করোনা রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় সেবা দিতে হিমশিম অবস্থায় রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ড ও আইসিইউয়ের কোনো বেড খালি নেই। রোগী ভর্তি করা হচ্ছে যাচাই-বাছাই করে। পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রয়োজনে বারান্দায় রোগী রেখে চিকিৎসা দেয়ার কথাও ভাবা হচ্ছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, করোনা ওয়ার্ডে শয্যা রয়েছে ২৩২টি। রোববার দুপুর পর্যন্ত রোগী ভর্তি ছিলেন ২৩৫ জন। সোমবার সকালে এই সংখ্যা দাঁড়ায় ২৩২ জনে।
হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য আইসিইউ ১৮টি। সোমবার সব বেড ভর্তি হয়ে যায়। এখনও হু হু করে আসছে রোগী।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, করোনা উপসর্গের রোগী ভর্তির ক্ষেত্রে চলছে যাচাই-বাছাই। চাইলেই হাসপাতালে ভর্তি হতে পারবেন এমন নয়। মূলত যেসব রোগীর অক্সিজেন জরুরি শুধু তাদেরকে ভর্তি করা হচ্ছে।
বেড শেষ হয়ে গেলেও দুশ্চিন্তার কিছু নেই বলে আশ্বস্ত করছে ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষ। রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস বলেন, আরও কয়েকজন রোগী ভর্তি নেয়ার সুযোগ আছে। ওয়ার্ডগুলোতে কয়েকটি বাড়তি বেডের ব্যবস্থা করা যাবে। ওয়ার্ডের বারান্দাতেও রোগী রাখার সুযোগ আছে।
রাজশাহীতে ঈদের পর অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে শুরু করে করোনা রোগী। রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ এখন করোনার হটস্পটে পরিণত হয়েছে। গত ৭ মে এ হাসপাতালে করোনা রোগীর সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ৫৭ জনে। ঈদের আগমুহূর্ত ও পরে রোগী বাড়তে শুরু করে। ১২ মে রোগীর সংখ্যা বেড়ে হয় ৭৭ জন। এর পর থেকে সংখ্যা বাড়ছেই। বাড়ছে মৃত্যু।
সবশেষ রোববার সকাল থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সাতজন করোনা রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৩ জন এবং রাজশাহী, নাটোর, নওগাঁ ও পাবনার একজন করে।
ডা. সাইফুল ফেরদৌস জানান, চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে এ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে মারা গেছেন ৬০ জন। এর মধ্যে ৪২ জন মারা গেছেন করোনা শনাক্ত হওয়ার পর। বাকিরা উপসর্গ নিয়ে মারা যান।
২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২০ জন। এর মধ্যে রাজশাহীর ১৬ জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৩ জন ও নওগাঁর একজন। একই সময় হাসপাতাল থেকে সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২৩ জন।
রাজশাহীর দুইটি ল্যাবে রোববার ৬০৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করে আরও ২৪১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে রাজশাহীর ৪৭৭ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১৯৭ জনের করোনা পজিটিভ এসেছে। আর চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৪৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করে নয়জন এবং নওগাঁর ৮৪ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৩৫ জনের করোনা পজিটিভ এসেছে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, করোনা সংক্রমণের হার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজশাহী মেডিক্যালে বেড়ে গেছে রোগীর চাপ। রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ ছাড়াও দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের অনেক জেলার রোগী ভর্তি আছেন। একের পর এক সাধারণ ওয়ার্ডকে রূপান্তর করা হচ্ছে করোনা ওয়ার্ডে। ৯টি ওয়ার্ড এখন করোনা রোগীদের জন্য ব্যবহার হচ্ছে।
রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আরেকটি ওয়ার্ডকে করোনা ওয়ার্ডে রূপান্তরের কাজ চলছে
সবগুলো বেডই রোগীতে ভর্তি হয়ে যাওয়ায় আরেকটি ওয়ার্ডকেও করোনা ওয়ার্ড হিসেবে ব্যবহারের কাজ শুরু হয়েছে। সেখানে অক্সিজেন লাইন বসানোর কাজ শেষের পথে। রোগী বাড়তে থাকায় পরিস্থিতি সামালানো নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে কর্তৃপক্ষ।।রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক শামীম ইয়াজদানী বলেন, ‘হাসপাতালে শয্যা ২৩২টি। একটি ওয়ার্ডে যে পরিমাণে বেড ও সেন্ট্রাল অক্সিজেন রয়েছে, সে অনুযায়ী ১৫ থেকে ২০ জন রোগী অতিরিক্ত রাখা যায়। বারান্দায়ও রাখা যায়। আরও ৩০ থেকে ৪০ জন রোগী রাখতে পারব।
‘তাদের আমরা সেন্ট্রাল অক্সিজেন দিতে না পারলেও সিলিন্ডার অক্সিজেন দিতে পারব। সেই রকম ব্যবস্থাও আমাদের আছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে ১০ থেকে ১৫ জন সহজেই রাখা যায়। দু-এক দিনের মধ্যে করোনা চিকিৎসার জন্য আরেকটি ওয়ার্ড যোগ হবে।’শামীম ইয়াজদানী আরও বলেন, ‘অক্সিজেন লাগেনা এমন রোগী আমরা ভর্তি করছি না। যাদের অক্সিজেন জরুরি তাদের তো ভর্তি করতে হবেই। তাই আমরা বিকল্প পদ্ধতিতে ভর্তি করছি। এখানে ডাক্তার সংকট ছিল। বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ১৫ জন ডাক্তার দিয়েছেন। এ দিয়ে নতুন ওয়ার্ডসহ আরও একটি ওয়ার্ড চালানো যাবে।’
স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, রাজশাহী সদর হাসপাতালে করোনা চিকিৎসা দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এজন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে মন্ত্রণালয়ে। এটি চালু হলে এক শ করোনা রোগীর চিকিৎসার ব্যবস্থা হবে।