করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষার ভুয়া সনদ দেয়ার প্রমাণ পেয়ে রাজধানীর চারটি হাসপাতাল ও রোগ পরীক্ষাগারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
প্রতিষ্ঠানগুলো হলো রাজধানীর পল্টনের আল জামী, বাংলামটরের স্টিমজ হেলথ কেয়ার, বিজয় সরণির সিএসবিএফ এবং মেডিনোভার মিরপুর শাখা।
এসব প্রতিষ্ঠান এখন থেকে কোনো পরীক্ষা করাতে পারবে না।
অধিদপ্তরের হাসপাতাল শাখার নতুন পরিচালক ফরিদ হোসেন মিয়া নিউজবাংলাকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমাদের কাছে এসব হাসপাতাল থেকে করোনার ভুয়া সনদসহ নানা ধরনের অভিযোগ প্রতিনিয়ত আসছিল। সেই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল হাসপাতালগুলো বন্ধ করে দিতে চিঠি দিয়েছি।
করোনার নমুনা পরীক্ষা না করিয়েই প্রতিবেদন দেয়ার ঘটনায় এ মিলিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো ব্যবস্থা নিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
পুরানা পল্টনের আল জামি ডায়াগনস্টিক সেন্টার
গত বছরের এপ্রিলে প্রথমবারের মতো রিজেন্ট হাসপাতাল ও জেকেজি হেলথ কেয়ারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়।
গ্রেপ্তার হন রিজেন্টের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহেদ আর জেকেজির চেয়ারম্যান সাবরিনা আরিফ চৌধুরী ও তার স্বামী আরিফুল হক চৌধুরী।
এরপর দ্বিতীয় দফায় একই অভিযোগে ব্যবস্থা নেয়ার ঘটনা ঘটল।
অধিদপ্তরের চিঠিতে যা বলা হয়
বুধবার অধিদপ্তরের পরিচালক ফরিদ হোসেন মিয়া স্বাক্ষরিত চিঠিতে এসব প্রতিষ্ঠানকে বিদেশগামী যাত্রীদের আরটি-পিসিআর টেস্ট ও নমুনা সংগ্রহের কার্যক্রম স্থগিত করার নির্দেশ দেয়া হয়।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সম্প্রতি এসব প্রতিষ্ঠান বিদেশগামী করোনা পজিটিভ যাত্রীকে নেগেটিভ সনদ দিয়েছে। সেই সঙ্গে প্রতারণার মাধ্যমে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করেছে। এছাড়া নমুনা সংগ্রহের নামে বুথে দালাল নিয়োগের মতো অনৈতিক কর্মে যুক্ত হয়েছে এ চার প্রতিষ্ঠান।’
রাজধানীর বিজয়সরণীর সিএসবিএফ হেলথ সেন্টার
অধিদপ্তরের ডিএইচআইএস-২ এর ডাটাবেজ যাচাইয়ের প্রাথমিক অনুসন্ধানে এ চার প্রতিষ্ঠানের এসব অপকর্মের সত্যতা নিশ্চিত হয় বলে জানিয়েছেন তিনি।
পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক মহামারিতে তাদের এসব অনৈতিক কর্মকাণ্ড অনাকাঙ্ক্ষিত ও জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি স্বরূপ। এটি দেশের ভাবমূর্তি ভয়ঙ্কররূপে ক্ষুণ্ন করেছে।
আগের দিন অধিদপ্তরের মুখপাত্র নাজমুল ইসলাম বেসরকারি রোগ পরীক্ষাগারের বদলে বিদেশগামী যাত্রীদের করোনা পরীক্ষা করতে আর্মি স্টেডিয়ারে যাওয়ার পরামর্শ দেন।
