বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

৭ জনে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট, গ্রাম মহল্লায় বিশেষ লকডাউন

  •    
  • ৫ জুন, ২০২১ ২২:৪১

নোয়াখালী, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, বাগেরহাটসহ বিভিন্ন জেলায় সংক্রমণ বাড়ায় নতুন নতুন গ্রাম, পাড়া, মহল্লায় কঠোর লকডাউন দেয়া হচ্ছে। গোপালগঞ্জ সদরে সাতজনের শরীরে করোনাভাইরাসের ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে। রোহিঙ্গা-অধ্যুষিত উখিয়া ও টেকনাফের কিছু এলাকায় সংক্রমণ বেড়েছে আশঙ্কাজনক হারে।

গোপালগঞ্জে সাতজনের শরীরে করোনাভাইরাসের ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। তাদের বাড়িঘর ঘিরে পুরো এলাকায় বিশেষ লকডাউন বাড়ানো হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা, বাগেরহাটসহ বিভিন্ন জেলায় সংক্রমণ বাড়ায় নতুন নতুন পাড়া-মহল্লায় কঠোর লকডাউন দেয়া হচ্ছে।

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা-অধ্যুষিত উখিয়া ও টেকনাফের কিছু এলাকায় সংক্রমণ বেড়েছে আশঙ্কাজনক হারে। মোংলায় করোনার সংক্রমণ রোধে জনগণকে কঠোর বিধিনিষেধ মানাতে স্থানীয় প্রশাসনকে সহায়তায় মাঠে নেমেছেন কোস্টগার্ড সদস্যরা। নিউজবাংলা প্রতিনিধিদের বিস্তারিত খবর-

৭ জনের শরীরের ভারতীয় ভেরিয়েন্ট

গোপালগঞ্জ সদরে করোনায় আক্রান্ত সাতজনের শরীরের ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের অস্তিত্ব মিলেছে।

সদর উপজেলার সাতপাড় ইউনিয়নের তেলিভিটা গ্রামে আরও সাত দিন লকডাউন বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া নতুন করে কালিভিটা গ্রামকে সাত দিনের কঠোর লকডাউনের আওতায় আনা হয়েছে।

গোপালগঞ্জের সিভিল সার্জন সুজাত আহমেদ এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।তিনি জানান, তেলিভিটা গ্রামের ২৫২ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ৫০ জনের করোনা পজিটিভ আসে। এর মধ্য থেকে ১১ জনের নমুনা জিনোম সিকোয়েন্সিং পরীক্ষার জন্য ঢাকার আইইডিসিআরে পাঠানো হয়। রিপোর্টে সাতজনের নমুনায় ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়। তাদের বাড়ি সাতপাড়ের তেলিভিটা ও কালিভিটা গ্রামে।তেলিভিটা গ্রামে লকডাউন বাড়ানোর পাশাপাশি কালিভিটা গ্রামকে নতুন করে সাত দিনের কঠোর লকডাউনের আওতায় আনা হয়েছে।

এর আগে ২৭ মে তেলিভিটা গ্রামসহ সাতপাড়, সাহাপুর ও বৌলতলী ইউনয়নে সাত দিনের লকডাউন দেয়া হয়।

সিভিল সার্জন জানান, করোনা আক্রান্তদের দেখভালের জন্য ওই এলাকায় ১০ জন চিকিৎসক নিযুক্ত করা হয়েছে।

গত ২৪ ঘণ্টায় গোপালগঞ্জে নতুন করে ১৫ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। জেলায় মোট শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৯৪৩ জন। মারা গেছেন ৪০ জন।

আরও চার গ্রামে লকডাউন

চুয়াডাঙ্গায় গত কয়েক দিনে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়েছে। আক্রান্তদের অধিকাংশের বাড়ি সীমান্তবর্তী কার্পাসডাঙ্গা এলাকায়।সংক্রমণ বাড়ায় দামুড়হুদা উপজেলার সীমান্তবর্তী আরও চার গ্রামে লকডাউন দেয়া হয়েছে।শনিবার দুপুরে উপজেলা কোভিড-১৯ সংক্রান্ত কমিটির জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

নতুন লকডাউন করা গ্রামগুলো হলো কুড়ালগাছি ইউনিয়নের ঠাকুরপুর, চাকুলিয়া, ফুলবাড়ি ও পারকৃষ্ণপুর মদনা ইউনিয়নের বড় বলদিয়া।

