মহামারির ওপর মহামারি! বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে ভারতে ছড়িয়ে পড়ছে আরেক আতঙ্ক ব্ল্যাক ফাঙ্গাস। বিরল এই ফাঙ্গাসে এরই মধ্যে আক্রান্ত হয়েছেন ১১ হাজারের বেশি মানুষ। পরিস্থিতি এতটাই উদ্বেগজনক যে, ব্ল্যাক ফাঙ্গাসকে মহামারি হিসেবে ঘোষণা করেছে ভারত সরকার।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্তের ঘটনা নতুন নয়। প্রকৃতিতে থাকা এ ফাঙ্গাস আগে থেকেই মানুষকে আক্রমণ করে। তবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ঠিক থাকলে এগুলো কোনো প্রভাব ফেলতে পারে না। এটি তাদের জন্যই ভয়াবহ যাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল।
ভারতের সংবাদ মাধ্যম ইন্ডিয়া টুডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে হঠাৎ করে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের প্রাণঘাতী হয়ে ওঠার বিষয়টি চিন্তায় ফেলেছে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের। তারা বলছেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের এমনিতে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা কমে যায়। সেই সঙ্গে তাদের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ ও বিশেষ ব্যবস্থাপত্র ফাঙ্গাসের আক্রমণের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে দিচ্ছে।
ভারতে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় বিরল এ ছত্রাকের সংক্রমণের জন্য করোনা চিকিৎসায় অতিরিক্ত স্টেরয়েড এবং রোগীদের অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিকের কথা বলা হচ্ছিল। নতুন করে বিশেষজ্ঞরা এখন করোনা চিকিৎসায় অতিরিক্ত জিঙ্ক ব্যবহারের বিষয়টিও সামনে এনেছেন।
ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (আইএমএ) সাবেক সভাপতি ডা. রাজিব জয়দেভান এক টুইটে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের প্রকোপের জন্য করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় জিঙ্কের ব্যবহার, গরম পানির অতিরিক্ত ভাপ নেয়া ও কয়েকটি অ্যান্টিবায়োটিকের সংমিশ্রণ ব্যবহারের ভূমিকার ওপর জোর দিয়েছেন।
রাজিব ইন্দোরের মহাত্মা গান্ধী মেমোরিয়াল সরকারি মেডিক্যাল কলেজের ডা. ভিপি পান্ডের একটি গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়েছেন। চারটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন করোনা রোগীদের ওপর করা ওই গবেষণায় দেখানো হয়েছে, এই তিনটি বিষয় কীভাবে ফাঙ্গাসের বৃদ্ধিতে অবদান রাখতে পারে।
ওই টুইটে তিনি লেখেন, অ্যান্টিবায়োটিকের ককটেল- অ্যাজিথ্রোমাইসিন, ডক্সিসাইক্লিন ও কার্বাপেনেম ফাঙ্গাসের সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে।
‘জিঙ্ক সমৃদ্ধ পরিবেশে ফাঙ্গাস ছড়িয়ে পড়ে। এজন্য কোষগুলো সংক্রমণ এড়াতে জিঙ্ককে দূরে রাখার চেষ্টা করে’- যোগ করেন তিনি।
রাজিব জয়দেভান আরও বলেন, ‘অতিরিক্ত পরিমাণে গরম বাষ্প মানুষের প্রাকৃতিক মিউকাস বা শ্লেষ্মার স্তরকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে এমনকি মিউকাস পুড়ে যেতে পারে, যা ফাঙ্গাসকে আমাদের প্রাকৃতিক সুরক্ষা ভাঙতে সহায়তা করে।’
গবেষণায় দেখা যায়, ভারতে সংক্রমণের ১০-২০ শতাংশ এ কারণে হয়েছে। রোগীদের প্রায় ২১ শতাংশের ডায়াবেটিক ছিল না এবং প্রায় ৫২ শতাংশ রোগী অক্সিজেন নিয়েছেন।
ভারতে প্রায় ৮০ শতাংশ করোনা রোগীর ক্ষেত্রে তাপমাত্রা কমানোর জন্য প্যারাসিটামল এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে অ্যান্টিবায়োটিকসহ পাঁচ থেকে সাতটি ওষুধ খেতে দেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি দিনে ২-৩ বার গরম পানির বাষ্পের ভাপ নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। করোনা চিকিত্সার জন্য কোনো বিশেষ ওষুধ না থাকায় রোগীদের ভাইরাসের বৃদ্ধি কমাতে অ্যান্টিবায়োটিকের সংমিশ্রণ নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়।
জিঙ্ক ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে দ্রুত রোগ প্রতিরোধ বাড়ানোর পরিপূরক হিসেবে। জিঙ্ক শরীরের ৩০০ টির বেশি এনজাইমকে সক্রিয় করতে সহায়তা করে, যা প্রতিরোধ ব্যবস্থা শক্তিশালী করাসহ বিভিন্ন কাজ করে।
তবে আগের বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা যায়, জিঙ্ক ছত্রাকের, বিশেষ করে মিউকাসজনিত রোগ বৃদ্ধির কারণ হিসেবে কাজ করতে পারে। জিঙ্কের অপসারণ ছত্রাকের বেঁচে থাকা কঠিন করে তুলতে পারে।
অন্য একটি তত্ত্ব অনুসারে, শিল্পে ব্যবহৃত অক্সিজেন সিলিন্ডারগুলোও ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের ক্রমবর্ধমান সংক্রমণের কারণ হতে পারে। করোনা চিকিত্সায় অক্সিজেনের বিপুল চাহিদার কারণে শিল্পের অক্সিজেন ডাইভার্ট করা হয়।
কিছু জায়গায় মেডিক্যাল অক্সিজেন সিলিন্ডারের জায়গায় শিল্পের সিলিন্ডারগুলোও ব্যবহার করা হয়। শিল্পের অক্সিজেন মেডিক্যাল অক্সিজেনের চেয়ে বিশুদ্ধ হলেও সিলিন্ডারগুলো উপযুক্ত নয়। এতে অনেক মাইক্রো লিক থাকতে পারে পাশাপাশি স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টিও বজায় রাখা হয় না।