শিগগিরই দেশে প্রয়োগ হতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ কোম্পানি ফাইজার ও জার্মান জৈবপ্রযুক্তি কোম্পানি বায়োএনটেক উদ্ভাবিত করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা। এ টিকা শুরুতে প্রয়োগ করা হবে শুধু ঢাকা শহরে।
বিশ্বের সব দেশের জন্য করোনার টিকা নিশ্চিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগে ন্যায্যতার ভিত্তিতে গড়ে তোলা প্ল্যাটফর্ম কোভ্যাক্সের মাধ্যমে আগামী রোববার দেশে আসছে ফাইজারের ১ লাখ ৬২০ ডোজ টিকা।
এরই মধ্যে এই টিকা জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। তবে সংরক্ষণ জটিলতার কারণে আপাতত এই টিকা সারা দেশে ছড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনা নেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের।
বিশেষ ব্যবস্থাপনায় নগরবাসীর মধ্যে এই টিকা দেয়া হবে বলে প্রাথমিক পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তবে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে এই টিকা কাদের আগে দেয়া হবে এবং কীভাবে কোন কোন কেন্দ্রে দেয়া হবে, তা এখনও নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি।
অধিদপ্তরের মুখপাত্র ডা. মোহাম্মদ রোবেদ আমিন নিউজবাংলাকে বলেন, কারা এই টিকা পাবে, এখনও সে তালিকা তৈরি করা হয়নি। টিকা দেশে আসার পরে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
কোভ্যাক্স প্ল্যাটফর্মটি গড়ে তোলা হয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনস অ্যান্ড ইমিউনাইজেশনস (গ্যাভি) এবং কোয়ালিশন ফর এপিডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস ইনোভেশনসের (সিইপিআই) উদ্যোগে।
প্রতিটি দেশের মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশের জন্য বিনা মূল্যে টিকার ব্যবস্থা করার কথা এই জোটের। কোভ্যাক্স থেকে প্রথম পর্যায়ে ১ কোটি ২৭ লাখ ডোজ টিকা পাওয়ার কথা ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু বিশ্বজুড়ে টিকা-সংকট দেখা দেয়ায় তা সম্ভব হচ্ছে না।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত ৬ জানুয়ারি বাংলাদেশসহ কোভ্যাক্স উদ্যোগের আওতায় থাকা ৯২টি দেশকে চিঠি দেয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ফাইজার-বায়োএনটেকের স্বল্পসংখ্যক টিকা দেবে তারা। এরপর বাংলাদেশ টিকার চাহিদা দিয়ে গত ১৮ জানুয়ারি একটি চিঠি দেয় কোভ্যাক্সের কাছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, ফাইজার সংরক্ষণ করতে মাইনাস ৬০ ডিগ্রি থেকে মাইনাস ৯০ ডিগ্রি তাপমাত্রার রেফ্রিজারেটর দরকার। ২ থেকে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রাখা যাবে পাঁচ দিন। আর রেফ্রিজারেটরের বাইরে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রাখা যাবে দুই ঘণ্টা।
উৎপাদক প্রতিষ্ঠান দাবি করছে, কার্যকারিতার দিক থেকে ফাইজারের টিকা করোনা প্রতিরোধে ৯৫ শতাংশ পর্যন্ত কার্যকর। তবে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিশিল্ড, সিনোফার্মের বিবিআইবিপি-করভি, রাশিয়ার স্পুৎনিক-ভি টিকার মতোই ফাইজারের টিকাও নিতে হয় দুই ডোজ করে।
প্রথম ডোজ দেয়ার তিন থেকে চার সপ্তাহ পর দিতে হবে দ্বিতীয় ডোজ। ১২ বছরের বেশি যেকোনো ব্যক্তি এ টিকা নিতে পারবে।
ফাইজারের টিকা সংরক্ষণের জন্য যে মাত্রার শীতাতপনিয়ন্ত্রিত যন্ত্রের দরকার হয়, তা দেশে কমই আছে। ফলে অন্যান্য জেলায় এই টিকা প্রয়োগ অনেকটাই অসম্ভব।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাশার খুরশীদ আলম নিউজবাংলাকে বলেন, আপাতত এই টিকা রাজধানীতে প্রয়োগ করা হবে। তাপমাত্রা জটিলতায় রাজধানীর সব কেন্দ্রে এই টিকা দেয়া যাবে না। তবে কোন কোন সেন্টারে এই টিকা দেয়া হবে এবং কারা ফাইজারের টিকা পাবে, তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। ঢাকার মধ্যে এই টিকা প্রয়োগ এখনও প্ল্যানিং পর্যায়ে আছে।
তিনি জানান, ফাইজারের টিকা সংরক্ষণের জন্য আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি), রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর), জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান (নিপসম), কেন্দ্রীয় ঔষধাগার (সিএমএসডি), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ফাইজারের টিকা সংরক্ষণের মতো কোল্ড চেইন রয়েছে।
এসব কোল্ড চেইনগুলোতে মাইনাস ৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার টিকা সংরক্ষণ করা যায়। তবে এর বেশির ভাগই গবেষণার কাজে ব্যবহৃত হয়। এসব কোল্ড চেইনে টিকা রাখার প্রাথমিক পরিকল্পনা রয়েছে। ফাইজারের টিকার দুই লাখ ডোজ সংরক্ষণের সক্ষমতা তাদের আছে। সক্ষমতা বাড়ালে ১০ লাখ ডোজ টিকাও সংরক্ষণ করা যাবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান খসরু নিউজবাংলাকে বলেন, দেশে প্রয়োগ চলছে সিরাম ও চীনের টিকা। রাশিয়া ও ফাইজারের টিকার জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। তবে বিভিন্ন কোম্পানির টিকা কীভাবে প্রয়োগ হবে, তার এখনও পরিকল্পনা করতে পারেনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। টিকা আসার আগে পরিকল্পনা না করতে পারলে জটিলতা তৈরি হতে পারে। বিভিন্ন ধরনের টিকা দিতে হলে আরও দক্ষতার প্রয়োজন। একেক টিকা একেকভাবে সংরক্ষণ করতে হয়। কোম্পানিভেদে মেয়াদও ভিন্ন।