তিনি বলেন, ‘কিছু বিদেশগামী যাত্রী দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে ভুয়া করোনা সনদ সংগ্রহ করছে। আমি তাদের বলব, আপনারা দয়া করে সরাসরি আর্মি স্টেডিয়ামে চলে যান এবং করোনা পরীক্ষা করান। কারো খপ্পরে পড়বেন না।’
কী বলছে মেডিনোভা
করোনা পরীক্ষার ভুয়া সনদ দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে মেডিনোভা মেডিক্যাল সার্ভিসের মিরপুর শাখার ব্যবস্থাপক (অ্যাডমিন) টি এম জুলফিকার (সাবু) নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে কিছু কর্মকর্তা আমাদের হাসপাতালে আসেন। পরীক্ষাগার দেখে চলে যান। এরপর গতকাল একটা চিঠি পাঠিয়ে আমাদের করোনা পরীক্ষার সকল কার্যক্রম বন্ধ রাখতে নির্দেশ দিয়েছে। কেন দেয়া হলে এ বিষয়ে আমি কিছুই বলতে পারব না।’
বাংলামোটরে রূপায়ন টাওয়ারের স্টিমজ হেলথ কেয়ার
এ পর্যন্ত কী পরিমাণ সনদ দেয়া হয়েছে, এমন প্রশ্নে এই কর্মকর্তা ফোনে তথ্য দেয়া যাবে না বলে হাসপাতালে যেতে বলেন।
অন্য তিনটি হাসপাতালে ফোন করলেও কেউ তা রিসিভ করেননি।
বিদেশগামীদের করোনা পরীক্ষায় নতুন নির্দেশনা
# পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বিদেশগামী যাত্রীদের কোভিড-১৯ নমুনা সংগ্রহের জন্য ল্যাবগুলোর নিজস্ব ভবনের বাইরে স্থাপিত সব ধরনের নমুনা সংগ্রহ কেন্দ্রের কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।
# বিদেশগামী যাত্রীদের নমুনা কোনো অবস্থাতেই বাসাবাড়ি থেকে সংগ্রহ করা যাবে না।
# বিদেশগামী যাত্রীদের নমুনা সংগ্রহের সময় মূল পাসপোর্ট যাচাই করে, পাসপোর্ট নম্বর উল্লেখপূর্বক নমুনা সংগ্রহ ফর্ম পূরণ করতে হবে। কোনোক্রমেই পাসপোর্টের ফটোকপি গ্রহণযোগ্য হবে না।
# বিমানবন্দরে বিদেশগামী যাত্রীদের কোভিড-১৯ পরীক্ষা সনদ, পাসপোর্ট নম্বর দিয়ে যাচাই করা হবে। শুধু টেলিফোন/মোবাইল নম্বর প্রমাণ হিসেবে গ্রহণযোগ্য হবে না।
# সাত দিনের মধ্যে কোনও পজিটিভ রিপোর্ট থাকলে ওই যাত্রীকে দেশত্যাগের অনুমতি দেওয়া যাবে না।
# কোনও বিদেশগামী যাত্রী কোভিড-১৯ পজিটিভি হলে, সে কমপক্ষে সাত দিন পর শুধু সরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত ল্যাবে পুনরায় পরীক্ষা করাবেন এবং পরবর্তী সময় যদি নেগেটিভ সনদপ্রাপ্ত হন, সে ক্ষেত্রে দেশত্যাগ করতে পারবেন।
# আরটি-পিসিআর ল্যাবের ব্যাপারে কোনও ধরনের অভিযোগ উত্থাপিত হলে, ল্যাবটির কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত করে তদন্তসাপেক্ষে পরবর্তী অনুমোদনের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।
# কোনও বিদেশগামী যাত্রীর কোভিড-১৯ পরীক্ষা করার ক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি উভয় স্থানে প্রথমে পাসপোর্ট নম্বর দিয়ে যাচাই করে দেখতে হবে যে, সে গত ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে অন্য কোথাও আরটি-পিসিআর পরীক্ষা করেছে কিনা। করে থাকলে এবং পজিটিভ হলে তাকে সাত দিন পর্যন্ত পুনরায় আরটি-পিসিআর পরীক্ষা করার সুযোগ দেয়া যাবে না।