোটি ৭০ লাখ টিকা। পরে জানানো হয় আরও বেশি আসবে। কিন্তু সেখান থেকে আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। চলতি মাসের প্রথম দিন কোভ্যাক্স থেকে মাত্র ১ লাখ ৬২০ ডোজ ফাইজারের টিকা এসেছে দেশে।
এই পরিস্থিতিতে টিকাস্বল্পতায় বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচিই বন্ধ হয়ে যেতে চলেছে।
এমন অবস্থায় টিকার বিকল্প উৎস হিসেবে চীন ও রাশিয়া থেকে টিকা আনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে চীন থেকে ৪ থেকে ৫ কোটি টিকা কেনার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি দুটি দেশের টিকা দেশে উৎপাদনের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।