দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে ৫০ জন রোগীর জিনোম সিকোয়েন্সিং করে ৪০ জনের ক্ষেত্রেই ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতি পেয়েছে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)।
শুক্রবার আইইডিসিআর ও স্বাস্থ্য গবেষণা বিষয়ক প্রতিষ্ঠান আইদেশির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বাংলাদেশে শনাক্ত হওয়া ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের জিনোম সিকোয়েন্স বৈশ্বিক ডাটাবেজ জিআইএসএআইডিতেও জমা দেয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট (ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট) এর কমিউনিটি সংক্রমণ পর্যবেক্ষণে উচ্চ সংক্রমিত এলাকায় নিয়মিত করোনা আক্রান্ত রোগীদের কেস ইনভেস্টিগেশন, কন্টাক্ট ট্রেসিং এবং সন্দেহজনক রোগীদের নমুনার জিনোম সিকোয়েন্সিং করছে আইইডিসিআর।
গত ১৬ মে আইইডিসিআর কর্তৃক বাংলাদেশে কোভিড-১৯ এর ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের এর শনাক্ত সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে আইইডিসিআর ও আইদেশি এ পর্যন্ত ৫০টি নমুনার জিনোম সিকোয়েন্সিং করেছে।
এর মধ্যে ৪০টি (৮০ শতাংশ) নমুনায় ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট, আটটি (১৬ শতাংশ) নমুনায় সাউথ আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে।
এর মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হতে সংগৃহীত ১৬টি নমুনার ১৫টিতে, গোপালগঞ্জে সাতটি নমুনার সবগুলোতে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট শানাক্ত হয়েছে।
এ ছাড়া, খুলনা শহর হতে সংগৃহীত তিনটি নমুনার সবগুলোয়, ঢাকা শহরের চারটি নমুনার দুটিতে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা থেকে ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলায় আগত সাত জনের দেহে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে। এর বাইরে ভারত থেকে আগত তিনজন ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হয়ে চুয়াডাঙ্গা ও খুলনায় চিকিৎসাধীন আছেন।
করোনার ধরনের জিনোম সিকুয়েন্সিং করা ৫০ রোগীর মধ্যে তিন জনের বয়স অনূর্ধ্ব ১০ বছর, সাতজনের বয়স ১০-২০ বছর, ২১-৩০ বছর বয়স ১০ জনের, আটজনের বয়স ৩১-৪০ বছর, আটজনের বয়স ৪১-৫০ বছর এবং চারজনের বয়স ৫০ বছরের ঊর্ধ্বে।
এদের মধ্যে ২৪ জন পুরুষ, ২৬ জন নারী।
ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্তদের মধ্যে আট জনের পার্শ্ববর্তী ভারতে ভ্রমণের ইতিহাস আছে এবং ১৮ জনের বিদেশ থেকে আগত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসার ইতিহাস আছে। অপর ১৪ জনের বাংলাদেশের বাইরে ভ্রমণের অথবা বিদেশ থেকে আগত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসার কোনো ইতিহাস পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ, বাংলাদেশে কোভিড-১৯ এর ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের কমিউনিটি সংক্রমণ বিদ্যমান।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণের হার দেশের সীমান্তবর্তী এলাকাসহ অন্যান্য জেলায় বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সংক্রমণের হার হ্রাস করার লক্ষ্যে এবং দেশে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টসহ করোনার অন্যান্য ধরনের বিস্তার রোধে জনসাধারণকে সঠিকভাবে মাস্ক ব্যবহারের পাশাপাশি অন্যান্য স্বাস্থ্য মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছে আইইডিসিআর।
দেশে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট রোধে সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে লকডাউন চললাম৷ এসব এলাকায় অনুপ্রবেশ সম্পূর্ণরূপে বন্ধের জন্য কঠোর নজরদারির এবং টহল বাড়ানোর সুপারিশ করেছে কোডিভ-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি।
তারা বলছেন, দেশের সার্বিক কোভিড-১৯ পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে; বিশেষ করে সীমান্তবর্তী এলাকাতে সংক্রমণ উচ্চ হারে বেড়েছে। এ ছাড়া আরও কিছু জেলায় উচ্চ সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে কমিউনিটি পর্যায়ে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এটি বাড়লে হলে চিকিৎসা ব্যবস্থার জন্য বড় রকমের চ্যালেঞ্জ হতে পারে। যেমনটি বিভিন্ন উন্নত দেশে দেখা গেছে।
সাম্প্রতিককালে ভারত এই চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় সংক্রমণ প্রতিরোধের কোনো বিকল্প নাই এবং এতে জনপ্রশাসনের ভূমিকা অনস্বীকার্য। এ জন্য সীমান্তের জেলাগুলোতে অনুপ্রবেশ সম্পূর্ণরূপে বন্ধের জন্য কঠোর নজরদারি ও টহল বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে।