জনসাধারণকে করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষায় উদ্বুদ্ধ করতে নওগাঁয় বিনামূল্যে র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট চালু করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
শহরে রাস্তার পাশে উন্মুক্ত স্থানে টেবিল-চেয়ার পেতে স্বাস্থ্যকর্মীরা দৈবচয়নের ভিত্তিতে মানুষকে ডেকে ডেকে টেস্ট করাচ্ছেন।
সিভিল সার্জন অফিস জানায়, গত রোববার নওগাঁ জিলা স্কুল মাঠে আনুষ্ঠানিকভাবে বিনামূল্যে করোনা টেস্ট শুরু হয়। সেদিন জেলায় র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টে ১ হাজার ১০৮ জনের নমুনার মধ্যে ৯৫টি পজিটিভ এসেছে। শনাক্তের হার ৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ।
ফ্রি টেস্টের ফলে পাওয়া করোনা শনাক্তের হার উদ্বেগজনক। আক্রান্ত ব্যক্তিদের অধিকাংশই করোনা উপসর্গবিহীন বলে জানান স্বাস্থ্যকর্মীরা।
যত বেশি নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা করা হবে মানুষের মাঝে সচেতনতা তত বাড়বে বলে জানায় জেলা স্বাস্থ্যবিভাগ। র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টে ৩০ মিনিটের মধ্যে ফল পাওয়া যায়।
নওগাঁ শহরে জিলা স্কুল ও এটিএম মাঠে বসানো হয়েছে ফ্রি র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট কেন্দ্র। পাশাপাশি জেলার অন্য সব উপজেলায়ও চলছে ফ্রি টেস্ট ক্যাম্পের কার্যক্রম।
রোবরার থেকে বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত জেলার ১১টি উপজেলায় ২ হাজার ২৭১ জনের র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট করা হয়। এতে ২৫০ জনের শরীরে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়।
স্বাস্থ্যবিভাগ জানায়, নানা কারণে অনেকেই করোনা পরীক্ষা করান না। স্বাস্থ্যবিভাগ থেকে ভ্রাম্যমাণ পরীক্ষা কেন্দ্রের মাধ্যমে বিনা খরচে র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট করানো হচ্ছে। উপসর্গহীন অনেকের শরীরে করোনা পজিটিভ এসেছে। এ কারণে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের ফ্রি টেস্ট করতে স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।
শহরের তাজের মোড়ের বাসিন্দা ভ্যান চালক আহাদ আলী বলেন, ‘হামি ভ্যান চালা তিনজনের সংসার চালায় ম্যালা কষ্টে। হামার রোদ আর গরোমের জন্নি এ্যানা সর্দি লাগাই থাকে। করোনার যে অবস্থা ভয় হচ্ছিল করোনা হলো নাকি। যদি করোনা পরীক্ষা করায় তালে ১০০ ট্যাকা লাগবে। এই ভয়ে করোনা পরীক্ষা করনি এতদিন।
‘বৃহস্পতিবার বিকালে তাজের মোড়োত ট্যাকা ছাড়াই টেস্ট করানি। আল্লাহর রহমতে কোনো সমস্যা হয়নি। হামি সুস্থ আছি করোনা নাই হামার শরীলোত।’
শহরের মাস্টারপাড়া মহল্লার দিনমজুর আকবর আলীর সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘সারাদিন মজুরের কাম করা যা পাই সেডা দিয়া চার জনের সংসার কোন রকমে চলে। এতদিন করোনার পরীক্ষা হামি করনি। শহরোত মাইকিং হচ্ছে। যারকে ট্যাকা দিয়া করোনার পরীক্ষা করার মত অবস্থা নাই তারা ফ্রিতে পরীক্ষা করবার পারবে। তাই ভাবনু পরিক্ষা করাই ফেলি।
‘এর পর আজ সকালে শহরের এটিম মাঠোত স্বাস্থ্যকর্মী ভাইকেরে মাধ্যমে পরীক্ষা করাই ফেলনু। ৩০ মিনিট পর জানবার পারনু হামার দেহোত কোন করনা নাই। শুনা শান্তি পানু। ফ্রি পরীক্ষা করার নিয়ম করা হামাকে মত গরিব মানুষের জন্নি ভালোই হচে। এর জন্নি সরকারোক ধন্যবাদ জানাই।’
নওগাঁর ডেপুটি সিভিল সার্জন মঞ্জুর-এ মোর্শেদ বলেন, ‘গরিব মানুষ টাকার অভাবে করোনা টেস্ট করতে পারে না। এ কারণে গত ৬ জুন থেকে জেলায় ফ্রি অ্যান্টিজেন টেস্ট শুরু করা হয়েছে। গরিবদের জন্যই মূলত এ সুবিধা দেয়া হচ্ছে। যেখানে প্রতিদিন ২০০ থেকে ২৫০ জনের অ্যান্টিজেন টেস্ট করা হচ্ছে। আমরা যত বেশি স্যাম্পল টেস্ট করব তত বেশি ফল পাব। কম পরিমাণ নমুনা টেস্টে তেমন ফল মেলে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘মানুষকে জানান দিতে উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যকর্মীদের দিয়ে নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। জেলার প্রতিটি উপজেলায় দ্বৈবচয়ন পদ্ধতিতে ফ্রি অ্যান্টিজেন টেস্টের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মানুষকে নমুনা দিতে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। প্রথমে কেউ নমুনা দিতে চাচ্ছিল না। তাদের বুঝিয়ে নমুনা নেয়া হয়েছে এবং উপসর্গবিহীন অনেকেরই করোনা পজেটিভ এসেছে। জেলাজুড়ে ফ্রিতে নমুনা টেস্টের মাইকিং করা হচ্ছে। প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ফ্রি টেস্টের ব্যবস্থা রয়েছে।’
দুই-এক দিনের মধ্যে একটি ফরম করা হবে। দরিদ্ররা ফরম পূরণ করে ফ্রি টেস্ট করাবেন বলে জানান ডেপুটি সিভিল সার্জন।
নওগাঁ সিভিল সার্জন অফিসের মেডিক্যাল অফিসার (ডিজিজ কন্ট্রোল) আশীষ কুমার সরকার জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৭২ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৯৩ ব্যক্তির সদর হাসপাতালে অ্যান্টিজেন পরীক্ষা এবং ১৭৯ ব্যক্তির রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পিসিআর ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়েছে। করোনা পজিটিভ এসেছে ৪৯ জনের। গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্তের হার ২৫ দশমিক ২৬ শতাংশ।
জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় কোয়ারেন্টিনে নেয়া হয়েছে ২৬৪ জনকে। নওগাঁয় করোনায় আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত মারা গেছেন ৪৯ জন।