চিকিৎসাকর্মীর স্বল্পতা আর সরকারের কম ব্যয়ের কারণে চিকিৎসার খরচ মেটাতে ঋণের জালে জড়িয়ে পড়ছেন মানুষ।
চিকিৎসা সেবায় কর্মীর পরিমাণ দক্ষিণ এশিয়ায় আনুপাতিক হারে সবচেয়ে কম বাংলাদেশেই। আর চিকিৎসাব্যয়ের জন্য যে টাকা দরকার হয়, সরকার খরচ করে তার ছয় ভাগের এক ভাগ মাত্র।
বুধবার ঢাকায় একটি অনলাইনে ওয়েবিনারে জানানো হয়, চিকিৎসার জন্য সরকার স্বাস্থ্য খাতে বছরে ব্যয় করে মাথাপিছু ১০ ডলার বা ৮০০ টাকার একটু বেশি। কিন্তু পুরোপুরি রোগ নিরাময়ে জনপ্রতি গড়ে ৬০ ডলার সমপরিমাণ অর্থ প্রয়োজন হয়।
মানুষ তার সক্ষমতা অনুযায়ী জনপ্রতি গড়ে আরও ৩০ ডলার নিজ থেকে খরচ করেন। আর বাকি থেকে যায় ২০ ডলার, যার দায় নিয়ে মানুষকে দেনাগ্রস্ত জীবনযাপন করতে হয়।
ওয়েবিনারের আয়োজন করে ডক্টরস ফর হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট নামে চিকিৎসকদের একটি সংগঠন। আলোচ্য বিষয় ছিল ‘জাতীয় বাজেট: প্রেক্ষিত-স্বাস্থ্য ও পরিবেশ শীর্ষক’ ওয়েবিনারে এ তথ্য জানানো হয়।
আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংগঠনটির যুগ্ম সম্পাদক এম এইচ ফারুকী। করোনা মহামারির মধ্যে চিকিৎসাব্যয় মেটাতে আরও অনেক মানুষ দরিদ্র হবেন বলে আশঙ্কা করেন তিনি।
স্বাস্থ্য খাতে জনবল সংকট রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রতি ১০ হাজার মানুষের জন্য একজন চিকিৎসক, ২৩ জন নার্স ও ধাত্রী প্রয়োজন। আর সেবা বিশ্বমানের করতে হলে স্বাস্থ্যকর্মী লাগবে ৪৪ জন। কিন্তু বাংলাদেশে এই সংখ্যাটি অনেক কম।
এই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘একজন চিকিৎসকের সঙ্গে থাকার কথা তিনজন সেবিকা ও পাঁচজন অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী। আমাদের আছে শূন্য দশমিক তিনজন সেবিকা আর শূন্য দশমিক ছয়জন অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবাকর্মী। এই স্বল্প জনবলের মধ্যে ২০১৯ সালে ২৭ দশমিক ২৭ শতাংশ পদই শূন্য ছিল।’
প্রতিবেশী দেশগুলোর স্বাস্থ্যসেবার অবস্থা তুলে ধরে তিনি জানান, প্রতি ১০ হাজার মানুষের জন্য স্বাস্থ্য খাতে ভারতে জনবল ১৮ দশমিক ৫ জন, ভুটানে ১৯ দশমিক ৩ জন, নেপালে ৩৩ দশমিক ৫ জন, শ্রীলঙ্কায় ৩৬ দশমিক ৮ জন, মালদ্বীপে ১১৮ জন। সেগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে রয়েছে মাত্র ৮ দশমিক ৩ জন।
হোসেন জিল্লুর বলেন, স্বাস্থ্য খাতের চরম দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে জাতীয় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু করে তুলেছে।
তিনি বলেন, মহামারির মধ্যে স্বাস্থ্য খাতে গুরুত্ব দিয়ে বরাদ্দ বেড়েছে, তবে সেই বরাদ্দ সঠিকভাবে খরচ করা সম্ভব হবে কি না তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। এই খাতকে কীভাবে দুর্নীতিমুক্ত করা যায় সেটি নিয়ে ভাবার পরামর্শও দিয়েছেন তিনি।
দেশের ২৫ থেকে ৩০ বছর বয়সী মানুষকে সঠিকভাবে স্বাস্থ্যসেবা না নিয়ে মরতে হচ্ছে বলেও আক্ষেপ করেন হোসেন জিল্লুর।
ওয়েবিনারে বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক সভাপতি অধ্যাপক রশিদ ই মাহবুব, সিপিডির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ আব্দুল হামিদও বক্তব্য রাখেন।