এ নিয়ে দামুড়হুদা উপজেলায় ১১টি গ্রাম লকডাউন করা হয়েছে। এর আগে ২ জুন কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়নের সাত গ্রাম ও নাটুদহ ইউনিয়নের দুটি এলাকা লকডাউন করে উপজেলা প্রশাসন।

নওগাঁয় জরুরি প্রয়োজন ছাড়া যানবাহন বের করলে জরিমানা করছে ভ্রাম্যমাণ আদালত

কোভিড-১৯ সংক্রান্ত কমিটির সভায় উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু হেনা মোহাম্মদ জামাল দামুড়হুদার সবশেষ করোনা পরিস্থিতি তুলে ধরেন। তিনি জানান, উপজেলায় বর্তমানে ৯৭ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে ৬২ জন বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

সভায় চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য আলী আজগার টগর বলেন, ভারত থেকে কেউ যেন অবৈধভাবে দেশে প্রবেশ করতে না পারে, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।

মোংলায় মাঠে নেমেছে কোস্টগার্ড

মোংলায় করোনার সংক্রমণ বাড়ায় স্থানীয় প্রশাসনকে সহায়তায় মাঠে নেমেছে কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের সদস্যরা।

করোনার কঠোর বিধিনিষেধের সপ্তম দিনে শনিবার মোংলায় সব ধরনের যান চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

বাগেরহাটে কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যেও গত ২৪ ঘণ্টায় মোংলায় আরও ৩৪ জন, মোরেলগঞ্জে পাঁচ, শরণখোলায় দুই, ফকিরহাটে এক ও রামপালে চারজনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে।

মোংলা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জীবিতেষ বিশ্বাস এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কমলেশ মজুমদার জানান, মোংলায় পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে কোস্টগার্ড, পুলিশের পাশাপাশি দুজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে রয়েছেন। অপ্রয়োজনে মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহন নিয়ে শহরে প্রবেশ ও অহেতুক ঘোরাফেরা করলেই জরিমানা করা হচ্ছে।

বাগেরহাট জেলায় এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৭৬৮ জন। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৪৬ জনের।

শরণার্থী শিবিরে বাড়ছে সংক্রমণ

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা-অধ্যুষিত উখিয়া ও টেকনাফের কিছু এলাকায় ৬ জুন পর্যন্ত রেড জোন ও লকডাউন বাড়ানো হয়েছে।

প্রশাসনে কঠোর নজরদারির মধ্যেও উখিয়া-টেকনাফে লকডাউনের নির্দেশনা মানছে না অধিকাংশ মানুষ।

করোনা সংক্রমণ ভয়াবহ রূপ নিয়েছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে। দিন দিন লাফিয়ে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা।

গত ২৪ ঘণ্টায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ১৭ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছে।

উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন আহমেদ জানান, উখিয়ায় ২০ থেকে ৩০ মে পর্যন্ত কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছিল।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় ৬ জুন পর্যন্ত লকডাউন বাড়ানো হয়।

একই সঙ্গে রাজাপালং ইউনিয়নের ৪টি ওয়ার্ডে রেড জোন কার্যকর করা হয়েছে। রেড জোন ও লকডাউন বাস্তবায়নে প্রশাসন মাঠে কাজ করছে।

মোংলায় স্থানীয় প্রশাসনকে সহায়তায় মাঠে নেমেছে কোস্টগার্ড

কক্সবাজারের সিভিল সার্জন মাহবুবুর রহমান জানান, ঘনবসতি হওয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে লকডাউন কার্যকর করা অনেকটা কঠিন।

৩ জুন পর্যন্ত জেলায় করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে ১০ হাজার ৫৭৮ জনের শরীরে। এর মধ্যে রোহিঙ্গা ১২৭৭ জন।

কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. অনুপম বড়ুয়া জানান, ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত জেলায় করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ছিল। কাজের জন্য রোহিঙ্গারা নিয়মিত ভোরে ক্যাম্প থেকে বের হয়ে সন্ধ্যায় ফেরে। এনজিও কর্মীরা প্রতিদিন ক্যাম্পে যাওয়া-আসা করছেন।

