কোভ্যাক্স কর্মসূচির আওতায় যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ, ভারতসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো করোনা প্রতিরোধী ৭০ লাখ টিকা পাবে। বৈশ্বিক মহামারি মোকাবিলায় স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার এমন ঘোষণা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
দেশটির বিশ্বব্যাপী টিকা বণ্টনের পরিকল্পনা প্রকাশ করার সময় এমনটি জানিয়েছেন বাইডেন। তিনি জানান যুক্তরাষ্ট্রের অব্যবহৃত আড়াই কোটি ডোজ কোভিড টিকা জুন মাসের মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাঠানো হবে।
হোয়াইট হাউস বৃহস্পতিবার জানায়, দরিদ্র দেশগুলোতে টিকার সুষম বণ্টন নিশ্চিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) গৃহীত কোভ্যাক্স কর্মসূচির আওতায় দান করা হবে এসব ডোজের ৭৫ শতাংশ, অর্থাৎ ১ কোটি ৯০ লাখ ডোজ।
বার্তা সংস্থা এপির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, এর মধ্যে ৬০ লাখ ডোজ দক্ষিণ ও মধ্য আমেরিকা, ৭০ লাখ ডোজ এশিয়া এবং ৫০ লাখ ডোজ আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে পাঠানো হবে।
আড়াই কোটি ডোজের বাকি ২৫ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্র দেশগুলোতে জরুরি ব্যবহারের জন্য সংরক্ষণ করা হবে।
মেক্সিকো, কানাডা, দক্ষিণ কোরিয়া, ফিলিস্তিনে অবরুদ্ধ পশ্চিম তীর ও গাজা উপত্যকা, ইউক্রেন, কসোভো, হাইতি, জর্জিয়া, মিসর, জর্ডান, ইরাক, ইয়েমেন ও জাতিসংঘে নিযুক্ত চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মী, শান্তিরক্ষীসহ ফ্রন্টলাইনার বা সম্মুখযোদ্ধারা পাবে এ সহায়তা।
কোভ্যাক্স কর্মসূচির গতি বাড়াতে ৪০০ কোটি ডলারের অর্থসহায়তা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু অপর্যাপ্ত জোগান এবং বেশির ভাগ ধনী দেশ প্রয়োজনের চেয়েও বেশি মজুত করায় অর্থের চেয়ে টিকার প্রয়োজনই এখন বেশি।
টিকার ঘাটতি থাকা ১২৭টি দেশে কোভ্যাক্সের আওতায় এ পর্যন্ত প্রায় পৌনে ৮ কোটি ডোজ টিকা পৌঁছেছে।
আফ্রিকা মহাদেশে করোনাভাইরাস মহামারি পরিস্থিতি জটিল হচ্ছে বলে ডব্লিউএইচও সতর্ক করার এক দিন পরই টিকা বণ্টনে পরিকল্পনার কথা জানাল বাইডেন প্রশাসন।
গত দুই সপ্তাহে আফ্রিকায় করোনার সংক্রমণ ব্যাপক হারে বেড়েছে। বিপরীতে টিকার চালান থমকে গেছে। এ অবস্থায় অঞ্চলটিতে টিকা বণ্টনে বুধবার বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানায় ডব্লিউএইচও।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এক বিবৃতিতে বলেন, ‘বিশ্বের যে প্রান্তেই মহামারি হোক না কেন, তা আমেরিকান নাগরিকদের ঝুঁকিতে ফেলবেই।
নিজ দেশে করোনার বিস্তার রোধে যেমন জোরদার প্রচেষ্টা আমরা চালিয়েছি, আমরা চাই সারা বিশ্ব যেন একই রকম গুরুত্বের সঙ্গে টিকা কর্মসূচি চালিয়ে যায়। এটি নিশ্চিতে যুক্তরাষ্ট্রও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
এসব ডোজ কবে নাগাদ বণ্টন শুরু হবে তা নিশ্চিত করেনি ওয়াশিংটন। তবে শিগগিরই দেশে দেশে যুক্তরাষ্ট্রে বাড়তি ডোজগুলোর চালান সরবরাহ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি জেন পাস্কি।
যুক্তরাষ্ট্রে প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠীর ৬৩ শতাংশই কমপক্ষে এক ডোজ করোনা প্রতিরোধী টিকা নিয়েছেন। ফলে বর্তমানে দেশটিতে টিকার চাহিদা কম এবং টিকা কার্যক্রমের গতি ধীর হয়ে এসেছে।
এমন পরিস্থিতিতেই বিশ্বে টিকার ভারসাম্যহীনতার মধ্যে অনুদান হিসেবে কোটি ডোজ দেয়ার পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্রের।
এর আগে চলতি মাসের মধ্যেই বিশ্বজুড়ে মোট ৮ কোটি ডোজ করোনাপ্রতিরোধী টিকা পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছিল ওয়াশিংটন।
এর মধ্যে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি ও অ্যাস্ট্রাজেনেকা ফার্মাসিউটিক্যালসের গবেষণালব্ধ টিকার ৬ কোটি ডোজ অন্তর্ভুক্ত। তুলনামূলক সস্তা টিকাটিতে অনুমোদন দিয়েছে ডব্লিউএইচওসহ বিশ্বের অনেকগুলো দেশ।
যুক্তরাষ্ট্রে টিকাটি ব্যবহারের জন্য এখনও অনুমোদন পায়নি। কিন্তু দেশটিতে এ টিকা উৎপাদন হচ্ছে। এ অবস্থায় ব্রিটিশ-সুইডিশ গবেষণালব্ধ টিকাটির যত ডোজ যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি হবে, তার সবটাই বণ্টনের ঘোষণা দিয়েছে বাইডেন প্রশাসন।
এ ছাড়া অনুদানের ৮ কোটির বাকি ২ কোটি ডোজ সরবরাহ করা হবে ফাইজার, মডার্না ও জনসন অ্যান্ড জনসন উৎপাদিত টিকার মজুত থেকে।
এদিকে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যুক্তরাষ্ট্রের কাছে টিকাসহায়তা চাইলেও এ পর্যন্ত কেবল প্রতিবেশী মেক্সিকো ও কানাডাকে মোট ৪৫ লাখ ডোজ দিয়েছে বাইডেন প্রশাসন।
এ ছাড়া দক্ষিণ কোরিয়ার সাড়ে ৫ লাখ সেনার জন্য পর্যাপ্ত টিকা পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে ওয়াশিংটন।
বৃহস্পতিবারই জনসন অ্যান্ড জনসনের ১০ লাখ ডোজ টিকা দক্ষিণ কোরিয়ার উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন হোয়াইট হাউসের করোনাভাইরাসবিষয়ক সমন্বয়ক জেফ জিয়েন্টস।
যুক্তরাষ্ট্রে ১২ বছরের বেশি বয়সী সবাইকে করোনা প্রতিরোধী টিকা দেয়া হচ্ছে। দেশটির স্বাধীনতা দিবস ৪ জুলাইয়ের আগে ৭০ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনার ঘোষণা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।