দুই ওয়ার্ডে সীমিত লকডাউন

যশোরে করোনা সংক্রমণ রোধে দুই ওয়ার্ডে সীমিত লকডাউন দিয়েছে জেলা প্রশাসন। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মো. সায়েমুজ্জামান এ তথ্য জানিয়েছেন।

অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মো. সায়েমুজ্জামান জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে কঠোর অবস্থানে রয়েছে প্রশাসন। এ ছাড়া যশোর পৌরসভার দুটি ওয়ার্ডে চলাচল সীমাবদ্ধ করা হচ্ছে।

শনিবার দুপুর ১২টা থেকে ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডে মানুষের চলাচল সীমিত করা হয়েছে।

যশোরে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে করোনার শনাক্ত হয়েছে ১৮ জনের। এর মধ্যে কোয়ারেন্টিনে থাকা ভারতফেরত পাসপোর্টধারী যাত্রী রয়েছেন ২ জন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, সীমান্তবর্তী জেলা হিসেবে করোনা সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে যশোর।

করোনায় এক দিনে ২ জনের মৃত্যু

নওগাঁ জেলায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এক দিনে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে একজনের বাড়ি সদরে আর অপরজন রানীনগর উপজেলার।

সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার আশীষ কুমার সরকার জানান, আরও দুজনসহ নওগাঁয় করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৫ জনে।

রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে শনিবার সকাল ৮টার দিকে একজনের মৃত্যু হয়। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ধামইরহাট উপজেলা সদরে বাসায় মারা যান আরেকজন।

জেলার স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, নওগাঁয় করোনা আক্রান্ত হয়ে ৪৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। করোনা সংক্রমণের হার না কমলে সাত দিনের বিশেষ লকডাউন আরও বাড়তে পারে।

পুলিশ সুপার আবদুল মান্নান মিয়া জানান, গত বৃহস্পতিবার থেকে নওগাঁ পৌরসভা ও নিয়ামতপুর উপজেলায় সাত দিনের বিশেষ লকডাউন চলছে। শনিবার সকাল থেকে নওগাঁ পৌরসভা ও নিয়ামতপুরে মোট ৪৫টি স্থানে ব্যারিকেড দিয়ে পুলিশের চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া যানবাহন বের করা হলে জরিমানা করছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দোকান ছাড়া বন্ধ রয়েছে অন্য সব দোকান।

সিভিল সার্জন অফিস জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে কোয়ারেন্টিনে নেয়া হয়েছে ১০৫ জনকে। এ নিয়ে কোয়ারেন্টিনে আছেন ১ হাজার ১২০ জন।

মাইজদীতে ঢিলেঢালা লকডাউন

করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় নোয়াখালী পৌরসভাসহ সদর উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে শনিবার ভোর ৬টা থেকে লকডাউন শুরু হয়েছে।

স্থানীয় লোকজন জানান, জেলা শহর মাইজদী থেকে দূরপাল্লার কোনো যানবাহন না ছাড়লেও দুপুরের দিকে অভ্যন্তরীণ সড়কে সিএনজি, অটোরিকশা, ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করেছে। গণপরিবহনে ভাড়াও আদায় করা হচ্ছে বেশি।

শহরের দোকানপাট ও শপিংমলগুলো বন্ধ রয়েছে। সদর উপজেলার ছয় ইউনিয়নে লকডাউনে দোকানপাট খোলা ছিল। গণপরিবহনও চলাচল করেছে অন্য সময়ের মতো।

শহরে লকডাউন ও স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা দেখা গেছে। বিভিন্ন চেকপোস্টে স্বাস্থ্যবিধি না মানায় কয়েকটি সিএনজি অটোরিকশা ও যাত্রীকে জরিমানা করা হয়েছে।

জেলা সিভিল সার্জন ডা. মাসুম ইফতেখার জানান, ঈদের পর জেলায় করোনা সংক্রমণ কয়েক গুণ বেড়ে গেছে। নোয়াখালী পৌরসভাসহ সদর উপজেলায় আক্রান্তের হার বেশি।

তিনি জানান, লকডাউন কার্যকর করতে ছয়জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ৬টি মোবাইল টিম ও স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে ৪টি টিম মাঠে কাজ করছে।

গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ৩৯০ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১২৭ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে।

এ বিভাগের আরো খবর